ধাঁধায় মোড়ানো গণিত -২: শুরুর শুরু

Spread the love

আগের পর্ব-  ধাঁধায় মোড়ানো গণিত -১: শুরুর শুরু

আমাদের লোকজ ধাঁধার ঐতিহ্য কিন্তু অন্য কোন দেশের চেয়ে কম নয়। এখানেও তিন ধরণের ধাঁধার দেখা মিলে। গণিত নির্ভর মানে হিসাব-নিকাশ করতে হবে, ধন্ধ লাগিয়ে দেওয়া এবং ভাষাগত কূটাভাষ (প্যারাডক্স) তৈরি করা। ধন্ধ লাগিয়ে দেওয়ার একটা উদাহরণ খুবই প্রচলিত –

পাঁচ
করিমের বাবার মেঝ ছেলের নাম বিশ মণ, ছোট ছেলের নাম ত্রিশ মণ। বড় ছেলের নাম কী?

এরকম ধাঁধা আমাদের আরও আছে। তবে, ভাষা নিয়ে সবচেয়ে চমৎকার ধাঁধাটি আমি শুনি আমার শ্বশুর মহাশয়ের মুখে। আমার ধাঁধা প্রীতি দেখে তিনি একদিন নিচের ছড়াটি আমাকে শুনিয়ে দেন

ছয়
‘হরির ওপর হরি,
হরি শোভা পায়
হরিকে দেখিয়া হরি
হরিতে লুকায়।

আর গণিত নিয়ে অন্যতম সুন্দর ধাঁধাটি শুনেছিলাম আমাদের সময়কার চট্টগ্রাম মুসলিম হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক হাসান ইমাম স্যারের মুখে। এই ধাধাটিতে ভাষা এবং গণিতের অপূর্ব সমন্বয়। ইমাম স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন, গেরিলা কায়দায়। স্যারের বিষয়ে আমি লিখেছি পড়ো পড়ো পড়ো বইতে। তার বাংলা পড়ানোতেই আমরা ছিলাম মুগ্ধ। তো, একদিন সাত্তার স্যার না আসাতে তিনি আমাদের অঙ্ক ক্লাসে আসলেন। তারপর বললেন – তোমরা তো পন্ডিত। দেখোতে এই গাণিতকি সমস্যার সমাধান করতে পারো কিনা?

সাত
আছিল দেউল এক বিচিত্র গঠন
ক্রোধভরে ফেল দিল পবন নন্দন
তেহাই কাঁদায় তার দোহাই শরীরে,
দশম ভাগের ভাগ শ্যাওলার তলে
ওপরে বাহান্নো হাত দেখো বিদ্যমান
করো হে, সুবোধ শিশু দেউল প্রমাণ।

যারা শব্দগুলোর অর্থ জানেন তারা হয়তো এর মধ্যে কাগজপত্র নিয়ে বসে পড়েছেন। বাকীদের জন্য আমি ধাঁধাটি একটু ব্যাখ্যা করে দেই। দেউল মানে হলো দেওয়াল। কোন এক কালে, এক পুকুর পাড়ে চমৎকার সুন্দর একটি দেওয়াল ছিল। সেটি এতই সুন্দর যে, সবাই তার প্রশংসা করে। এটা দেখে বায়ু-পুত্রের বেজায় রাগ হলো। রাগ করে সে তুললো ঝড়। আর তাতে দেওয়ালটি পানিতে পড়ে গেল। এর তিনভাগের একভাগ চলে গেল পানির নিচের কাঁদায়, অর্ধেক রইলো পুকুরের পানিতে। দশ ভাগের একভাগ চলে গেল শ্যাওলার নিচে। তারপরও দেওয়ালের বায়ান্নো হাত দৃশ্যমান আছে। শিশুদের বের করতে হবে দেওয়ালের উচ্চতা কতো ছিল?

তো, স্যার তার হাতের মোটা বেত নিয়ে ঘুরছেন। আর আমরা মোটামুটি সবাই বুঝে ফেলেছি কী করতে হবে। স্যারের হাতে প্রায়শ ঐ বেত থাকতো। কিন্তু তিনি কোনদিন ঐ বেত কারও উপর প্রয়োগ করেননি।
অঙ্ক করা শেষ হলে আমি দাড়াইয়া বললাম – স্যার, এতো উঁচু দেওয়াল বানালো কে?

পুরো ক্লাসে হাসির রোল। স্যার বললেন – এ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বলেই তো আমি বাংলা পড়াই, অঙ্ক করাই না।

ঐদিন আমি গণিতের সঙ্গে ধাঁধার জোরের বড় একটা প্রমাণ পেয়েছি। আমরা যারা ক্লাসে ছিলাম আমাদের কারোই কিন্তু মনে হয়নি স্যার আমাদের অঙ্ক করিয়ে নিয়েছেন।

দেশীয় ধাঁধার আর একটি হলো কালিদাসের ফাঁকি বা শুভঙ্করের আর্যা।

আট
কালিদাসের ফাকি
খামচি থেকে চিমটি গেলে কত থাকে বাকি?

এই ধাঁধাগুলো মোটামুটি সব দেশেই পাওয়া যায়। বেশিরভাগ লোকজ ধাঁধাতে ভাষা, প্যারাডক্স আর হিসাব-নিকাশের ব্যাপার থাকে।

[যারা গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে চায় কিন্তু গণিতে আগ্রহ পায় না, যারা সাধারণভাবে গণিতের প্রেমে পড়তে চায় কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে সেটা হয়নি, তাদেরকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আমি আগে তিনটি বিশেষ বই লিখেছি ধাঁধা নিয়ে। ধাঁধার অঙ্ক, অঙ্কের ধাঁধা সেই তিনটির সংকলন। প্রকাশকের অনুরোধে আমি এখন এর সিকুয়েল – ধাঁধায় মোড়ানো গণিত লিখছি। আর ধারাবাহিকভাবে এখানে শেয়ার করছি। আশা করছি অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে এটি প্রকাশিত হবে ইনশা আল্লাহ]

One Reply to “ধাঁধায় মোড়ানো গণিত -২: শুরুর শুরু”

Leave a Reply