ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৮ : এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
আগের পর্ব -ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৭ : বেচবো না কি বেচবো না
জেরি ইয়াং আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন- এটা অনেক বড়ো ব্যাপার আমাদের জন্য। আমরা ভাবলাম জেরি নিশ্চয়ই আমাদের বিজ্ঞাপন যোগাড়ে সাহায্য করবেন। ইয়াহু!র সঙ্গে কর্পোরেট বিজ্ঞাপনদাতাদের যোগাযোগ ভালো। অনেক আশা নিয়ে আমরা জেরির সঙ্গে আলাপ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম।
কিন্তু হা হতোম্ভি!
জেরি এসে বললেন তিনি আমাদের লিঙ্ক এক্সচেঞ্জ কিনে নিতে চান, সম্পূর্ণ। আমরা খুবই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। জানতে চাইলাম কতো টাকা দেবেন। ফিগারটা বললেন না কারণ ইয়াহু!র বেশিরভাগ লোকজন ততদিনে নিউইয়ার্সের ছুটিতে চলে গেছে। কাজে কিছু সময় নেওয়ার জন্য আমরা ছুটির পরে আবার কথা বলতে চাইলাম।
ছুটি শেষে ইয়াং আবার আসলেন। আমাদের পুরানো এপার্টমেন্ট আমি, আলি আর সঞ্জয় তার সঙ্গে কথা বলতে বসলাম। জেরি খুবই স্মার্ট লোক। কোন ধানাই পানাই-এর মধ্যে নাই। জেরি আমাদেরকে বললেন কতো টাকায় ইয়াহু আমাদের কিনতে চায়।
-কতো টাকা?
…
…
…
–বিশ (২০) মিলিয়ন ডলার!!!
আমার মাথা ঘুরে উঠলো। বহুত কষ্টে নিজেকে জ্ঞান হারানো আর চেয়ার থেকে পড়া থেকে রক্ষা করলাম। পরথম যে চিন্তাটা আমার মাথায় আসলো সেটা হলো – ওয়াও! দ্বিতীয়ত নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম যে এক মিলিয়ন ডলারে আমরা কোম্পানিটা লেনির কাছে বিক্রি করি নাই। আমরা তিনজনই বাক্যহারা হয়ে গেলাম। ২০ মিলিয়ন ডলার কতো টাকা! আমাদের তো আর এ জীবনে কিছুই করা লাগবে না। বহুত কষ্টে জেরিকে জানালাম আমরা কয়েকদিন পরে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।
পরের কয়েকদিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আমরা কোম্পানির সবাইকে ডেকে ইয়াহু!র প্রস্তাব জানালাম। তারপর জানালাম আমি, সঞ্জয় আর আলি মিলে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিবো। যদি আমরা ২০ মিলিয়ন ডলার নেই, তাহলে, আমার মনে হল, “আমি আর জীবনে কোনদিন কাজই করবো না। পায়ের ওপর পা তুলে কেবল খাবো আর ঘুরবো।”
এপার্টমেন্টে ফিরে আমি একটা কাজ করলাম। ঠিক করলাম টাকা পেলে আমি কী কী করবো তার একটা তালিকা বানাই।
যে ভাবা সে কাজ। নিচের তালিকাটা বানালাম-
- সানফ্রান্সিসকোতে একটা কনডো কিনবো। তাহলে আর আমাকে কোন ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে না। আমি ‘নিজের’ বাড়িতে থাকতে পারবো,
- একটা বড়-পর্দার টেলিভিশন কিনবো এবং একটা হোম থিয়েটার বানিয়ে নিবো,
- যখন খুশি তখন লম্বা ছুটি নিয়ে লাস ভেগাস, নিউ ইয়র্ক, মায়ামি কিংবা লস এঞ্জেলসে বেড়াতে যাবো,
- একটা নতুন কম্পিউটার কিনবো,
- একটা নতুন কোম্পানি বানানো শুরু করবো কারণ নতুন কিছু করতে আমি খুবই এনজয় করি।
তালিকা বানানোর পর আমি নিজেই খুব অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমার লিস্টটা খুবই ছোট। এবং আমি অনেক কস্ট করেও নতুন কিছু যোগ করতে পারলাম না। তারপর খেয়াল করলাম আরে এর মধ্যে টিভি আর কম্পিউটার কেনার টাকা তো আমার এখনই আছে। ওরাকলের চাকরি থেকেই তো আমি এনাফ সঞ্চয় করেছি। আমি ইচ্ছে করলে এখনও লম্বা ছুটিতে যেতে পারি। কিন্তু এগুলো কখনো করা হয়নি। কারণ মাথাতেই আসেনি।
আমি এখনই একটি কোম্পানিকে সাহায্য করছি যা কিনা আমি খুবই এনজয় করি। এই কাজটা আমি ভালও বাসি। তাহলে এটা একটা সিলি আইডিয়া না যে, এটা বেচে আমি আর একটা কোম্পানি নতুন করে বানাবো। দরকার কী? কাজ করার এক্সাইটেমন্টের জন্য এটা বিক্রি করবো কেন?
কন্ডো ছাড়া আর সবই আমি এখনই করতে পারছি!!! কী আশ্চর্য।
লেনির কথা মনে পড়লো। ‘লিঙ্ক এক্সচেঞ্জ এক জীবনের সম্ভাবনা’। কিন্তু ২৩ বছর বয়সে একটি বাড়ির মালিক হওয়া কী খুবই দরকার? এটা কি আমি পরে হতে পারবো না?
আমি আলি আর সঞ্জয়কে আমার চিন্তার কথা বললাম। দেখলাম ওরা দুজনও আমার মতো চিন্তা করছে। আমরা এখনও তরুণ। আমাদের এখনই রিস্ক নেওয়ার সময়। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
পরের দিন কোম্পানির মিটিং-এ আমরা আমাদের আলোচনার ফলাফল জানালাম, “আপনারা জানেন ইয়াহু! আমাদের কোম্পানি ২০ মিলিয়ন ডলারে কেনার অফার দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে আমরা তিনজন এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেছি এবং আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
পুরো হল ঘরে পিন-পতন নিস্তব্দতা।
“আমরা ঠিক করেছি তাদের প্রস্তাব আমরা ফিরিয়ে দেব”।
আমি আমাদের সিদ্ধান্ত জানালাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম হলরুমে একটা স্বস্তির পরশ। সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
“আমরা একটি চমৎকার উত্তেজনাকর সময়ে এখন আছি। ইন্টারনেট শিল্প ক্রমাগত বিকশিত হচছে। নেটসক্যাপে, ইবে, অ্যামাজন কিংবা ইয়াহু! মানব ইতিহাসের পাতা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। ইতিহাসে আগে কখনো এতো কম সময়ে এতগুলো কোম্পানি সফল হতে পারেনি। আমরা আমাদের জীবদদশায় এরকম একটি কোম্পানি গঠন করতে পারবো” বললাম আমি।
আমি জানি না কেন আমি আবেগ তাড়িত হয়ে গেলাম। আমি যখন শেষে বলেছি – “দেয়ার উইল নেভার বি এনাদার ১৯৯৭” তখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আনন্দের।
পরের কয়েকমাস আমাদের দিনগুলো দ্রুতই কাটতে লাগলো। সিকোইয়া ক্যাপিটাল, যে ভেঞ্জার ইয়াহু!তে বিনিয়োগ করেছে তারা, আমাদের ২০% স্টেক কিনে নিল ৩ মিলিয়ন ডলারে (তার মানে হলো আমরা ইয়াহু!র দামের চেয়ে কম টাকায় আমাদের নিজেদের দাম ঠিক করেছি) । আমরা সিকইয়া ক্যাপিটালের মিচেল মরিটজকে আমাদের বোর্ডে নিলাম। আমরা বড়ো বড়ো কোম্পানিদের বিজ্ঞাপনও পেতে শুরু কললাম। অনেক নতুন লোক নিয়োগ করা শুরু হলো। এর মধ্যে আমােদর পরিচিত জনদের গন্ডি পার হয়ে গেছে। ফলে আমরা যে নতুনদের নিয়োগ দিচ্ছি তারা প্রথম ২৫জনের মতো আমাদের নিজেদের কাছের লোক নয়। আমাদের ছোট্ট অফিস ঘর বাড়াতে হলো। আমরা নতুন ফ্লোরও নিলাম। আমি যখন ফ্লোরে হাটতাম তখন দেখতাম ওদের অনেককেই আমি চিনি না।
যেভাবে হোক আনন্দ আর মজা আমাদের কর্পোরেট সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেল। প্রতিমাসে আমি সবাইকে একটা মেইল দিতাম যার সারমর্ম হচ্ছে অমুক তারিখে আমাদের একটা সভা হবে যেখানে সব বোর্ড মেম্বার উপস্থিত থাকবেন। সবাইকে ফরমাল পোষাকে সেদিন সভায় আসার জন্য বলে দিতাম।
যারা ঐ মাসে জয়েন করেছে তারা জানতো না এটা একটা ফান। সেদিন স্যুটেড-বুটেড হয়ে এসে তারা বুঝতে পারতো এ হচ্ছে তাদের জন্য ফাঁদ। পোষাক দেখেই সবাই জেনে যেতো এই মাসে কারা নতুন জয়েন করেছে। তাদের নিয়ে আমরা একটা ফান টাইপ অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করতাম। সেরকম একটা অনুষ্ঠানে আমরা মিচেলকে দাওয়াত দিয়ে আনলাম আর সবাই মিলি ম্যাকারানা গানের সঙ্গে নাচলাম।
আমার মনে হচ্ছিল “আই ওয়াজ লিভিং দ্যা ফেইরি টেল”।
পরের পর্ব – ১ নয়, ২০ নয় ২৬৫ মিলিয়ন ও বাজিতে বাজিমাত?
[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]
2 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৮ : এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”