ডেলিভারি হ্যাপিনেজ ৯ : কত রবি জ্বলেরে? কেবা আখি মেলে রে?
হাইস্কুল শেষে আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ব্রাউন, ইউসি বার্কলে, স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি, প্রিন্সটন, কর্নেল, ইয়েল এবং হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি। এবং সবগুলোই ভর্তির সুযোগ পাই। এর মধ্যে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্র বিজ্ঞাপনে মেজর করার সুযোগ আছে। আমার মনে হয়েছে বিজ্ঞাপনই মনে হয় ব্যবসার সরাসরি কাছের কোন ব্যাপার। কাজে ব্রাউনই ছিল আমার প্রথম পছন্দ।
কিন্তু আমার বাবা-মার অবশ্য পছন্দ হার্বার্ড। বেশিরভাগ এশিয়ানরই তাই। কাজে আমাকেও সেখানে যেতে হল।
হার্বার্ডের ডরমিটরিতে গিয়ে আমার প্রথম কাজ ছিল একটা টেলিভিশন কেনা। বাসায় থাকতে আমি সপ্তাহে মাত্র ১ ঘন্টা টিভি দেখার সুযোগ পেতাম। কাজে, হলে এসে দৈনিক চারঘন্টা টিভি দেখার একটা সিডিউল বানিয়ে ফেললাম!
এমনভাবে ক্লাস বাছাই করি যাতে সোম, বুধ আর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ক্লাস থাকে আর মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার ফাঁকা। ক্লাসের দিনগুলোতে ভোর আটটার সময় যখন এলার্ম বেজে উঠতো তখনই আমার মেজাজ যেত খারাপ হয়ে। কাজে বারবার স্নুজ বাটনটা টিপে টিপে ভাবতাম প্রথম ক্লাসটা না করলেও মনে হয় হবে। পরে কারো কাজ থেকে নোট যোগাড় করে নেওয়া যাবে। পরের ঘন্টায় আমি নিজেকে এভাবে কনভিন্স করতাম- প্রথম ঘন্টার ক্লাসনোট যদি কারো কাজ থেকে পাওয়া যায় তাহলে দ্বিতীয়টারটাও পাওয়া যাবে!
এমন করতে করতে তৃতীয় ক্লাসের সময় হয়ে যেত। তো এরই মধ্যে দুইটি ক্লাস মিস করেছি। আর একটাতে কি আসে যায়। আর শেষ ক্লাসের সময় তো এটা বলা যায়, “তিনটাই যেখানে করি নাই। সেখানে আর একটার জন্য ক্যাম্পাসে গিয়ে কী লাভ?”
শেষ পর্যন্ত ফ্রেশম্যান ইয়ারে বলতে গেলে তেমন কোন ক্লাশই আমার করা হয়নি। আর আলস্যের কারণে যেহেতু ক্লাশে যেতে পারতাম না, একই কারণে গোছল করা হতো না। খাওয়ার জন্যও ক্যাম্পাসে যাওয়াটা কঠিন ছিল। আমার সময় কাটতো ডে’জ অব আওয়ার লাইভ থেকে আর জাপানী রামেন খেয়ে। (এবার জাপান গিয়ে রামেন দেখেছি। এ হলো সবজি দিয়ে কুইক নুডলস)।
কাজে ফ্রেশম্যান ইয়ারে আমার সময় কেটেছে আড্ডা দিয়ে, টিভি দেখে আর ঘুরে বেড়িয়ে। তবে, স্কুলের মত এখানেও একটা ভাল গ্রেড পাবার বুদ্ধি সবসময় আমি বের করে ফেলতাম। আমার তিনটি কোর্স ছিল আমিরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, ভাষাতত্ত্ব আর ম্যান্ডারিন চাইনীজ (এটিতো আমার বাবা-মায়ের ভাষা!)। কিন্তু কোর রিকোয়ারমেন্ট সম্পূর্ণ করার জন্য আমাকে একটা বাইবেলের কোর্সও নিতে হয়েছে। ভাল খবর হল এই ক্লাসের কোন হোমওয়ার্ক বা এসাইমেন্ট ছিল না। কাজে আমি কখনো ক্লাসে যায়নি। দু:খের ব্যাপার হল – এই কথার অর্থ হল গ্রেড হবে খালি ফাইনাল পরীক্ষার ভিত্তিতে।
“পরীক্ষার দুই সপ্তাহ আগে প্রফেসর মশাই আমাদেরকে একটা ১০০ টপিকের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন পরীক্ষায় এর মধ্য থেকে ৫টি বিষয়ে কয়েক প্যারাগ্রাফ করে লিখতে হবে। আর ঐ পাঁচটা বিষয় নির্ধারণ হবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে।”
মাত্র দুই সপ্তাহে এত বিষয় পড়ে ফেলা সম্ভব নয়। কী করবে বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে, প্রয়োজনই যত উদ্ভাবনের গোড়া। কাজে একটা বুদ্ধি আমি বের করে ফেললাম।
হাইস্কুলে আমার শখ – বিবিএস বা বুলেটিন বোর্ড সার্ভিসে ঘুরে বেড়ানোর কথা তো তোমরা জানো। কলেজে সেটা হল নিউজগ্রুপ।
আমি করলাম কি, এরকম একটা নিউজগ্রুপে একটি ছোট্ট আহবান জানাই যারা এই কোর্সটা নিয়েছে তাদের একটি স্টাডি গ্রুপে যোগ দেওয়ার জন্য। ঐ গ্রুপটা হবে সবচেয়ে বড় স্টাডি গ্রুপ কারণ এটি হবে “ভার্চুয়াল”। সেটাই আমি জোর দিয়ে বললাম।
যারা যোগ দিয়েছে তাদেরকে তিনটা করে টপিক দেওয়া হল রিসার্চ করার জন্য। কাজ হবে প্রত্যেকে ঐ তিনটা টপিকের ওপর ফাইনাল প্যারাটা লিখে আমাকে ই-মেইল করবে। ই-মেইল থেকে সেগুলো নিয়ে প্রথমে প্রিন্ট আর পরে ফটোকপি করলার কাজটা আমার। তারপর সবগুলো যোগাড় হওয়ার পর একত্র করে করে একটা নোটখাতা বানালাস। কোন কোন টপিকের একাধিক ভার্সনও পাওয়া গেল।
তারপর ঐ ফটোকপি বাইন্ডিং খাতার কপি মাত্র ২০ ডলারে বিক্রি করতে শুরু করলাম। তবে, একটা শর্ত রাখলাম। যারা তিনটি টপিক নিয়ে রিসার্চ করেছে কেবল তারাই এটি কেনার যোগ্যতা রাখে।
আর এভাবে কোন বই না পড়ে আর এমনকী কোন লেখা নিজে না লিখে আমি ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ স্টাডিগাইডটি তৈরি করে ফেলি যা কীনা অনেকেই পছন্দ করেছে। উপরন্তু আমি কিছু টাকাও কামিয়ে ফেললাম।।
ব্যাপারটা এত ভাল ছিল যে, হার্বাডের ক্যাম্পাস ম্যাগাজিন ক্রিমসনে এই নিয়ে একটা ফিচারও ছাপা হয়।
আর এভাবে আমি আবিস্কার করি ক্রাউডসোর্সিং এর ক্ষমতা।
2 Replies to “ডেলিভারি হ্যাপিনেজ ৯ : কত রবি জ্বলেরে? কেবা আখি মেলে রে?”