ডেলিভারি হ্যাপিনেজ-৭ : যত ধান্ধা তত টাকা
আগের পর্ব
স্কুলে আমার একটা ধান্ধা ছিল কেমন করে বেশি টাকা কামানো যায়। লুকাস ফিল্ম আমাকে নিয়োগ দিল ভিডিও গেমস টেস্টার হিসাবে। আমি ঘন্টায় ৬ ডলার পেতাম ইন্ডিয়ানা জোনস এন্ড দ্যা লাস্ট ক্রুসেড গেম খেলার জন্য। এটি খুবই মজার কাজ কিন্তু দিন শেষে ঘন্টায় মাত্র ৬ ডলার।কাজে যখনই আরো বেশি দামের কাজ পেলাম আমি এটা ছেড়ে দিলাম।
হাইস্কুলের ওপরের ক্লাসে আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামারের একটি চাকরি জোগাড় করে ফেললাম। কাজটা ছিল জিডিআই নামে একটা প্রতিষ্ঠানে। ওরা দিত ঘন্টায় ১৫ ডলার। এটা নি:সন্দেহে একটা স্কুল ছাত্রের জন্য অনেক টাকা 😀
কাজটা ছিল এমন সফটওয়্যার বানানো যা কিনা সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের সুযোগ দেবে। বিশেষ করে কিছু ফরম আছে যা অটোমেটিক্যালি পূরণ করবে ডেটাবেস থেকে। [আমার নিজের অভিজ্ঞতার প্রথম কাজটি আমি করেছিলাম বুয়েটের আইআইসিটিতে থাকতে। সেখানে হজ্জ্ব সিস্টেমের অটোমেশনে কাজের একটা ছিল ভিসার জন্য অনলাইন ফর্ম পূরণ করা। যে তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করা হবে সেগুলো এর মধ্যে আমরা একটা ডেটাবেসে রেখেছি। কিন্তু কাজ ছিল প্রতি ফরম পূরণ করার পর তারা একটি ট্রেকিং নাম্বার দিত। ঐ ট্রেকিং নাম্বারটা গুরুত্বপর্ণ। কাজে রাসেল আমাদের একটা এরকম প্রোগ্রাম লিখে দিল যা ডেটাবেস থেকে প্রত্যেকটা ফিল্ডে ডেটা এন্ট্রি দিয়ে দিত, তারপর ওয়েব ফরম সাবমিটের পর পাওয়া ট্রেকিং নম্বরটা ডেটাবেসে রেখে দিত। আমি ২০০২ সালের কথা বলছি]
আমার বস ছিলেন ফরাসী, রূপালী চুলের বয়স্ক লোক। আনন্দের জন্য আমি মাঝেমধ্যেই তার সঙ্গে মজা করতাম। বসের পছন্দ ছিল চা খাওয়া। অফিসের মাইক্রোওয়েভ ওভেনটা আছে আমার টেবিলের পাশে। তিনি প্রায় সময় এক কাপ পানি ওভেনে রেখে তারপর আবার নিজের ডেস্কে চরে যান। পানি গরম হতে তিন মিনিট লাগে। তারপর এসে তিনি চা বানাতেন।
তা একদিন তিনি পানি রেখে তিন মিনিটের জন্য ওভেন সেট করে নিজের জাযগায় চলে গেলেন। উনি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওভেন বন্ধ করে দিলাম। একটু পরে তিনি এসে দেখলেন পানি গরম হয়নি। ভাবলেন নিজের ভুল তাই আবার দিয়ে গেলেন। আমি আবার বন্ধ করলাম।
এবার তিনি ভাবলেন ওভেনটার কিছু একটা হয়েছে। এবার সেটা ৫ মিনিটের জন্য সেট করলেন।
পাঁচ মিনিট পর এসে তিনি ওভেনের ঢাকনা খুলে অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠলেন – আরে এটা কী?
তারপর তিনি হাসতে শুরু করেন এবং চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন সবাই নিজ নিজ আসন ছেড়ে উঠে দাড়িযেছে কারণ সবাই এই কৌতুকের অংশ।
তখন তিনি সবাইকে চায়ের কাপটা দেখালেন। ওটার মধ্যে সব বরফের টুকরা যা আমি একটু আগে রেখে দিয়েছি। ততক্ষণে সবাই জোর গলায় হাসিতে ফেটে পড়েছে। কেও কেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন।
আমি জানি অনেকদিন আমরা এভাবে হাসিনি।
হাসতে হাসতে আমি জেনে গেলাম সামান্য একটু মজা পুরো অফিসের চেহারা পাল্টে দিতে পারে এবং সবাইকে পরস্পরের কাছে নিযে আসতে পারে।
আমি খুবই খুশি যে ঐদিন আমার চাকরিটা চলে যায়নি!!!
2 Replies to “ডেলিভারি হ্যাপিনেজ-৭ : যত ধান্ধা তত টাকা”