ডেলিভারি হ্যাপিনেজ-৬ : মুনাফার সন্ধানে – প্রোগ্রামিঙের বাইরে
হাইস্কুলে আমার একমাত্র কাজ কিন্তু কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ছিল না। আমি ভাবলাম যতো বেশি বিষয়ে আগ্রহ পাবো তত আমার জন্য ভাল। কাজে নানান বিষয়ে আমি আগ্রহ খুঁজে বেরিয়েছি।
বিদেশী ভাষার কোর্স নিলাম কয়েকটা – ফরাসী, স্প্যানিশ, জাপানী এমনকী লাতিনও। শরীর চর্চ্চা ক্লাসে আমি নিলাম তরবারি চালানো! (এটি সপ্তাহে মাত্র একদিন হতো, এটাও মনে হয় কারণ)। সংগীতের ক্ষেত্রে নিলাম জ্যাজ সংগীত আর আর্টে নিলাম লাইফ ড্রয়িং (যারা জানে না তাদের জন্য বলে রাখা ভাল হাইস্কুলে এর সবই আসলে বাধ্যতামূলক)।
যোগ দিলাম দাবা আর ইলেকট্রনিক ক্লাবে। এর ফাঁকে শিখলাম টরে-টক্কা, মোর্স কোড। শুধু তাই নয়, হয়ে গেলাম সনদপ্রাপ্ত হ্যাম রেডিও অপারেটর। (আমেরিকান স্কুলের এই বিষয়টি আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখি। আমার ধারণা আমেরিকান সোসাইটিতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির ব্যাপারটার পেছনে তাদের এই স্কুলিং-এর একটা বড় ভূমিকা থাকতে পারে। তবে সে অন্য প্রসঙ্গ-মুনির হাসান)।
পাস করার জন্য আমাদের ভলান্টারি কাজও করতে হয়। আমি একটা থিযেটার হাউসকে ভূতের বাড়িতে পরিণত করতে সহায়তা করলাম এবং হ্যালোউইনের আগের সপ্তাহে ট্যুর গাইডও হলাম সেখানে। ঐ ভূতের বাড়িতে ২০ মিনিটের ট্যুরের জন্য দর্শনার্থীরা আমাকে ১৫ ডলার দিত!!!
থিয়েটারে কাজ করে আমি খুব মজা পেয়েছি বিশেষ করে পর্দার পেছনে। আমি ছিলাম স্কুল থিয়েটারের লাইট অপারেটর। এছাড়া আমি একটা দুইটা নাটকে অভিনয়ও করেছি। আর স্কুল থিয়েটারের পারফরম্যান্সের দিন আলোক অপারেটর হিসাবে আমাকে টাকাও দেওয়া হতো!
এরকম একটি কাজ যেখানে কিনা সবাই মিলে সবার জন্য আনন্দের উৎস তৈরি করা হয় তা আমি উপভোগ করতে শুরু করি। এসব কাজের শেষে কিন্তু কোন সার্টিফিকেট বা টাকা পাওয়া যেত না কিন্তু থাকতো চমৎকার স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতা। (দেশে যারা গণিত উৎসব বা এরকম কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে তারা এই আনন্দটা বুজতে পারে)
তবে, ঝামেলা হল ক্লাস নিয়ে। কারণ রেজিমেন্টেট ক্লাসের কারণে আমার এসব করতে সমস্যা হতো। তাই আমি একটা বুদ্ধি করলাম। আমি ক্লাসরুটিন দেখে কোর্স নিতে শুরু করলাম, কোর্স দেখে নয়। ফলে, এক বছর আমি মঙ্গলবারে সকালে কেবল একটা ক্লাস করতাম আর বাকী সময় আমার ছুটি! তারপর আমি স্যারদের বোঝানো শুরু করলাম যদি আমি টেস্টে বাল করতে পারি তাহলে আমার উপস্থিতির বিষয়টা যেন স্যাররা পাত্তা না দেন।
হোমওয়ার্ক করার ক্ষেত্রে ও আমি সৃজনশীল পদ্ধতি বের করতাম। যেমন শেকসপিয়ার ক্লাসে আমাদের একটা হোমওয়ার্ক ছিল সনেট লেখা। সনেট হল ১৪ লাইনের কবিতা যার একটা বাদ দিয়ে পরের লাইনের সঙ্গে একটা সম্পর্ক। তো, আমি করলাম কি সনেটটা লিখলাম মোর্স কোডে!!! মানে এক লাইন ড্যাশ পরের লাইন ডট!!! আমি জানতাম স্যার হয় আমাকে ফেল করাবেন অথবা আমাকে এ প্লাস দিবেন। এবং তাই হল স্যার আমাকে দিলেন A+++++++
মনে হয় সেদিনই আমি প্রথম শিখি, এমনকি স্কুলেও রিস্ক নিলে তার সুফল পাওয়া যায় এবং বাক্সের বাইরে চিন্তা করা যায়!
আমার স্কুলে খারাপ দিনগুলোর একটি হল যেদিন কিনা আমাকে চুরি করার অপবাদ দেওয়া হল। আমার পকেটে অন্য একজনের একটা লাঞ্চ কার্ড পাওয়া গেল। লাঞ্চ কার্ড হলো স্কুল ক্যাফের ক্রেডিট কার্ড। আমি মোটেই মনে করতে পারলাম না কেমন করে সেটা আমার পকেটে আসলো। আমার মনে হল ক্যাফের ক্যাশিয়ার মনে হয় ভুলে আমার আগের জনের কার্ড আমাকে দিয়েছে এবং আমি অন্যমনষ্কভাবে সেটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছি।
আমাকে হাজির হতে হল একটি বিচারে। স্কুলের প্রেসিডেন্ট ও ফ্যাকাল্টিদের সামনে আমি অকপটে আমার সকল কথা খুলে বললাম। কিন্তু কেও আমার কথা সত্যি বলে মানলোই না।
আমাকে ১ দিনের জন্য স্কুল থেকে সাসপেন্ড করা হল এবং এই ঘটনা আমার স্কুল রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করা হল।
যে অপরাধ আমি করি নাই, তার জন্য আমি সাজা পেলাম।
এই ঘটনা থেকে আমার শিক্ষা হল কখনো কখনো সত্য একাই যথেষ্ট নয় এবং সত্যের উপস্থাপন হল সত্যর সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মজার ব্যাপার হল আমাদের স্কুলের মটো হল – সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য (ট্রুথ ইজ বিউটি, বিউটি ট্রুথ)”। জন কীটসের বিখ্যাত কবিতা “Ode on a Grecian Urn” ।
সেদিন আমি মোটেই “সুন্দর” কিছু ফীল করি নাই
স্কুলে স্কুলিং একটিভিটির বাইরে আমার একমাত্র চিন্তা ছিল কীভাবে টাকা কামানো যায়। সে কথা পরের পর্বে।
2 Replies to “ডেলিভারি হ্যাপিনেজ-৬ : মুনাফার সন্ধানে – প্রোগ্রামিঙের বাইরে”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
পরের পর্বের লিংক পেলাম না স্যার। অন্যগুলোতে লিংকগুলো ছিলো।