শাখের করাতের কোভিড
১৪ এপ্রিল এন্ট্রিপ্রিনিয়র সাইটে কয়েকজন শিশু-কিশোরের কথা বলা হয়েছে। এদের বয়স ১০ থেকে ১৪। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে এই বালক-বালিকারা নানারকম উদ্যোগ নিয়ে নিজেরা উদ্যোক্তা হতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে কেউ চকলেট তৈরি করছে, কেউ অনলাইন তার পুরানো জামা কাপড় বিক্রি করছে। আবার কেউ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কসমেটিক্স বানানোর দোকান দিয়েছে! ধুম করে আমেরিকাকে ইয়াং উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর নানা কারণের মধ্যে একটা হরো ইউটিউব। ঐ কিশের-কিশোরীরা বলছে ইউটিউবে “বলতে গেলে সব কিছুর ওপর টিউটোরিয়াল থাকে”। সেখান থেকেই এউ উদ্যোগ।
শুধু এটাই নয়। কোভিড কালে কারিগরি প্রতিস্ঠানগুলো বাসায় থেকে কাজ করার সুবিধা প্রশস্থ করেছে। এর ফলে কর্মজীবীদের বাসায় বসে কাজ করার সুযোগ বেড়েছে। অন্যদিকে রেগুলেটর, ব্যাংক এবং ভন্যরাও তাদের সেবা অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আমেরিকার মতো দেশে এটা আগে থেকেই ছিল। এখন অনেক বেড়েছে। পলে যে কেউ চাইলেই নিজের একটা প্রতিস্ঠান খুলে ফেলছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০২০ সালে আমেরিকাতে নতুন ৪৪ লক্ষ নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করেছে ব্যবসা করার জন্য। ২০১৯ সালের তুলনায় এটি ২৪% বেশি!
আমাদের এখানে ঘটনা কী ঘটছে তা বলা মুশ্কিল। কারণ আমাদের সেরকম কোন ডেটা নেই। তবে আমি আমার দুইজন প্রাক্তণ সহকর্মীকে দেখলাম তারা এখন ফুলটাইম ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। অন্যদিকে এই করোনাকাল অনেক উদ্যোক্তাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। অনন্ত তিনটি ভত্যন্ত সফল আইটি প্রতিস্ঠানের কথা আমি জানি যারা এখন নিজেদের ব্যবসা ‘বিক্রি’ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আমাদের দেশের একটা সমস্যা হলো আমরা নানামুখি কাজ একসঙ্গে করতে পারি না। সবাই মিলে কয়েকটা জিনিষ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ফলে, এইসব উদ্যোক্তাদের বাঁচানোর কোন ভাল কাজ আর হচ্ছে না। করোনা শুরু হওয়ার পর যে সব প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার কথা সেগুলো ঠিকমতো দিতে পারলে অনেককেই তাদের উদ্যোগে রাখা যেতো।
এই সময় আমি আর একটি বিষয খেয়াল করলাম সেটি হরো আমাদের উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশই আপদকালীন ব্যাপারে তেমন কোন কাজ করে না। অধিকাংশেরই তেমন কোন সাইড ইনকাম বা সঞ্চয়ের ইচ্ছে নেই। ফলে এই বিপদ সামাল দেওয়া তাদের জন্য হয়ে যাচ্ছে কষ্টকর। এখন তো নতুন করে কিছু করাও সম্ভব নয়।
মোদ্দা কথা, উদ্যোক্তাদের অবস্থা ক্রমাগত সঙ্গীণ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মাটি কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতটা টিকে থাকতে পারবেন তা সৃষ্টিকর্তাই ভাল বলতে পারেন।
কোভিড-১৯ যেন দুইমুখী করাত। নতুনদের উদ্যোগী করছে আর বর্তমানদের নি:শেষ করে দিচ্ছে!