সংযুক্তিই উৎপাদনশীলতা : মি. ওয়াটসন, এখানে আসুন
মার্চ ১০, ১৮৭৬ সাল। আমেরিকার বোস্টনের একটি পরীক্ষাগার। স্কটিশ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল পৃথিবীর প্রথম টেলিফোন কলটি করেন। পাশের রুমে তার সহকারী থমাস এ ওয়াটসনকে তিনি ডেকে পাঠালেন – মি. ওয়াটসন, এখানে আসুন। আমি আপনাকে দেখতে চাই।”
বেলের দীর্ধদিনের কাজ হচ্ছে শব্দ নিয়ে। তার পরিবারেও শব্দ নিয়ে ঝামেলা ছিল। তার মা এবং তার বউ দুজনই কানে কম শুনতেন। ১৮৭৫ সালে মনের খেয়ালে তিনি একটা যন্ত্র বানান যা দিয়ে একই তার দিয়ে একই সময়ে একাধিক টেলিগ্রাফিক বার্তা পাঠানো সম্ভব। এটার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার যন্ত্র দিয়ে মানুষের কথা পাঠানো যায় কী না সেটি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। অবশেষ তিনি সফল হোন। তার জার্নাললে তিনি লিখেছেন –
আমি তখন মাউথপিসটা হাতে নিয়ে চিৎকার করে উঠলাম – “মি. ওয়াটসন. কাম হিয়ার – আই ওয়ান্ট টু সি ইউ।” আমাকে খুশী করতে সে আসলো এবং জানালো যে আমার কথা শুনতে পেয়েছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম আমি কী বলেছি।
ওয়াটসন উত্তর দিল – আপনি বলেছেন -মি. ওয়াটসন. কাম হিয়ার – আই ওয়ান্ট টু সি ইউ।” এরপর আমি পাশের রুমে গেলাম। মি ওয়াটসর বই থেকে কিছু অংশ পড়লো এবং আমি তা পরিস্কার শুনতে পেলাম।
১৮৭৭ সালে টমাস আলভা এডিসন প্রস্তাব করলেন ফোনের শুরুতে হ্যালো বলার। এবং সেটা গৃহীত হল। তখন থেকে সেটা চলে আসছে।
এবার আমরা ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে চলে যাবো ১৯৯৩ সালে। এবারের ঘটনাও আমেরিকায় তবে শহরটা ভিন্ন, নিউ ইয়র্ক। শহরের একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিতে কাজ করছেন একজন বাঙ্গালি, ইকবাল কাদির। হঠাৎ করে তাদের াফিসের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেল। তার মনে পড়ল বহু বছর আগের এক ঘটনা। যশোরের একটি গ্রামে কাদিরের দাদার বাড়ি। একদিন ছোট ভাই-এর জন্য ওষুধ কেনার জন্য কাদির রওনা হল ১০ কিলোমিটার দূরের এক ফার্মেসীর দিকে। দিন ভর হেটে কাদির পৌছালো ফার্মেসীর সামনে।
ফার্মেসী বন্ধ। ফার্মাসিস্ট শহরে গেছে ওষুধ কেনার জন্য।
কী সাংঘাতিক অপচয়! গ্রাহাম বেলের যাদুর বাক্সটা থাকলে কাদিরকে আর এই কষ্ট করতে হতো না। ম্যানহাটন অফিসে বনে কাদির কয়েক ঘন্টা কাজ করতে না পেরে হতাশ হয়ে গেল।
আর বাংলাদেশ! আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের সময় থেকেই টেলিফোন সেবা থেকে বঞ্চিত।
“আমি বুঝলাম আধুনিক অফিস হোক কিংবা পিছিয়ে পড়া গ্রাম হোক, সংযুক্তিই আসলে উৎপাদনশীলতা। কানেকটিভিটি ইজ প্রোডাক্টিভিটি। ”
শুরু হয় বাংলাদেশের গ্রামে গ্রাহাম বেলের উদ্ভাবিত সেবা পৌছে দেওয়ার এক অনুপম উপাখ্যান। তবে সে গল্প আজ নয়।
ইকবাল কাদিরের এই বিষয়ের একটি টেড বক্তঙতা আছে। সেটা দেখা যেতে পারে।
[ইকবাল কাদিরের হাতেই জন্ম গ্রামীণ ফোনের। সে এ আশ্চর্য গল্প। ঠিক করেছি এই রোজার মাসে সেই আশ্চর্য গল্প পরিক্রমা করবো, দ্বিতীয় বারের মত। উদ্দেশ্য নিজেদের সাফল্যের ব্যাপারটা আরো ভাল ভাবে বোঝা। তবে এই নিয়ে কোন সিরিজ লেখার পরিকল্পনা আপাতত নাই। আলসেমিটা বেঁচে থাক। ]