নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এবং ইয়ুথলিডারশীপ বুটক্যাম্প
নেতা হতে হলেই কি কর্তৃত্ব লাগে? কর্তৃত্ব কী পদ থেকে হয়?
আমাদের দেশে বেশিরভাগ নেতাই পদাধিকার বলে হোন। তিনি যেহেতু প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজে তিনি নেতা। এটাই আমাদের কনসেপ্ট।
আর একটা নেতার ব্যাপার আছে সেটা হল উত্তরাধিকার। নেতার সন্তানই নেতা।
এতে ঝামেলা হল বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী যেহেতু এই দুই ক্যাটাগরিতে পরে না তাই তারা যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বাইরের একজনকে আশা করে। আমার ইদানীং মনে হয়, আমরা কেমন বোকা যে, কখনো কখনো আমরা আমাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানের জন্য বাইরে থেকে লোক ধরে আনি।
সমস্যার গভীরে গেলে এর অনেক সমাজতাত্ত্বিক কারণ পাওয়া যাবে। তবে, একটা ব্যাপার কিন্তু কমন থাকতে পারে সেটা হল আমাদের সমাজে দুর্যোগ কিংবা ক্রাইসিস না হলে নেতা তৈরি হয় না। কিন্তু একটা সমাজেতো সবসময় ক্রাইসিস থাকবে না যার মাধ্যমে একজন নেতা হিসাবে আবির্ভুত হবেন?
তাহলে আমাদের সিস্টেমের মধ্যেই নেতৃত্বের ব্যাপারটা নিয়ে আসা দরকার।
কীভাবে সমাজে নেতা তৈরি হবে?
কঠিন প্রশ্ন তবে উত্তরটা সহজ। সমাজ নেতা তৈরি করবে যদি নেতৃত্ব বিকাশের প্রক্রিয়া সমাজে থাকে। সেটা স্কুল, কলেজ, পরিবার সব জায়গাতেই থাকতে হবে। আর এটা তৈরি হতে কিংবা সংস্কৃতির অংশ হতে বেশ ভাল একটা সময়ের প্রয়োজন হবে।
স্কুল-কলেজ লেবেলে আমাদের যে পড়াশোনা, সেটা পুরোপুরিই ইনডিভিজুয়াল। মানে দলীয় তেমন কিছু নাই। ফলে নেতৃত্বের প্রথম যে গুণ, দলগত কাজ সেটার কোন বিকাশ সেখানে হয় না।
দুই নম্বর হল – নেতার দরকার প্রকাশের উপায়। নিজেকে, নিজের ধারণা কিংবা কাজকে প্রকাশের উপায়। সেটাই বা কই? আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি হল একমুখী। স্যাররা বলেন, শিক্ষার্থীরা সেটা শোনেন। খুব কম শিক্ষককেই আমি ক্লাসে দেখেছি যিনি শিক্ষার্থীদের কাউকে স্টেজে ডেকে আনছেন বা কোন কিছু বলতে দিচ্ছেন। ফলে, প্রকাশের শক্তিরও বিকাশ হচ্ছে না। লিখিত ভাব প্রকাশের যে ম্যাগাজিন, পত্রিকা সেগুলো এখন আর বের হয় না।
আর লিস্ট না বাড়ায়।
এখন কথা হচ্ছে আমরা এসব থেকে কীভাবে বেরোতে পারবো। দুইট পদ্ধতি আছে। একটি হল জাকারবার্গের ক্ষুদ্র পদ্ধতি। এটার মানে হল যার পক্ষে যা করা সম্ভব সেটা করা। আর একটা হল বিপ্লবের ডাক দেওয়া।
বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশীপ সেন্টার বা বিওয়াইএলসি হল প্রথম দলের সংগঠন। তারা নেতৃত্বের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। বছরে গড়ে চারটা প্রোগ্রাম আছে তাদের – লিডারশীপ সামিট, লিডারশীপ কোর্স, আর্ট এন্ড প্র্যাকটিস অব লিডারশীপ এবং বুট ক্যাম্প। লিডারশীপ সামিটটা সবচেয়ে বড়। সারাদেশ থেকে নানান কীর্তি করে ৫০০কে বাছাই করা হয়। কোন সামিটে অংশ নেওয়ার জন্য কেও তদবির করে এটা এই সামিট না হলে আমি বুজতেই পারতাম না। প্রথম বছরেই আমার কাছে একজন এসেছির যাতে আমি তার হয়ে সুপারিশ করি! সেখানে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা লিডারশীপ নিয়ে কাজ করেন সেরকম লোকেরা আসেন।শেষেরটাতে হার্বার্ড থেকে এসেছেন কয়েকজন। সঙ্গে দেশীয় নেতারাতো ছিলেনই।
কোর্সগুলো মেয়াদী, মানে লম্বা সময়ের। কখনো কখনো ফিল্ডওয়ার্ক থাকে। এবারের একটা বিবিএলটি কোর্সে গিয়েছিলাম।
আর আছে বুট ক্যাম্প। আগামী ১১-১৪ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল টি-রিসোর্টে ওদের দ্বিতীয় বুট ক্যাম্পটা হবে। আগের বুটক্যাম্পটা হয়েছিল চট্টগ্রামে। সেটার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। পরে একটা সেশনেও ওদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। বুট ক্যাম্পে ওরা নিজেদের নেতৃত্বের একটা ছবক পায়, অন্যদের সঙ্গে মেলাতে পারে। এছাড়া সেখানে ক্যারিয়ারের একটা বড় ধাপ মানে সিভি বানানো, ইন্টারভিউ স্কিল ইত্যাদি নিয়ে কাজ হয় সেখানে। সবচেয়ে যেটি বেশি হয় সেটি হল নেটওয়ার্কিং স্কিল। ইনশাআল্লাহ একদিন ক্যাম্পে যাবো।
আজ এই বুট ক্যাম্পের সংবাদ সম্মেলন হয়েছে প্রেসক্লাবে। সেন্টারের মুখ্য ব্যক্তি এজাজ আর আমেরিকান সেন্টারের কালচারাল অফিসার কেলভিনের সঙ্গে আমিও কথা বলেছি। আমরা মানে, প্রথম আলো, এবারের বুট ক্যাম্পের সিলভার স্পন্সর।
চারদিনের ক্যাম্পের জন্য সারাদেশের সহস্রাধিক আবেদন থেকে বাছাই করে ১০২ জনকে নেওয়া হয়েছে। আবেদনের সময় একটা ৪০০ শব্দের রচনা লিখতে হয়েছে সবাইকে। তো, ১০২ জন তিনদিনের কোর্স শেষে ডিসি অফিস, সামিটের অফিস আর ব্র্যাকের একটা অফিস দেখতে যাবে। তারপর ফিরে আসার পর আমার সঙ্গে তাদের দেখা হওয়ার কথা আছে।
এর আগের ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অংশগ্রহণকারীদের সবারই মনোভঙ্গির একটা পরিবর্তন এই ক্যাম্পের মাধ্যমে হবেই। এবং তা ইতিবাচকই হওয়ার কথা। ক্যাম্প শেষে অনেকেই নিজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে আবিস্কার করে অবাক হবে। ভাববে, আরে এটা কী আমি?
তবে, আমি অবাক হই না। কারণ তারুণ্যের অফুরান শক্তির কথা আমি জানি।
বুট ক্যাম্পের এবং এর অংশগ্রহণকারীদের জন্য শুভ কামনা।