বিপিও সামিটের অনুষ্ঠানে ইউল্যাবে
আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর একটা সামিট হবে, বিপিও সামিট।
বিপিও মানে বিজনেস পসেস আউটসোর্সিং – কথাটা মনে হয় সবাই জানে। সে সঙ্গে এও জানে এর বর্তমান বিশ্ববাজার হচ্ছে মাত্র ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের দখলে ৮০, ফিলিপাইনের দখলে ১৬ বিলিয়ন।
এমনকী আমাদের তুলনায় খুবই ছোট একটা দেশ শ্রীলংকাও নিয়ে নিচ্ছে ২ বিলিয়ন ডলার।
১৯৯৭ সালে জামিলুর রেজা স্যারের কমিটি একটা ম্যাজিক শব্দ বলেছিলেন – ১ বিলিয়ন ডলারের আয় এই খাত থেকে। তা, সেটার অগ্রগতি কেমন?
গত অর্থবছরে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছি আমরা অনেক। প্রায় ১৩০ মিলিয়ন ডলার!!! দিল্লী দূর অস্ত।
ভুলটা আমরা কোথায় করেছি? আমার নিজের কিছু চিন্তা আছে। ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
১। আমরা বিশ্ববাজার দখল করতে গেছি কিন্তু নিজেদের বাজার অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। খুব সহজ একটা হিসাব, আমাদের দেশে ৯২% একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় টালি! আমাদের নিজেদের কোন সাফল্য নেই। আমরা আমেরিকা রাশিয়ার জন্য হাতি-ঘোড়া বানাই আর আমাদের ঘোড়া, মুরগি দিয়ে দিচ্ছি অন্যদের হাতে।
২। যেহেতু আমরা সবাই জ্ঞানী এবং পণ্ডিত কাজে আমাদের সবারই আলাদা আলাদা প্ল্যান, মডেল ইত্যাদি আছে। ফলে একসঙ্গে আগানোর ব্যাপারে আমাদের এগ্রিড কোন মডেল নাই।
৩। আমরা সবাই গুগল কিংবা ফেসবুক বানাতে চাই। কাজে গার্মেন্টস খাতের বড় অংশ খাতছাড়া হয়ে গেছে।
নিজের ঘর উন্মুক্ত রেখে আমরা লড়াই করতে গেছি অন্য জায়গায়। ফলাফল কী?
১। বর্তমানে দেশে বিদেশি ওয়ার্কফোর্স আছে মাত্র সাড়ে ছয় লাখ।
২। ওরা দুই বছর আগে নিয়ে গেছে ৩.১৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর নিয়েছে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা মাত্র ৩২ হাজার কোটি টাকা। আমাদের জাতীয় বাজেটের ১০% এর বেশি!
৩। যখন আমরা বিদেশে কোন কিছু করতে যাই, তখনই ওরা আমাদের কাছে জানতে চায় – নিজের দেশে কী করছো? তখন আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করি।
কাজে, আমি যখন দেখলাম বিপিও সামিটের আয়োজক বাক্য-এর কর্তাব্যক্তিরা বড় বড় স্বপ্ন থেকে মাটিতে এসে কাজ করতে চাচ্ছেন, তখন খুবই খুশি হয়েছি। এ কারণে সামিটের নানান মিটিং-মিছিলে আমি যাচ্ছি।
৯-১০ এর বিপিও সামিটের উদ্দেশ্যের কয়েকটা হল-
১। দেশে যে আউটসোর্সিং-এর একটা বাজার আছে সেটা যেন বিদেশে চলে না যায় তার একটা বন্দোবস্ত করা। এজন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ব্যাংক আর সরকার। এই দুই খাত যদি দেশীয় উদ্যোক্তাদের দিয়ে কাজ করায় তাহলে আমাদের লোকেরা বিশ্ববাজারের জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারবে।
২। লক্ষাধিক লোককে এই সামিটে আনার কোন আগ্রহ ওনাদের নাই।
৩। যদি দেশীয় সেক্টরকে কনভিন্স করা যায় তাহলে ইন্টারন্যাশনাল কাজও আসবে। কারণ সেটাই কনসিকোয়েন্স। আর তা যদি হয় তাহলে আগামী ৫ বছরে এখাতে অনেক কর্মসৃজন হবে। ওনাদের টার্গেট দুই লক্ষ।
৪. তবে, এনারা এটা হাওয়াই ছেড়ে দিচ্ছেন না। কাজও করছেন। আর প্রতীকী আয়োজন হিসাবে এই সামিটেই ২০০ জনকে চাকরি দিবেন। মানে ২০০ জন নিয়োগপত্র পাবে।
ফেসবুকতো বন্ধ। তাই এই খবর বিভিন্ন জায়গায় পৌছে দেওয়ার জন্য ওনারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা কেরিয়ার টকের আয়োজন করছে। এই পর্যন্ত ছয়টা হয়ে গেছে।
আজ এমন একটা টকে আমি গিয়েছিলাম ইউল্যাবে। দুই ঘন্টার সেশনটা খুবই ভাল ছিল। ফাঁক পেয়ে আমিও কিছু কথা বলে এসেছি। সেমিনারগুলোতে আমরা টেকনোলজিস দুইটা করে স্মার্টফোন আর এন-সংখ্যক সেলফি স্টিক দিচ্ছে গিফট হিসাবে। কুইজের প্রশ্নগুলো মারাত্মক তবে তা কুইজের আগে একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। যেমন বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের পেনিট্রেশন কত?
পারলেই একটা স্মার্ট ফোন!!
যাকগে যারা বিপিও সামিট সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী তারা সামিটের ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারে। যারা ঐ ২০০ পদের জন্য আবেদন করতে চায় তারা এই লিংকে গিয়ে দরখাস্ত জমা দিতে পারে।