বইমেলার বই ৫: শিশু প্রহরে গণিতের বই
গণিত অলিম্পিয়াডে যে সব অভিভাবকরা আসেন কিংবা যাদের সঙ্গে আমার বিভিন্ন জায়গায় বাৎচিৎ হয় তারা জানতে চান শিশুকে গণিতের প্রতি আকৃষ্ট করার কোন বই আছে কিনা। গণিতের প্রতি অথবা সমস্যা সমাধানে শিশুকে আগ্রহী করে তোলার জন্য বই একটা বড় হাতিয়ার। তবে, মনে রাখতে হবে গণিতের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় যখন কিনা দেখার চোখ তৈরি হয়। আর একটা বড় কাজ হলো গুনতে শেখা। এ জন্য মার্বেল পদ্ধতির কোন তুলনা নাই। ছোটবেলা থেকে শিমুকে মার্বেল গুনতে দেওয়াটা হলো তাকে গণণার প্রতি আকৃষ্ট করার মোক্ষম উপায়। গণিত আসলে একটা বিমূর্ত ব্যাপার। এটিতে দখল করতে হলে প্রথমে মূর্ত ব্যাপারে সিদ্ধ হস্ত হতে হয়, কুশলী হতে হয়। এসবচিন্তাকে মাথায় রেখে আমি ছোটদের জন্য লিখতে শুরু করি ম্যালাকাল আগে থেকে।
যারা শিশু প্রহরে বইমেলাতে যাবেন তারা শিশুদের জন্য এই বইগুরো কিনে দিতে পারেন।
ধাঁধার অঙ্ক, অঙ্কের ধাঁধা
এটি একটি সংকলন পুস্তক। ভোরের কাগজে কাজ করার সময় কোন একদিন মুন্নী (মুন্নী সাহা) ইস্টিকুটুম পাতার জন্য লিখতে বলে। ইস্টিকুটুম ছোটদের পাতা। লিখতে হবে ছোটদের জন্য। আমি ভেবেছিলাম লিখতে হবে বিজ্ঞানের কিছু। কিন্তু, মুন্নীর ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। একটি ধারাবাহিক রচনা, গণিত নির্ভর, মজার গল্পের ঢঙ্গে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি যুক্তি আর সংখ্যা থাকে! আর ছিল একটি দাবী : একটি চরিত্রও বানাতে হবে। প্রথম লেখাটিতে ছোট আপা বলে একটি চরিত্র বানানোর চেষ্টা হলেও পরে মনে হল মুখ্য চরিত্রটি ছোট একজন হলে ভাল। সে হিসাবে রিমার আমদানী। রিমা আমার ছোট বোন। গল্পের আবহতে তাই থাকলো। গল্পের বোকা বনে যাওয়া পাত্রটি হলাম আমি, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সেই বয়ানে লেখা ‘গল্পে গল্পে ধাঁধা’। সমসাময়িক সব বিষয় সেখানে আসতো : যমুনা ব্রিজ, জনতার মঞ্চ কিংবা নতুন চালু হওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস। গল্পের প্রয়োজনে সেখানে হাজির হতেন কাজি নজরুল ইসলাম, জামিলুর রেজা চোধুরী, নওয়াজিস আহমেদ প্রমূখ! গল্পগুলোকে বই আকারে প্রকাশের বুদ্ধি দেন মশিউল আলম। সে সময় আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমার বড় ছেলের জন্মের। তার প্রথম জন্মদিনে বাবার উপহার হিসাবে এর পান্ডুলিপি তৈরি করতে শুরু করি। তখন কি জানতাম আমার বড় ছেলে জাওয়াদ হাসান খুব বেশি দিন এই পৃথিবীতে থাকতে আসেনি!
গল্পে গল্পে ধাঁধা প্রকাশ করেন আলমগীর ভাই (অবসর)। তিনিই আমাকে জোর করেন এর পরের পর্ব লেখার জন্য। ততদিনে, আমার গল্পের মূল ক্যারেকটার পাল্টে গেছে। আমার ছেলে বুমবুম তখন এই গল্পের নায়ক। তার গল্পের কথক তার খালা। ভাই-বোনের পর্ব শেষ হয়ে তখন শুরু হয়েছে খালা-বোনপোর গল্প। এগুলোর অনেক প্রকাশ ইস্টিকুটুমে, সুমি আপার হাত ধরে। আমার আর রীমা কিংবা বুমবুম আর তার খালার গল্পে অনেক বিখ্যাত ধাঁধা আর ধাঁধাকারদের কথা এসেছে। স্যাম লয়েড থেকে আমাদের গ্রামের বুড়ো! বিখ্যাত ক্লাসিকগুলোর সঙ্গে আমাদের লোকজ ধাঁধা।
হরির উপর হরি,
হরি শোভা পায়,
হরিকে দেখিয়া হরি
হরিতে লুকায়!
বুমবুমের ধাঁধাগুলো নিয়ে আমার পরের বই ধাঁধায় ধাঁধায় গল্প। মুন্নী সাহা নাই প্রথম আলোতে, সুমী আপা ছোটদের পাতা দেখেন না! কাজে আমাকে দিয়ে ছোটদের জন্য লিখিয়ে নেওয়ার কেহ নাই!
নিজে থেকে কয়েকটা লেখা হয়েছে গণিত ইশকুলে আর বিজ্ঞান প্রজন্মে। সেগুলো নিয়ে একটি বই করার জন্য তাম্রলিপির প্রকাশক স্নেহাস্পদ রনির যন্ত্রণা। কাজে হলো ‘অঙ্কের ধাঁধা, ধাঁধার অঙ্ক’। ততোদিনে আগের দুটোর কপিও শেষ। কাজে তিন বই মিলে হলো আমার ধাঁধা সংকলন!
এই সংকলন বের করার পেছনে একটি তাগিদ হলো গণিত অলিম্পিয়াড। গণিতের যতো বই বের হয়েছে তার বেশির ভাগই বড়োদের জন্য। ছোটরা যারা ত্রি-ফোরে পড়ে তারা কি দিয়ে শুরু করবে? তাদের জন্য এই বই!
অঙ্কের ধাঁধা, ধাঁধায় অঙ্ক
তাম্রলিপি প্রকাশন
মূল্য -২৪০ টাকা
রকমারি লিংক
যারা গণিত ভালবাসে
এটিও বিভিন্ন লেখার সংকলন। গণিত ইশকুলেরই সব। একটা দুটো আছে বিজ্ঞান প্রজন্মের। এই বইটি যারা চতুর্থ শ্রেণীর বা উপরের ক্লাশের তাদের জন্য। এটিতে আমি কিছু গাণিতিক বিষয় ব্যাখ্যা করেছি যা তাদের গাণিতিক যুক্তি আর শৃঙ্খলা বুজতে সহায়তা করবে। সেভাবে লেখা হয়েছে। এখানে আমি কিছু অনেক পুরানো টেকনিক আলাপ করেছি। যেমন ম্যাজিক স্কোয়ার কত সহজে বানানো যায়। কিংবা মৌলিক সংখ্যার ছক। এগুলো ছাড়াও নেপিয়ারের অস্থির মতো ব্যাপারটাও আছে। এখানে একটা লেখাতে আমি বাংলাভাষার সবচেয়ে বড় পেলিনড্রম শব্দটি লিখেছি। আমার এই বইতে আমি কয়েকটা সমস্যার সমাধান করেছি একাদিক পদ্ধতিতে। মূলত এটা বোঝানোর জন্য যে, গণিতের সমস্যা সমাধানের নানান রাস্তা আছে। যার যেমন ইচ্ছে। যুক্তি আর পদ্ধতি ঠিক হলো সব ঠিক। এই বই-এর একটা চ্যাপ্টার হলো আমার লিথুনিয়ান বন্ধুর দেওয়া দুইটি সমস্য। ঐ দুইট সমস্যা ঠিক মতো পড়লে বোঝা যাবে চিন্তার জগৎ কেমন করে স্বচ্ছ হযে ওঠে।
এটর প্রকাশক তাম্রলিপি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা এটি পড়তে পারে।
রকমারি লিংক
গড়ের মাঠে গড়াগড়ি
একদম যারা ছোট , মানে ক্লাস ত্রি থেকে ফাইভে পড়ে, তাদেরকে কীভাবে গণিতের নানান কনসেপ্ট সহজে বোঝানো যায়? এই ভাবনা থেকে গল্পের ছলে এই বইটা লেখা। আমি আর সুবিন মিলে একটা গণিতের কোর্স করিয়ে ছিলাম ঐ বয়সের ছেলে-মেয়েদর। ওদের পড়ানোর জন্য আমার একটা নোট তৈরি করতে হল। এটি হল সেই নোটের লিখিত রূপ। পড়ে এটার এক্সটেনশন হিসাবে শিক্ষক ডট কমে একটা প্রাথমিক গণিতের কোর্স করিয়েছি। এখানে প্রথম নীতি থেকে আমি ব্যাপারগুলো ধরতে চেয়েছি। যেমন লসাগুর কথা বলা যাক। লঘিষ্ট, সাধারণ এবং গুনিতক এগুলো আলাদা করে বুঝানোর একটা চেষ্টা। উদাহরণটা আমি দিলাম একটা ছক আকারে, একটা গুনিতক টেবিল বানিয়ে। তারপর বোঝালাম সাধারণ মানে কী? তারপর সেগুলোকে গোল করে চিহ্নিত করলাম। তারপর বললাম এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে ছোট সেটিই ঐ তিনটি সংখ্যার লসাগু। এই লেখাতে সেটি দেখা যাবে।
তো এই বই-এর প্রচ্ছদের লেখাটি গড় নিয়ে। গড়ের ধারণাটা খুব দরকার গণিতের আঙ্গিনায়। সেটার ধারণা কেমন করে হবে সেটা বোজানোর চেষ্টা করেছি আমি। এই বইতে যে সব টেকনিক ব্যবহার করেছি পরে সেগুরোর বিস্তৃতি করেছি আমার অনলাইন কোর্সে।
এটির প্রকাশকও তাম্রলিমিপ। গায়ের দাম ১২০ টাকা। রকমারি লিংক–
গণিত নিয়ে আমি একটা পাঠ্যপুস্তক লিখছি একেবারে ছোটদের জন্য। ভেবেছিলাম এবারের বইমেলাতে সেটি প্রকাশিত হবে – প্রাথমিক গণিতের হাতে খড়ি নামে। তবে, এবারের মেলা আমি ধরতে পারছি না। তবে, বৈশাখী মমেলাতে এটা ধরতে পারবো আশা করি। এচঅড়া আর একটি অর্ধসমাপ্ত পান্ডুলিপি হলো সাত তেরো আরও বারো। এটিও আশাকরি ২০১৮ সালে প্রকামিত হবে ইনশা আল্লাহ।
যারা যাদে শিশু সন্তানদের আগামী দিনে গণিতে পারঙ্গম করে গড়ে তুলতে চায় তারা এই বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে পারে। বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাম্রলিপির প্যাভিলিয়ন হলো মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের সামনে।
শিশুদের বই উপহার দিন। শুভ সকাল।