বইমেলার বই ৬ : গণিত শেখো অঙ্কবান, যায় যাবে যাক প্রাণ
আমরা যখন গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করি তখন আমাদের একটা বড় কাজ ছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা কেন গণিতকে ভয় পায় তার কারণ খুজে বের করা এবং সেটি সমাধানের একটি রাস্তা বের করা। চট করে আমরা যে দুইটি বিষয় খুঁজে পাই তার সঙ্গে আমাদের গণিত বিষয়কে অঙ্ক বলার একটা সংযোগ আছে। আমাদের দেশে এখনও স্যাররা (উইথ ডিউ রেসপেক্ট) অঙ্কটা করান, অঙ্কটা পড়ান না। আমাদের বইগুলোর শুরুতে অনেক কথাবার্তা লেখা থাকে, স্যাররা সেগুলো নিয়ে আলাপ করেন না ক্লাসে, এমনকি উদাহরণগুলোও করান না। বরং ক্লাসে এসে বোর্ডে অনুশীলনীর সমস্যা সমাধান করতে শুরু করে দেন। ফলে এমন কতগুলো ঝামেলা হয় যার সমাধান হলো অঙ্ক মুখস্ত করে ফেলা!
জ্যামিতির একটা উদাহরণ দেই। এটি আমি প্রায়শ বলি। ত্রিভূজের তিনকোণের সমষ্টি দুই সমকোণের সমান। এই উপপাদ্যটি প্রমাণ করার সময় ত্রিভূজের যে কোন শীর্ষবিন্দুতে একটি সমান্তরাল সরলরেখা আঁকতে হয়। আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখনো কেউ আমাকে কোনদিন বলেনি সমান্তরাল সরলরেখাই বা আঁকতে হবে কেন? অন্যকিছু করলে কি হবে না?
এখনও অনেক শিক্ষক ক্লাসে এ কথা ভেঙ্গে বলেন না যে, সমতলের দুইটি ভিন্ন বিন্দুতে যদি দুইটি কোণ থাকে তাহলে তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক বের করার সহজ বুদ্ধি হলো সমান্তরাল সরলরেখা আকা। তারপর একটা ছেদক বানাতে পারলে অনুরূপ আর একান্তর কোণের ধারণা আমদানী করা যায়।
একইভাবে লসাগু, গসাগুর কথা ধরা যাক। লসাগু পড়ানোর শুরুর দিন থেকে শুরু হয় কেমন করে লসাগু বের করতে হবে তার চেষ্টা, গসাগু বের করার জন্য ইউক্লিডের পদ্ধতি। ইউক্লিডের পদ্ধতিতে গসাগু বের করলেই যে সেটা উদ্দিষ্ট গসাগু হবে এটা কি কোনদিন আমাদের স্যাররা বলেন? বলেন না, কেন জানি।
সেজন্য আমরা শুরু থেকে জোর দিয়েছিলাম বই লেখার। এখন প্রায় দুই শতাধিক গণিতের বই আমরা লিখে ফেলেছি বাংলা ভাষাতে। গণিতের সাধারণ বিষয় যেমন আছে তেমনি কঠিন সব বিষয়ও আছে।
তামিম শাহরিয়ার সুবিন আর তাহমিদ রাফির গণিত করব জয় সে ধারারই একটি নতুন সংযোজন। এটিকে ওরা গণিত শেখার বই বলছে না, বলছে শুরুর শুরু। বিষয়গুলো দেখা যাক
অধ্যায় ১ : সংখ্যা ও গণনা
• পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সংখ্যা আর বড় সংখ্যা
• সংখ্যারেখা
• জোড় ও বিজোড় সংখ্যা
• গাণিতিক অপারেশন
o যোগ
o বিপরীত সংখ্যা
o বিয়োগ
o গুণ
o ভাগ
o ভগ্নাংশের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ
o উলটো সংখ্যা
অধ্যায় ২ : বীজগণিতের প্রাথমিক ধারণা
অধ্যায় ৩ : ঐকিক নিয়ম
অধ্যায় ৪ : উৎপাদক ও মৌলিক সংখ্যা
• মৌলিক সংখ্যা
অধ্যায় ৫ : গসাগু ও লসাগু
• গসাগু
• লসাগু
অধ্যায় ৬ : শতকরা
• পার্সেন্টাইল
অধ্যায় ৭ : গড়, মধ্যক ও প্রচুরক
• গড়
• মধ্যক
• প্রচুরক
অধ্যায় ৮ : সম্ভাব্যতা
অধ্যায় ৯ : সেট
• সেটের বিভিন্ন চিহ্ন :
অধ্যায় ১০ : লেখচিত্র
অধ্যায় ১১ : ফাংশন
অধ্যায় ১২ : লগারিদম
অধ্যায় ১৩ : গণিত শেখার শুরু
সুবিন আর রাফির এই বই আবর্তিত হয়েছে গণিত শেখার তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে – সেগুলো হচ্ছে পড়া, উপলব্ধি করা ও অনুশীলন করা। তাদের ভাষায় “গণিত বইতে কেবল অনুশীলনীর প্রশ্নগুলোর উত্তর বা সমাধান করলেই হবে না, বরং বই ভালোভাবে পড়তে হবে। আর পড়ার সময় গল্পের বই কিংবা খবরের কাগজ পড়ার মতো পড়লে হবে না, পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী পড়ছি, সেটি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। গণিতের কোন জিনিসটি কেন শিখছি, সেটি কী কাজে লাগছে-এই বিষয়টি উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি”।
ঐ যে বললাম সমান্তরাল রেখা আঁকছি কেন? যেন তেন একটা রেখা আকলে কী হতো না (জ্যামিতির এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি আর সুব্রত একটা কাজ করেছিলাম। দু:খের বিষয় আমার ঐ খেরা খাতা হারিয়ে যাওয়ায় সে বইটা আর হলো না)। কিংবা গসাগু করতে গিয়ে ভাগশেষ দিযে কেন ভাগ করছি?
তো, সুবিন আর রাফি মিলে গণিতের মৌল ধারণাগুলোকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছে এই বইতে। এই বই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রোগ্রামিং (বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক আছেন। তিনি মনে করেন প্রোগ্রামিং কোন সৃজনশীল বিষয় নয়। সুজণশীল বিষয় হলো প্রেমের উপন্যাস! থুথু)
এই বইতে কয়েক জায়গায় সি কিংবা পাইথন ভাষায় কিছু প্রোগ্রামও দেওয়া হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিংয়েও কিছুটা উৎসাহ পায়। তবে বইটি পড়ার জন্য প্রোগ্রামিং জানার কোনো প্রয়োজন নেই। যারা ইতিমধ্যে প্রোগ্রামিং কিছুটা শিখেছে, তারা সেই প্রোগ্রামগুলো দেখতে পারে, বাকিরা না দেখলেও চলবে।
গণিত জানা, সমস্যা সমাধানে পটু এমন এক জেনারেশন গড়ে তোলার জন্য লড়ে যাচ্ছে গণিত অলিম্পিয়াডের স্বেচ্ছাসেবকরা। এই বই তার আর একটি উদাহরণ মাত্র।
যাদের গণিত মুখস্ত করার শখ এবং যারা কেবল জিপিএ পাঁচের পেছনে দৌড়ায় এই বই তাদের জন্য নয়।
যে তিনজন লোককে ওরা বইটা উৎসর্গ করেছে তাদের মধ্যে আমার নামও আছে। তবে, বাকী দুজনের পাশে কিন্তু আমার নাম যায় না। সুবিন আর রাফি এটা তাদের ভালবাসার বহি:প্রকাশ হিসেবে করেছে বলে আর বকাটা দেওয়া গেল না।
গণিত করব জয়ের জন্য শুভ কামনা।
গণিত করব জয়
তামিম শাহরিয়ার সুবিন/তাহমিদ রাফি
দ্বিমিক প্রকাশনী
মূল্য ২২০ টাকা।