বইমেলার বই ১৮: বোকারাই সব বিজ্ঞানী!!!

Spread the love

রাগিব হাসানের সঙ্গে আমার পরিচয় তার বুয়েট জীবন থেকে। তবে, সেটার কথা আমার খুব মনে পড়ে না। আমার মনে পড়ে ২০০৫ সালের কোন এক সময়ে রাগিবের কাছ থেক পাওয়া একটা ই-মেইলের কথা। তখন রাগিব পিএইচডি করছে মনে হয়। ও লিখেছিল বাংলা উইকিপিডিয়া নিয়ে। উইকিপিডিয়া নিয়ে আমি একটু আধটু জানতাম তবে সেখানে লিখবো এটা ভাবিনি। রাগিবের বক্তব্য ছিল সহজ – আমি যেন বাংলা উইকিপিডিয়া নিয়ে কাজ করি, অন্যদেরকে বলি। ২০০৬ সালের গণিত অলিম্পিয়াড শেষ হওয়ার পর আমি আর রাগিব অনেক মেইলামেইলি করেছি এবং তারপরই জন্ম হয় ইয়াহুতে বাংলা উইকি গ্রুপের, বিডিওএসএনের তত্ত্বাবধানে। তখন বাংলা উইকিপিডিয়াতে মাত্র পাঁচশ কতোটি ভুক্তি ছিল। সে থেকে রাগিবের সঙ্গে আমার খুব ভাল যোগাযোগ আছে। ঔ ছোট্ট ইয়াহু গ্রুপটি এখন উইমিডিয়া বাংলাদেশ নামে একটি পৃথক সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
রাগিবের লেখালেখির ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে, বিশেষ করে তার নির্মোহ লেখার স্টাইল। কোন লেখাতে মেদ থাকতে হয় না আর কোন লেখাতে বাৎসল্য দরকার এই বোধটা তার খুবই ভাল। আমি ওর লেখা কয়েকপৃষ্ঠার ফেসবুক পোস্টগুলো পড়ি। বুঝি মাথা কতোটা স্বচ্ছ থাকলে যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়ে একটা বক্তব্য তুলে ধরা যায়।
রাগিব আমাদের মুনির এন্ড মুনির শো’তে এসেছে। তার সঙ্গে আমার আর আমার ছেলের দীর্ঘ আলাপচারিতাটাও খুবই চিত্তাকর্ষক।
তো, এবার আদর্শের প্রকাশক যখন জানালো রাগিবের বিজ্ঞানীদের কান্ডকারখানা বের হবে ২১-এর আগে তখন বুঝেছি এই বই-এর অনেকগুলো অংশ আমি আগেই পড়ে ফেলেছি।

বিজ্ঞানকে বোঝার জন্য বিজ্ঞানীদের গল্প পড়ার একটা আলাদা মাজেজা আছে। এটা আমরা জানি বলেই আমি একসময় কিশোর আলোতে আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের নিয়ে লিখেছি। সেখানে দুই বসুর সঙ্গে তৃতীয় বসু কিংবা শরিয়তপুরের কীটবিজ্ঞানীও থাকেন।
রাগিবের বইটির বিজ্ঞানীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারাবিশ্বের। মোট ১৮টি গল্প এখানে আছে। শুরু হয়েছে আমাদের দ্বিতীয় বসুকে দিয়ে আর শেষ হয়েছে প্রথমবসুকে দিয়ে। ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনভাবে সাজানোতে বোঝা যায় রাগিব সাজানোতে একটা বিশেষ ছন্দ রেখেছে।

এই বই-এ যাদের নিয়ে লেখা হয়েছে-

সত্যেন বসু, আর্কিমিডিস, আইনস্টাইন, গাউস, নিউটন, এলাইয়াস হাউই, আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল, টমাস আলভা এডিসন, মারি কুরী, জোনাস সাল্ক, ব্যারি মার্শাল, আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, চন্দ্রশেখর, পার্সি স্পেনসার, হেনরি বেকেরেল ও জগদীশ চন্দ্র বসু। এছাড়া আছে ভাস্করাচার্যের মেয়ে লীলাবতীর কথা।

গল্পগুলোর কোন কোনটি আমরা ছোটবেলা থেকে পেড়েছি, শুনেছি জেনেছি। কিন্তু রাগিবের লেখার কারণে এগুলোকে একেবারে তরতাজা মনে হয়েছে। এর মধ্যে কোন কোনটা আবার নতুন। মানে আমিই আগে পড়িনি। পোলিও টিকার আবিস্কারক জোনাস সাল্ক কিংবা মাইক্রোওয়েব ওভেনের পার্সি স্পেনসারের গল্প আমি আগে পড়িনি। তাদের সম্পর্কে জানতামও না। সেটাও জানা গেল।

লীলাবতীকে যোগ করায় এই বইটি একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কারণ গণিত আসলে শেষ পর্যন্ত সকল বিজ্ঞানেরই মূল।
বই পড়ে আমার একটা খটকা দূর হলো না। সেটা হলো এডিসনের মায়ের কাছে স্কুলের চিঠিটা। এই গল্পটা আমি গণিত অলিম্পিয়াডে প্রায় সবই বলতাম। একবার বলার পর জামিল স্যার জানালেন এই গল্পটার সত্যাসত্যি আসলে নির্ণয় করা যায়নি। সম্ভবত এটা একটা ফেইক গল্প! আশাকরি, রাগিবের কৌতুহলী মন এই গল্পটার সুলক সন্ধান করবে।
এই বই কেনার কথা বলে তেমন একটা লাভ নাই। যারা আমার এই রিভিউ পড়ছে তারা সবাই এরই মধ্যে এই বই পড়ে ফেলেছে বলে আমার বিশ্বাস।
তারপর অন্যদের আমি বইটা পড়তে বলি কারণ রাগিবের মতো আমারও আশা “এই বইটিতে লেখা গল্পগুলো পড়ে অন্তত একটি শিশু, একটি কিশোর, কিশোরী অবা একটি তরুন বয়সের মানুষ স্বপ্ন দেখবে বিজ্ঞানী হওয়ার”।

ভবিষ্যতের পৃথিবীটা তো ওরাই বানাবে।

বইটির প্রচ্ছদ আমার বিবেচনায় এবারের মেলায় যে কয়টি শিশুতোষ বই বের হয়েছে তার মধ্যে সেরা। প্রচ্ছদ একেছেন সাজু।

শেষে একটা প্রস্তাব। আমি আশা করেছিলাম রাগিবের বইটি আমাদের সৃজনী সাধারণ লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশিত হবে। হয়তো ব্যস্তায় সেটি খেয়াল করা হয়নি। আগামীতে আশা করি রাগিব আমাদের মুক্ত লাইসেন্সে যোগ দেবে।

 

বিজ্ঞানীদের কান্ড কারখানা
রাগিব হাসান
আদর্শ
গায়ের দাম-২০০ টাকা

 

(রকমারিতেও পাওয়া যায়)

Leave a Reply