আমার বইমেলা ২০১৯-৫: সুস্থতায় ব্যায়াম – ভাল থাকার আছে যে উপায়
আমার বইমেলা ২০১৯-৪: প্যারাময় লাইফের প্যারসিটামল – নামেই পরিচয়!
“চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব”-এর কাজকর্ম করতে গিয়ে আমার প্রতিনিয়ত নানান জনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এদের কারও কারও প্যাশন অতুলনীয়, কেউ নিরবচ্ছিন্নভাবে ভাল করতে থাকে, কেউ অসম্ভব বিনয়ী। আবার কেউ থাকে শুধু প্ল্যানই করে কাজ করতে পারে না।
অনেকেই বর্ণ রাইটার। কবিতা, গল্প লিখে এক সময় লিটল ম্যাগ দাপিয়ে বেড়াতো। স্কুল কলেজে বিতর্ক করতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রাজনীতির মাঠও দাপিয়ে বেড়িয়েছে। দু’হাতে লিখেছে। কবিতা আবৃত্তি করেছে। তারপর কালক্রমে ঢুকে পড়ল কর্মজীবনে। তেমন আর লেখা হয় না।
কিন্তু সুযোগটা করে দিল ফেসবুক। নিজের রোগীদের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে জেনে যাচ্ছে তাদের ভুল ধারণা। ভাবছে সেগুলো দূর করার জন্য লেখালেখি করা যাক। কারণ শুধু রোগীদের করলে তো বাকীরা জানবে না। লেখালেখি থেকে টিভি প্রোগ্রাম হয়ে এখন নিয়মিত লিখছে প্রথম আলো’তে প্রতি বৃহস্পতিবার। দিচ্ছে ভাল থাকার পরামর্শ। আর এবারের বই মেলা’তে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম বই – সুস্থতায় ব্যায়াম।
বলছিলাম ফিজিওথেরাপিস্ট ও উদ্যোক্তা উম্মে শায়লা রুমকীর কথা। রুমকীর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের কথা সেভাবে মনে নাই। ওর কথা আমি প্রথম জানতে পারি যখন আমরা ওকে উদ্যোক্তা সম্মাননা দেই। ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ থেকে আমরা প্রতিবছর উদ্যোক্তাদের সম্মানিত করি। তাদের উদ্যোগের প্রশংসা করি আর তাদের আছে সম্মাননা স্মারক তুলে দেই। পরে আমি তাদের সম্পর্কে আমার সাইটে লেখালেখি করি। আর সেভাবে রুমকীর উদ্যোগ, তার পরিশ্রম এবং নতুন ধারণার কথা জানতে পারি।
ফিজিওদের প্রতি আমার এক ধরণের ভক্তি আগে থেকেই ছিল। কারণ আমার মা এবং তার চিকিৎসক সালেক ভাই (এখন কই আছেন জানি না)। মা একবার রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পান। সেই থেকে দীর্ঘদিন মা’কে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়েছে। রুমকী এবং তার স্বামী রকিবের সঙ্গে পরিচয়ের পর আমার মনে হয়েছে পরিচয়টা আরও আগে হলে ভাল হতো। আর সুস্ততায় ব্যায়াম বছর কয়েক আগে প্রকাশ হলে আমার “নোয়াপাতি ভূড়ি”টা হয়তো হতো না!
আমার মতো অনেকের ধারণা অসুস্থ হলে বা বয়স হলেই বোধহয় ব্যায়াম করতে হয়। আর ব্যায়ামের ব্যাপারটা মনে হয় “কাজী নজরুলের সেই চা বানানোর” গল্পের মতো। বিশাল আয়োজন। ট্রেডমিল কিনতে হবে, সাইকেল কিনতে হবে, খোলা মাঠ থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এটি আমিও ভাবতাম। মানে কি এখনও ভাবি আর কি। আবার আছে ব্যায়াম কেবল খুব ভোর উঠে করতে হয়। তাই আমার আর ব্যায়াম করা হচ্ছে না।
কিন্তু এসব উপকরণ ছাড়াও যে সুস্থ থাকা যায়, সামান্য কিছু সময় প্রতিদিন দিলেই যে অনেক ঝামেলাকে বিদায় দেওয়া যায় সেটি এই বই না পড়লে আমি জানতেই পারতাম না। চার ফর্মার ছোট্ট বই। কিন্তু যে কাউকে বদলে দিতে পারে, আপনাকে রাখতে পারে সারাজীবন সুস্থ!!!
কোমড় ব্যাথা, ঘাড়ে ব্যাথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাটুর ব্যাথা, টেনিস এলবো, পায়ের গোড়ালি, স্পন্ডিলাইটিস, ডিমনেশিয়া, ডিপ্রেশন ইত্যাদি আলাদা আলাদা করে যেমন লিখেছন তেমনি গর্ভবতী মায়েদের জন্য লিখেছেন তিনটি আলাদা চ্যাপ্টার। রুমকীর একটি প্রজেক্ট আছে গর্ভকালীন সময়কে উপভোগ করার। সেটির প্রকাশ এই তিনটি লেখা। আমার ধারণা এই তিনটি নিবন্ধ এই বইটি যে অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করে লেখা হয়েছে তার একটি প্রমাণ।
লেখার স্টাইলটিও সুন্দর, গল্পের ঢঙ্গে। বোঝা যায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড়। প্রায় ৫ বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠিত পিটিআর’সির দুইটি শাখাতে নিয়মিত রোগী দেখে সে। ফলে, নানা কিসিমের লোকের সঙ্গে তার দেখা হয়। এই সকল বাস্তব কেস স্টাডির কারণে বইটি আলাদা একটি দ্যোতনা পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি নিবন্ধই শুরু হয়েছে একটি বাস্তব কেস দিয়ে। সেই কেসের মধ্যেও বোঝা যাচ্ছে ভোগান্তির কারণ কী কী? সমস্যাটার উৎপত্তিও বা কোথায়?
সমাধান শুধু লিখে দিচ্ছেন তা নয়। ছবি একেও বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কেমন করে করতে হবে সেটা আপনি বোঝেন নাই এ কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন না। ছবিগুলো স্কেচ করে দেওয়ার ফলে ব্যায়াম করার হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অবস্থান কেমন হবে সেটিও ভালমতো বোঝা যাচ্ছে।
তবে, আমার মনে হয় এই বই-এর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে কানের কাছে গুনগুন করে বলে দেওয়া যে, সুস্থ হওয়ার জন্য আগেই অসুস্থ হওয়ার দরকার নেই। যে কোন সময় থেকেই সুস্থ থাকা যায়। কাজে ভাল থাকার জন্য যদি মন স্থির করে থাকেন, তাহলে দেরী না করে এই বই কিনে ঝাপিয়ে পড়তে পারেন।
ও হ্যা, বলতে ভুলে গেছিলাম। এই বই-এ আলাদা একটি নিবন্ধ রাখা হয়েছে শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে। সেরকম বাবুদের কেমনে সামলাতে হবে সেটা হবে মা-বাবাদের জন্য বাড়তি পাওয়া।
সুস্থতায় ব্যায়াম
উম্মে শায়লা রুমকী
বেহুলা বাংলা
মূল্য ২০০ টাকা।
(বইমেলায় বেহুলা বাংলার স্টল নং ১২৩)