প্রোগ্রামিং-এ বলদ টু বস!!!
ঝংকার মাহবুবের কথা আমি প্রথম জানি তার বানানো একটা ভিডিও থেকে। তারপর সে আমাদের বিডিওএসএনে টক দিয়েছে, আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
আমার প্রথম চাকরিতে কখনো কখনো আমাকে এক রাতেই কোন প্রোগ্রামিং ভাষার মূল ব্যাপারগুলো জেনে নিতে হতো। সে সময় আমি দেখি ইংরেজিতে বই পাওয়া যায় “ফর ডামিস”। মানে আমার মতো ফাঁকিবাজদের জন্য যাদের একটা বিষয় বুঝতে ম্যালা কষ্ট করতে হয়। তখন ভাবতাম আমাদের ভাষাতে কেন লোকে এই সিরিজটা লিখে না। ফর ডামিস বইগুলো লেখার সময় লেখক ধরে নিতেন তার পাঠকরা সবাই ডামিস মানে হাবলু। কাজে তারা সহজ উদাহরণ দিতেন। ফলে ব্যাপারটা খুব সোজা হতো। জানা বিষয় থেকে মূল বিষয়ে যাওয়ার পথটা তাই মসৃন হতো। এর মানে হলো সোজা। এই বইগুলোর কোনটা এভাবে শুরু হতো না, ‘… হলো একটা অবেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ”। এগুলোতে নানান গল্প করে তারপর বোঝানো হতো এটা হলো ‘ওওপি’!!! আমাদের দেশে প্রোগ্রামিং-এর বই লেখার সংস্কৃতি যথেষ্ট পুরাতন। তবে, সেগুলো পাঠ্যপুস্তক হিসাবে। তামিম শারিয়ার সুবিনের বই-এর মাধ্যমে আমরা একটা নতুন জগতে প্রবেশ করি। তবে, সেখানেও ফর্মাল এপ্রোচটাই প্রাধান্য পায়।
তো, গেল বছর আমার “ডামিসদের জন্য বই নেই” এই দু:খ দূর হয়। ঝংকার হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং নামে একটা বই লিখে। তো, এবছরও সে একটা কিছু করবে সেটা আমি জানতাম। আর সেটা প্রোগ্রামিং নিয়েই হবে এটা বলা বাহুল্য।
কারণ বিশ্বজুড়ে এখন প্রোগ্রামিং নিয়ে মাতামাতি। মনে হচ্ছে প্রোগ্রামিং ছাড়া মানব সভ্যতা আর আগাতে পারবে না। এমনকী মাটি কাটতেও আগামী দিনে অনেক প্রোগ্রামার দরকার হবে। আর এই ব্যাপারটা সারাবিশ্বের লোকেরা জানে। আমরাও জানি। তবে, আমাদের জানার মধ্যে একটা খেদ হলো আমরা মনে করছি কেবল ওয়েব প্রোগ্রামিং বা ওয়েব সাইট বানানোই মনে হয় প্রোগ্রামিং। ফলে “ঘরে বসে বড়লোক” হওয়ার যে তরিকা খান একাডেমি শুরু করে গেছে সেটা থেকে বের হওয়াটা একটা ঝামেলা মনে হচ্ছে। তবে, আশার আলো হচ্ছে বাংলাভাষাতে দক্ষ প্রোগ্রামার বানানোর একটা উদ্যোগ চলছে। এবারের বই মেলাতে মইনুল রাজুর গল্পে গল্পে প্রোগ্রামিং নামে একটা বই প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রোগ্রামিং যে কেবল এইচটিএমএল নয় সেটা ঠিকভাবেই বলা আছে।
তো, লক্ষ লক্ষ প্রোগ্রামারদের সবাই যে প্রোগ্রামিং স্কুল থেকেই আসবে এমন কোন লক্ষণও কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। কারণ সংখ্যাটা। প্রোগ্রামারের চাহিদার সংখ্যাটি অনেক বড়। কাজে আমেরিকার হোয়াইট হাউস হোক আর আমাদের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের জলিলগঞ্জ গ্রাম হোক। সবটাতেই প্রোগ্রামিং নিয়ে অনেক আগ্রহ উদ্দীপনা।
এই আগ্রহের জোয়ারে কী হাবলুরা বসে থাকবে? সারাজীবন ফাঁকিবাজি করে, শর্টকাট পথ ধরে বের হয়ে যাওয়ার হাবুলরা কী এখানে কোন পথ পাবে না?
হাবুল দ্য গ্রেট ঝংকার মাহবুব থাকতে সেটা কি আর হবে?
কাজে প্রোগ্রামিং-এর চিপাচাপা দিয়ে বলদরা কীভাবে বস হয়ে উঠতে পারে তার জন্য ঝংকারের এই বই। এর আগের হাবুলদের জন্য প্রোগ্রামিং বই-এ মাহবুব চেষ্টা করেছে মজা করে প্রোগ্রামিং-এর মূল বিষয়গুলো ধরিয়ে দেওয়ার। এবার আর একধাপ এগিয়ে হাবলুদের জন্য ডেটা স্ট্রাকচার, এলগরিদম, অবজেক্ট, ক্লাস, ওওপি ইত্যাদির চিপাচাপার সন্ধান করেছে।
এর আগে কেইবা বলেছে হাজিরা খাতাটাই একটা ডেটা স্ট্রাকচার আর কে খড়ের গাঁদাতে সুঁচ খোজার চেষ্টা করেছে প্রোগ্রামিং জগতে!
ঝংকারের ঢঙ্গে প্রোগ্রামিং-এর জগতে বলদ থেকে বস হয়ে ওঠার এই এক আশ্চর্য হাবলামি!
প্রোগ্রামার হতে চাওয়া ফাঁকিবাজদের পড়তেই হবে!
হ্যাপি কোডিং