আজকের ডিল বৈশাখী উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-১
চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব গ্রুপ থেকে আজ ও কাল (১৬-১৭ এপ্রিল) ‘আজকের ডিল বৈশাখী উদ্যোক্তা হাটের’ আয়োজন করা হয়েছে্৪০+ উদ্যোক্তা তাদের পণ্য ও সেবার পসরা নিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ডব্লিউভিএ-র কয়েকটা হলে হাজির হয়েছেন। আজ ও কাল প্রতিদিন সকাল ১০টা তেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটা চলবে।
সকাল বেলাতে সেটির উদ্বোধন করেছেন আমাদের সবার প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার। তারপর স্যার সব উদ্যোক্তার স্টলে গিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমিও সঙ্গে ছিলাম।
আমরা শুরু করেছি হোস্টমাইট নামের বিপুলের হোস্টিং প্রতিষ্ঠান দিয়ে। এটি ডোমেইন, হোস্টিং আর ওয়েবসাইটের কাজ করে। কয়েকবছর আগে শুরু করে মাশাআল্লাহ এবার আমাদের হাটের সিলভার স্পন্সর হয়েছে। হোস্ট মাইটের পাশের স্টলটা আমাদের প্রমির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম জিরো ডিগ্রি কমিউনিকেশনের। ওর স্টলে অবশ্য কিছু নাই। খালি ছবি তোলা। বিকাশের পাশের স্টলটি আমাদের তারেকের। ও নতুন একটি উদ্যোগের সূচনা করেছে। কনটার নাম। যদিও স্টলটি তার চালু উদ্যোগ এসটি সলিউশনের। তার পাশেই আজাদের বাংলার কবিতা প্রকাশন। এই দুর্মুল্যের বাজারে আজাদ সৃজনশীল ও মননশীল বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। জাফর স্যার তার স্টল থেকে ৫টা বই কিনলেন।
ডক্টরোলা ডট কম আমাদের গোল্ড স্পনসরদের একটি। ওদের স্টলে স্যার জানতে চাইলেন কোয়াকদের তারা কীভাবে চিহ্নিত করে। ওরা জানালো ওরা বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন যাচাই করে। তার পাশেই এসএসএল কমার্জ। এটি তখনো চালু হয়নি বলে স্যার আর দেখতে পারলেন না।
নিভেল পারভেজের ফিটম্যানের স্টলে ওর বানানো টি-শার্ট, টুপি এসব। ফিটম্যান আমাদের এই আয়োজনের পার্টনার। উদ্যোক্তাদের জন্য চমৎকার একটি টি-শার্ট ও করে দিয়েছে। নিভেল আমাদের গণিত উৎসব, ভাষা প্রতিযোগ থেকে শুরু করে নানান আয়োজনে টি-শার্ট সরবরাহ করে। যেহেতু ওর নিজের এখন টি-শার্টের ৩৬০ ডিগ্রী ফ্যাক্টরি আছে কাজে ওকে আর অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয় না।
ঐ রুমের পরে একটা ছোট রুমে দুইটা স্টল। একটা হোস্ট পেয়ার। এটা হোস্টিং-ডোমেইনের উদ্যোগ। এবং আমাদের সিলভার স্পন্সর। পাশেই ডোজ ইন্টারনেট। ভাগ্য ভাল যে, রুবাই আমার সঙ্গে ছিল না। থাকলে আমাকে দিয়ে ওদের একটা প্যাকেজ কেনাতো। ওরা দেখি অনেক কমটাকায় ভাল স্পিড দিচ্ছে। অবশ্য আমি এখনো ব্যবহার করিনি।
ওখানে স্টেজের ওপর দপ্তরের প্যাভিলিয়ন। এটি এবারের হাটে একমাত্র বিদেশী প্যাভিলিয়ন। দপ্তর অফিস অটোমেশনের একটি সিস্টেম। কোম্পানিটি মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে নিবন্ধিত। উদ্যোক্তা মাসুদ রানা গতকাল দপ্তরকে ঘিরে তাঁর স্বপ্নের কথা আমাকে বলেছে। দপ্তরের মূল মডিউলটি ওকটি ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম। এটার সঙ্গে প্লাগ-ইন হিসাবে পাওয়া যাবে অনেক অনেক এপ্লিকেশন। এর মধ্যে একট মডিউল তৈরি হয়েছে, একটি সম্পূর্ণ একাউন্টিং সিস্টেম। একাউন্টিং সিস্টেমটির দাম মাত্র $৩০০। হাটে আরো কমে মনে হয় দিচ্ছে। এই একাউন্টিং সফটওয়্যারটি নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। বিশিষ করে আমাদের উদ্যোক্তাদের অনেকেই বেশি দাম দিয়ে একাউন্টিং সফটওয়্যার কিনতে পারে না। বরং এক্সেলে কাজ শেষ করে ফেলে। এটির ব্যবহার তাদের অনেকখানি এগিয়ে দেবে। তবে, দপ্তরকে ঘিরে চালু হবে একটি নতুন মার্কেটপ্লেস যেখানে দপ্তরের প্লাগ-ইনগুলো পাওয়া যাবে। সেটা যখন হবে তখনই কেবল দপ্তরের মূল ব্যাপারটা আমরা বুঝতে পারবো।
হাটে হাব ঢাকা এবং প্রফিসিও নামের দুইট কো-ওয়ার্কিং অফিসের স্টল আছে। এর মানে হল, একজন উদ্যোক্তা বা ফ্রিল্যান্সার নিজে অফিস সেট-আপ না করে এদের ওখানে স্পেস ভাড়া করতে পারে। সেই সঙ্গে পাবে কনফারেন্স রুম, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং-এর সাপোর্ট।
অনলাইন বিতান, তানিয়ার বন্ধু ডট কম, আমিকের প্রিয়শপ ডট কম। এসবই সেখানে ই-কমার্স সাইট। তবে, বেশিরভাগ উদ্যোগই কোন না কোনভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। সম্ভবত বেকি সেন্টারই এখনো অনলাইনে বিক্রি করছেন না। এই স্টলটি আমাদের হাটের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এটি বিক্রি করছে পাট আর চামড়া দিয়ে তৈরি মেযেদর পাদুকা। ডিজাইনগুলো খুবই সুন্দর। ডিজাইন আর হাতের কাজগুলো হয় গাইবান্ধায় আর ফিনিশিং ঢাকায়। এই উদ্যোগটি খুবই প্রশংসার যোগ্য।
আমাদের চামড়াজত পণ্যের গুরু মশাই তানিয়া ওয়াহাব তার ট্যান আর তার চ্যালা সানজানা রেনেতে নিয়ে এসেছে চামড়া ও সেরকম প্রোডাক্ট। তানিয়া অবশ্য চামড়া ছাড়া আর কিছউ করছে না। তবে, রেনেতে ব্যাগের সমাহারে চামড়া, রেক্সিন, আর্টিফিশিয়াল লেদার সবই আছে। বিনা যুদ্ধে নাহি দেবে!!!
চামড়ার জুতা আর বেল্ট নিয়ে যথারীতি আছে আমাদের নিজেদের ব্র্যান্ড ভাইপার। স্যার যখন স্টলের জুতা স্যান্ডেল দেখছিলেন তখন আমি স্যারকে দেখালাম আমার পায়েও বায়েজিদের বানানো স্যান্ডেল আছে। স্যান্ডেল ব্যবহারে আমার বাতিক আছে। তবে, ভাইপারের স্যান্ডেল ব্যবহারে আমি খুবই আরাম পাই।
ওয়াওজারে আমাদের শফিকুলের ম্যাজিক রুটির কাজ কারবার। ব্যাপারটা খুবই সহজ। যাদের বাসায় বানানোর দোহাই-এ রুটি বানানো হয় না, তারা চেষ্টা করতে পারেন। আমার বাসায়ও একটা রুটি মেকার আছে।
আবু সুফিয়ানের তো পিসি, মানে ফটো ক্রেডিটের দোকান। ওর দোকানটা একমাত্র পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করা।
ই-কুরিয়ারে স্টলটা একেবারে অন্য রকম। একটা গোল চত্ত্বরের ওপর কয়েকটা মোড়া। মাঝে একটা ছোট টেবিল। মানে আড্ডা দেওয়ার জায়গা। স্যার বিপ্লবদের নতুন একটা উদ্যোগ লিংকিংলুপের উদ্বোধন করলেন। এটি হল বাসায় গিয়ে বা বাসা থেকে নিয়ে এসে অথবা রিমোট লগ-ইন করে পিসি সারাই-এর দোকান!
কসমেটিক ফ্রিকে পবিত্র আর সেতু দুইজনকেই পাওয়া গেল। ওরা অরিজিন্যাল কসমেটিক নিয়ে এসেছে। পবিত্র জানালো দেশে যে সব ব্র্যান্ড কসমেটিক বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই ফেইক।
গ্যাজেটের দোকান কয়েকটা। এর মধ্যে আসাদের দোকানের কয়েকটা প্রোডাক্ট দেখে ভার লাগলো। স্যার বললেন প্লাস্টিকের লেন্স বানানোর জন্য প্লাস্টিক পণ্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একটা মিটিঙ করতে। স্যারের ধারণা আমরা অনায়াসে ভার্চুযাল রিয়েলিটির ব্যাপার স্যাপার নিজেরাই বানাতে পারবো। আসাও দেখলাম সায় দিল!
পিনাকল মিডিয়ার লোকজন অবশ্য তথকনো এসে পৌছায়নি।
এসব ছাড়াও হাটে আরো স্টল আছে। আমি এক দফাতে সবগুলোর বৃত্তান্ত মনে রাখতে পারি নাই। সন্ধ্যার সময় আবার গিয়ে বাকীগুলো ঠিকমতো দেখে আসবো এবং দ্বিতিয় কিস্তি লিখবো।
যারা রাত ৮টার আাগে আমার এই লেখা পড়বেন তারা একবার যেখানে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন।
উদ্যোক্তা এবং হবু উদ্যোক্তারা অবশ্যই একটা সময় বের করবেন। কারণ ওখানে গেলে আপনার বিশ্বাসটা বাড়বে। যারা স্টল/প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে তারা আপনর মতোই। সাহস করে পথে নেমে পড়েছে। তারপর নিজেদের বড় করছে।
গ্রামীণ হাটের মতো আমাদের উদ্যোক্তা হাটেরও একমাত্র উদ্দেশ্য বেচা-বিক্র নয়। বরং এ হলো প্রচার আর বিপননের জায়গা, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং সম্প্রসারনের জায়গা। সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে জানা।
যেমন ধরুন আপনি করতে চান একটি ই-কমার্স সাইট। তাহলে আপনার লাগবে একটা কুরিয়ার – হাটে দেখা মিলবে প্যাকার্স আর ই-কুরিয়ারের। হয়তো আপনি বাসায় বসে নতুন কিচু তৈরি করেন। তাহলে সেকানে দেখা হবে দেশের সবচেয়ে বড় ই কমার্স স্টোর আজকের ডিলের। ওখানেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার ওয়েবসাইট বানানোর লোক। এসএসএল কমার্জ আপনাকে সাহায্য করবে লেনদেনের ব্যাপারে। এসব কিছু একসঙ্গে এক ছাদের নিচে? কখনোই পাবেন না। আর একটা ভাল বিষয় হলো আপনি সেখানে বিভিন্ন বিটুবি সার্ভিসের কাস্টোমারদেরও পেয়ে যাবেন। তার মানে রেডি রেফারেন্স চেক।
আজ সন্ধ্যায় আমি আবার যাবো। আপনি?