
রাস্তার টাকা কুড়িয়ে নেবেন বিল গেটস!
বিশ্বের শীর্ষ ধনী, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিল মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারপারসন বিল গেটসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকার সমান। এত সম্পদ থাকার পরও বিল গেটস কী চলার পথে রাস্তায় ৪০ হাজার ডলার পড়ে থাকতে দেখলে তা তুলে নেবেন?
সম্প্রতি এমন অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিল গেটস। বিশ্বখ্যাত অনলাইন কমিউনিটি রেডিটের এএমএ (যা ইচ্ছে তা জানতে চাওয়া, AMA- Ask me anything) সেশনে তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দেন। এটি ছিল এএমএতে তাঁর চতুর্থবারের মতো যোগদান।
সব বাসায় কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আজ থেকে তিন দশকের বেশি সময় আগে বিল গেটস মাইক্রোসফটের সূচনা করেন। এখন যদি তিনি নতুন করে শুরু করেন তাহলে তার লক্ষ্য কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সে সময় অনেকেই তাদের পাগল ভেবেছে। এমনকি কেন ওলসেনের মতো শিল্প-নেতাও বলেছেন যে, তাদের বাসায় কম্পিউটারের দরকার নাই! তরুণ ছিলেন বলেই কম্পিউটার নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পেরেছেন বলে বিলের ধারণা। এখন অবশ্য কম্পিউটারের লক্ষ্য ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘আজকের দিনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কম্পিউটারকে আরও বুদ্ধিমান বানানো। সফটওয়্যার কিন্তু এখনো “বুঝতে” পারে না এরপর আমার কী করা দরকার। বিশেষ করে ই-মেইল, বার্তা প্রেরণ আর নোটিফিকেশনের জ্বালায় একজন ব্যবহারকারী সারাক্ষণই একটা জটিল পরিস্থিতিতে থাকে’। নতুন প্রতিষ্ঠানটি এই নিয়ে কাজ করত।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা স্বভাবতই মাইক্রোসফটের পণ্য ব্যবহার করেন। তার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি সার্ফেস বুক এবং সপ্তাহে কয়েকবার এর পর্দা খুলে রাখেন। তাঁর মতে এর কী-বোর্ডটি আগেরটির তুলনায় ভালো। সাম্প্রতিক কালে মাইক্রোসফটের লিনাক্স প্রীতিতে দোষের কিছু দেখছেন না বিল গেটস। বরং তিনি মনে করেন মাইক্রোসফটের বর্তমান প্রধান নির্বাহী সত্য নাদাল বাজারের পরিস্থিতি খুবই ভালো বোঝেন।
হাইস্কুল পেরোনোর পর কী করা উচিত এমন এক প্রশ্নের জবাব বিল সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরামর্শ দেন। কারণ বেশির ভাগ আগ্রহ-উদ্দীপক চাকরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরও নিজের কৌতূহলকে জাগিয়ে রাখা, পড়া, পড়া ও প্রচুর পড়া এবং নতুন কিছু শেখার ব্যাপারটা চালু রাখা খুবই দরকারি। নিজের হার্ভার্ড জীবনের স্মৃতি তর্পনও করেন তিনি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিল ঠিক করেছিলেন যে সব কোর্স তিনি নিবন্ধন করবেন সেগুলোর ক্লাস করবেন না। আর সেই ক্লাসগুলো করবেন যে কোর্স তিনি নিবন্ধন করেননি। এতে মাঝে মধ্যে মজার পরিস্থিতির উদ্ভব হতো। দেখা গেল তার নিবন্ধিত গণিতের কম্বিনেটরিক্স আর অনিবন্ধিত ব্রেন স্টাডিজের পরীক্ষা একই সময়ে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রেন স্টাডিজের সহপাঠীরা অবাক হয়ে দেখত তাদের ক্লাসের সবচেয়ে সরব ছাত্রটি ‘ভুল’ টেবিলে পরীক্ষা দিচ্ছে! তবে, যেহেতু বিল পড়ার সময়ে কঠিন পরিশ্রম করতেন তাই তিন সব সময় এ গ্রেড পেতেন। শুধু জৈব রসায়নে বেচারা সি+ গ্রেড পান।
বিল গেটস প্রচুর পড়েন এবং তার পড়া বই সম্পর্কে নিজের ব্লগে নিয়মিত লিখেন। তাঁর মতে তাড়াতাড়ি পড়তে শেখাটা একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু তার জন্য কোনো কোর্স আছে কী না, তা তিন জানেন না। নিজে একটা নিয়ম মেনে চলেন এবং কোনো বই একবার পড়তে শুরু করলে সেটি শেষ করেন। এ ছাড়া তিনি একসঙ্গে দুই-এর বেশি বই পড়েন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী লোকটি কেন অবসরে যান না এই প্রশ্নের উত্তরে বিল গেটস বলেন, ‘আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। বিজ্ঞানী আর মাঠকর্মীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে আমি আনন্দ পাই। আমার কাজের সময়ের একটা ফ্লেক্সিবিলিটি আছে এবং আমি মাঝে মধ্যে ছুটি কাটাই। বিশ বছর বয়সে আমি ছুটির তাৎপর্য বুঝতাম না। তবে এখন অনেক পরিপক্ব হয়েছি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমি মেলিন্দার সঙ্গে ফাউন্ডেশনের কাজ করছি। আমার স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আমি আরও ৩০ বছর এই কাজ করব বলে আশা করি। এই ফাউন্ডেশন গড়ে এক হাজার ডলার খরচ করে একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। আর এ কারণে তিনি রাস্তায় পড়ে থাকা ৪০ হাজার ডলার তুলে নেবেন। কারণ তাতে ৪০ জনের জীবন বাঁচানো যাবে।’
রেডিট এএমএ অবলম্বনে