গণিত যাত্রীর ডায়েরী ২০১৫-৪: রাজনীতির সমস্যা
এবছর প্রচন্ড শীতের মধ্যে উত্তরবঙ্গে গণিত উৎসব হয়েছে। একেবারে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়েও হয়েছে। কিন্তু রাজবাড়ির মত শীত আমি কোথাও পেলাম না।
আমরা যখন রাজবাড়ি জেলাতে প্রবেশ করলাম ততক্ষণে প্রায় ৯টার মত বাজে। কায়কোবাদ স্যার আর খাবেন না। আমরা খাবো। প্রেস ক্লাবের সমানে কোন হোটেলে।
এলজিইডির রেস্টহাউসে চারটা রুম নেওয়া হয়েছে আমাদের জন্য। স্যারকে রেখে আমরা রওনা হলাম খাবার খেতে। আহামরি কিছু নয়। তবে, ছোটমাছের চচ্চরি আর কী কী জানি। খাওয়াটা ভালই হল। সালমা হোটেল থেকে আমরা ওপরে প্রথম আলো প্রতিনিধি এজাজের অফিসে গেলাম। আনা হল রাজবাড়ির চমচম। রাজবাড়ির চমচম নেহায়েৎ ভাল। আসলে আমাদের দেশের নানান জায়গায় নানান পদ আসলে খুবই ভাল। কিন্তু কোন কোনটার নাম হয়ে যাওয়াতে যত বিপত্তি।
যাহোক চমচম আর সেলফি তুলে আমরা রেস্টহাউসে গেলাম।
“হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে…”
উত্তরবঙ্গের শীতে আমরা বেঁচে গেলাম আর কীনা রাজবাড়ি আমাদের কাবু করে ফেলেছে। রেস্টহাউসের গাড়ি বারান্দার সামনে একটা গ্রামীণ ফায়ারপ্লেসের ব্যবস্থা করা হল। সেখানে অনেকক্ষণ আগুন পোহানোর পর আমরা রুমে গেলাম।
জানাগেল সকালে গরম পানি পাওয়া যাবে। সেই ভরসায় ঘুমাতে গেলাম। একাডেমিক টিম কত রাত পর্যন্ত কাজ করেছে তা অবশ্য আমি বলতে পারবো না।
সকালে আমরা আগে স্কুলে চলে গেলাম। ডিসি এসে উদ্বোধন করে দিয়ে গেলেন। এই ডিসি একজন প্রকৌশলী তবে কেমন জানি। কায়কোবাস স্যার এসেছেন এটা শোনার পরেও স্যারের সঙ্গে সামান্য সৌজন্য দেখানোর সময়ও তিনি পাননি।
পের আমি আর স্যার মিলে আলাপ করছিলাম বিষয়টা নিয়ে। স্যার ভাল মানুষ। তিনি এই লাইনে গেলেন না। আমাকে একজন অতি উচ্চ মানের লোকের কথা বললেন যিনি কথায় কথায় বুয়েটের পিণ্ড চটকান। তো, স্যারের কিছুটা সংশয় হওয়াতে তিনি ওনার সম্পর্কে খোঁজনিয়ে জানতে পারলে ঐ অধ্যাপক ছাত্র জীবনে বুয়েটে দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্ত চান্স পাননি্তাই তার বুয়েটের ওপর অনেক ক্ষোভ!
যাকগে। রাজবাড়ির উৎসবকে মোটেই প্রথমবার মনে হয়নি। যদিও ডাচ-বাংলা প্রথম আলো উৎসব এই প্রথমবার।
পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে প্যান্ডেলের বাইরেও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ঘোরাফেরা করেছে।
আমরা অবশ্য এক ফাকে আমাদের পাইলট আর তার ভাইকে দিয়ে যোগাড় করেছি ১০ লিটার খাটি গরুর দুধ আর সব ধরণের সবজির নমুনা। উদ্দেশ্য বাড়ি নিয়ে যাওয়া।
কায়কোবাদ স্যার জানালেন উনি যেখান থেকে এর আগে দুধ কিনেছেন তাঁর মধ্যে ৯৭%বার ঠকেছেন। কাজে উনি খুবই উচ্ছাশা করছেন না।
মনে পড়লো আমি আর স্যার আগে একবার পাটুরিয়া ঘাট থেকে মাছ কিনেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা না বলাটাই ভাল।
রাজবাড়ি উৎসবের প্রশ্নোত্তর পর্বটি ভাল ছিল এবং ফলাফলে দেখা গেল দুই-দুইজন ১০ এ ১০ পেয়েছে। সম্ভবত এবারের আঞ্চলিক উৎসবের দুইমাত্র পারফেক্ট স্কোর!
ফরিদপুর থেকে তিন গাড়িতে করে এসেছে, পুলিশ প্রহরায়!
এটি আমাদের উৎসবের নতুন দিক। আমরা লক্ষ করছি গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের নানানভাবে সহায়তা করে থাকেন। এটি নি:সন্দেহে আমাদের উৎসবের জন্য একটি বড় অর্জন।
রাজবাড়ি থেকে ফেরার সময় আমরা ফরিতে যোগাযোগমন্ত্রীকে পেয়েছি। আগের দুইটা সমস্যার সমাধান হয় নাই দেখে স্যার আর নতুন কোন সমস্যা দিলেন না। তবে, আমার মনে পড়লো কোন একবার রাজশাহি যাবার পথে স্যার একটা সমসযা দিয়েছিলেb অনেকটা এরকম- করিম, খগেন ও গোপাল তিনবন্ধু। তবে, এদের মধ্যে একজন সবসময় সত্যকথা বলে, অন্যজন সবসময় মিথ্যা কথা বলে। তবে. তিন নম্বরটা মাশাআল্লাহ রাজনীতিবিদ, ইচ্ছে হলে সত্য বলে ইচ্ছে হলে মিথ্যা। কী যে বলবে কেও বলতে পারে না।
তো করিম বললো – গোপাল একটা মিথ্যুক।
খগেন বললো – করিম সত্যবাদী।
দুইজনের কথা শুনে গোপাল বলল – আমি একজন রাজনীতিবিদ।
আমার ঠিক মনে নেই সেবার আমরা বরিশাল পৌঁছানোর আগে এই সমস্যার সমসাধান করতে পেরেছিলাম কী না।
এখন সবাই মিলে চেষ্টা করা যাক!