গণিত যাত্রীর ডায়েরী ২০১৫-৩: হ্যান্ডশেকের গোলমাল
শরিয়তপুর থেকে রাজবাড়ি যাবার পথে আমাদের মাদারীপুর হয়ে যেতে হবে। আর একটা ফেরীও আছে। তো ফেরীটা খুবই মজার। কারণ মনে হল ফেরী ছাড়লো আর আমরা ঐ পাড়ে পৌঁছে গেলাম!
তবে, রাস্তা মাশাল্লাহ! মনে হয় যোগাযোগমন্ত্রী ঐদিকে কখনো যাননি। (তখন কি জানতাম রাজবাড়ি থেকে ফেরার পথে মন্ত্রীর সঙ্গে এক ফেরিতে উঠবো?)
ফেরি পার হয়ে আমরা রাজবাড়ির দিকে যাবার পথে প্রথমে পৌছালাম মাদারীপুরে। মাদারীপুর শহরেই একটা চমৎকার সুন্দর লেক আছে। লেকটার আলাদা কোন নাম আছে কী না তা জানা হল না কিন্তু নাম ছাড়াই লেকটা সুন্দর। আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে লেকের পাড় বরাবর চলতে শুরু করলাম। এক জায়গায় নেমেও পড়লাম ছবি তোলার জন্য। আমি আর কায়কোবাদ স্যার আলাপ করছিলাম গণিত উৎসবের কারনে আমাদের প্রায় সব জেলায় ঘোরা হয়ে যাচ্ছে। কী আনন্দ।
পথে পথে কায়কোবাদ স্যারের গল্প আর সমস্যার আলোচনা চলতে থাকে। নানান ক্লুও স্যার দেন। তবে, সব সমস্যার সমাধান যে হয় তা না। আগের দুটো সমস্যার হয়নি। আর শরিয়তপুরের উৎসবে শিক্ষার্থীদের জন্য স্যার যে সমস্যাটা দিয়েছেন সেটাও আমাদের আলাপে ঢুকে পড়লো।
গাড়ি রাজবাড়িতে আগানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়লো উৎসব আকারে গণিত উৎসবের শুরু এই রাজবাড়ি থেকেই।
২০০২ সালের কোন একদিন আমরা উৎসব আকারে রাজবাড়িতে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন করি। সেই বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি আমরা নারায়নগঞ্জে প্রথম ঢাকার বাইরের গণিত অলিম্পিয়াড করেছিলাম। তবে, সেটার নাম ছিল বিজ্ঞান উৎসব । রাজবাড়িরটা করা হয় গণিত উৎসব নামে। এর পরেরটা হয়েছিল সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামে।
যাই হোক, রাজবাড়ির ঐ উৎসবের কান্ডারি ছিল আমাদের ফরিদপুর রহমান পান্থ (ফরিদুর রহমান পান্থ, প্রথম আলোর একজন কম্পিউটার কর্মী কয়েকবার তার নাম ফরিদপুর রহমান হিসেবে ছেপেছিল) এবং তার একটি সংগঠন – মুক্তচিন্তা বা এরকম কিছু একটা।
যথারীতি সকালবেলা ঢাকা থেকে আমরা রওনা দেই। আমি আর কায়কোবাদ স্যার রওনা দিয়েছিলাম কায়কোবাদ স্যারের গাড়ি নিয়ে। সোবহান নামে স্যারের একজন ড্রাইভার ছিল যার আসলে জিএমজির পাইলট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেচারা ভাগ্যক্রমে গাড়ি চালাতো। পাইলটের ব্যাপার স্যাপার তার ছিল।
কাজে মাত্র সোয়া দুই থেকে আড়ায় ঘন্টায় সে আমাদের ফেরি পার করিয়ে তারপর কিছুক্ষনের মধ্যে রাজবাড়ি গার্লস স্কুলে পৌছে দিয়েছিল। জাফর ইকবাল স্যার, ম্যাডাম আর একটি গাড়ি করে গিয়েছিলেন। আর রাজশাহী থেকে এসে যোগ দিয়েছিলেন আমাদের সুব্রত মজুমদার স্যার।
প্রশ্নের সমাধানটা আমার কাছে ছিল। এবং কয়েকটা সমস্যার সমাধানও করা ছিল না। আমরা ফেরিতে থাকতে থাকতে পরীক্ষা পর্ব শেষ হযে যায় ফলে ফেরিতে বসে কায়কোবাদ স্যার কয়েকটা সমস্যার সমাধান করেন আর মোবাইলে সেগুলোর সমাধান পান্থকে আমি জানাতে থাকি (ঐদিন আমি শিখেছিলাম কেন আমাদের একটা আলাদা একাডেমিক টিম দরকার। যদিও ২০০৪ সালে সেটি করাটা সম্ভব ছিল না। একাডেমিক টিম হয়েছে ২০৬-৭ সালে এসে)। আমরা যখন পৌছাই ততক্ষণে জাফর স্যার আর সুব্রত স্যার প্রশ্নোত্তর পর্ব চালিয়ে নিয়েছেন। সেবারও অনুষ্ঠানে কায়কোবাদ স্যার রাজবাড়ির ছেলেমেয়েদর একটা সম্যা দিয়েছিলেন। আমার সমস্যাটার কথা মনে আছে। সমস্যাটা এরকম-
জনাব আবেদ ও বেগম আবিদা আরো ৯টি দম্পতিকে রাতের খাবারে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে (তার মানে মোট ২০ জন)। সবাই আসার পর একটা পরিচয় পর্ব হল। মানে সবাই সবার সঙ্গে করমর্দন করতে পারে, নাও করতে পারে। তবে, স্বামী/স্ত্রী কিন্তু স্ত্রী/স্বামীর সঙ্গে করমর্দন করতে পারবে না। করমর্দন শেষে বেগম আবিদা সবার কাছে জানতে চাইলো উনি কতজনের সঙ্গে করমর্দন করেছেন। তাতে সবাই একটা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বলল। বলতে হবে জনাব আবেদ আর বেগম আবেদ কতজনের সঙ্গে করমর্দন করেছে?
তো হয়ে যাক সমাধান। এই ফাঁকে আমরা রাজবাড়ি পৌছে যাবো।