
আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ দল
আজ (২ ডিসেম্বর) থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ডেগু শহরে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড। এই প্রথমবারের মতো সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য এখন পথে রয়েছে ৯ সদস্যের বাংলাদেশ দল, ৬ জন শিক্ষার্থী ও ৩জন শিক্ষক। ২ তারিখে স্থানীয় সময় রাত ৯টায় তাদের সেখানে পৌছানোর কথা রয়েছে। এই যোগদানের মাধ্যমে, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা আমাদের আর একটি কর্মকাণ্ডের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছি। সংশ্লিষ্ট সকলকে তাই জানাই কৃতজ্ঞতা।
আইজেএসও-তে বাংলাদেশ টিম পাঠানোর কথা প্রথম ভাবে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের সমন্বয়কারী বায়েজিদ ভুইক্রা জুয়েল। ২০১২ সালে জুয়েল আমাকে একদিন জানায় যে আইজএসওতে বাংলাদেশের টিম পাঠানোর কথা ভাবতে। এরপর আমি সেখানে যোগাযোগ করি এবং ভাবতে থাকি করমন করে এটা হতে পারে। তবে, কোন কুল কিনারা হয়নি।
তারও অনেক আগে থেকে একটা চিলড্রেন সায়েন্স কংগ্রেস করার কথা আমি ফেসবুক নোট আর আমার ব্লগে লিখে পরিকল্পনা করেই যাচ্ছিলাম। তবে, যেহেতু স্পন্সর নাই তাই আর সাহস হয়নি। ২০১৩ সালে কংগ্রেসটাকে পথে নামিয়ে দেওয়ার কাজটা করলেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান। তাঁর দেওয়া রসদ নিয়ে আমরা চিলড্রেন সায়েন্স কংগ্রেসে নেমে পড়ি। সেই কংগ্রেসের দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমি যাই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মার্কেটিং হেড আজম ভাই-এর অফিসে। আজম ভাই জানতে চাইলেন – আমাদের কোন স্পন্সর আছে কী না। আমি বললাম নাই। উনি আমাকে বসিয়ে রেখে গেলেন কোথায় জানি। ফিরে এসে বললেন – ওনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। ২০১৩ সালের কংগ্রেস হয়ে যাওয়ার পর আমাদের অনেক সাহস হল। অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগের দেওয়া প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ধার করে আমরা ১০ম আইজেএসওতে আমাদের দুইজন পর্যবেক্ষককে পাঠিয়ে দিলাম। তখনও আমি জানতাম না এই ধার কেমনে শোধ করবো। বুয়েটের ড. ফারসীম মান্নান আর ব্র্যাকের ফারহানা মান্নান ভারতে গিয়ে আমাদের আইজেএসও-র মেম্বারশীপ নিয়ে আসলো।
২০১৪ সালে আইজেএসও হল আর্জেন্টিনায়। আমাদের আর সাহসে কুলালো না।
এর মধ্যে ২০১৫ সালের কংগ্রেস করার আগেভাগে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের টপ ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন হল। আমাদের স্পন্সরও ছুটে গেল। তারপরও সাজ্জাদ ভাই-এর চেষ্টায় আমরা নিজেরাই এবারের কংগ্রেস করেছি।
তারপর ঠিক করলাম নিজেরাই খুবই ছোট আকারে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড করবো। কোন স্পনসর না থাকাতে আমরা ঠিক করলাম যারা নির্বাচিত হবে তারা নিজেদের খরচেই সেখানে যাবে। আমরা ধার-দেনা করে কেবল রেজিন্ট্রেশন ফী(প্রায় লাখ খানেক টাকা)টা জোগাড় করবো। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ ফ্রিডম ফা্উন্ডেশনের সহযোগিতায় আমরা ২০ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মত জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড করতে পারলাম। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে আমাদের অলিম্পিয়াডে আসলো। উৎসাহ জোগানোর জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি সিলেট থেকে আমাদের অনুষ্ঠানে হাজির হলেন।
সেখান থেকে ৪০ জনকে নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে হল অনাবাসিক ক্যাম্প। তার রেজাল্ট থেকে ১০জনকে সিলেক্ট করা হল টিম সিলেকশন ক্যাম্প থেকে। তারপর সেখান থেকে ৬ সদস্যের বাংলাদেশ টিম। ২০ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হল টিমের সদস্যদের নাম। অন্যরকম বিজ্ঞান বাক্সের সহায়তায় আমাদের রেজিস্ট্রেশন ফী টা জোগাড় হল। তারপর কয়েকজনের পাসপোর্ট ইত্যাদি করার পর ভিসা হল। এবং ১ তারিখ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স যোগে যাত্রা শুরু।
টিমের সদস্যরা হল :
তাহমিদ মোসাদ্দেক : তাহমিদ মোসাদ্দেক ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুলের দশম শ্রেনির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার সবার ছোট। বিজ্ঞান বিষয়ক যেকোন বই পড়তে ভালো লাগে। এর মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহ একটু বেশি। এর আগে জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে পঞ্চম হয়েছে সে। বড় হয়ে প্রকৌশলী হয়ে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে চায় তাহমিদ।
ফারদীম মুনির : স্যার জন উইলসন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে তার শৈশব থেকে বিজ্ঞানে আগ্রহী। মহাবিশ্বের সৃষ্টি থেকে, ব্যাকটেরিয়া জীবনে আনাগোনা – বিজ্ঞানের সব কিছুই তার কাছে অসাধারণ লাগে। ভবিষ্যতে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। ২০১৪ সে জাপানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ওয়াটার রকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
মো: ফারহান রওনক : ফারহান রওনাক বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যটালিয়ন পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনির ছাত্র। দুই ভাই ও বোনের মাঝে ছোট। ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞানে তার বেশ আগ্রহি। তার প্রিয় বিষয় বিশ্বতত্ত্ব ও কণা পদার্থবিজ্ঞান। এর আগে রওনক আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও দেশে পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, আর্থ অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছে। রওনক গল্পের বই পড়তে ভালবাসে আর ভবিষ্যতে কণা পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য কাজ ককরতে আগ্রহী
রুবাইয়্যাত ইকোলো : রুবাইয়্যাত ইকোলো” ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। সে ছোট বেলা থেকেই গণিত ও বিজ্ঞানে আগ্রহী। অতীতে সে ২০১০, ২০১১, ২০১৩, ২০১৫, সালে ‘ডাচ বাংলা ব্যাংক’ ‘প্রথম আলো’ গণিত উৎসবের আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ী। জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেষ্ট ২০১৫ সালে জাতীয় পর্যায়েও বিজয়ী। ‘সমকাল” জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০১৫ সালে পুরুস্কার লাভ করে। ‘দি ডেইলি স্টার’ ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়নশীপ ঢাকা বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করে। তার বই পড়তে অত্যন্ত ভালো লাগে। ভবিষ্যতে সে বাংলাদেশে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রেখে দেশের সেবা করার জন্য ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হতে চায়।
সালসাবিল আশরাফ : সালসাবিল আশরাফ পড়ছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল ও কলেজের দশশ ম্রেণীতে। ছোট বেলা থেকে বিজ্ঞানে তার প্রবল আগ্রহ। আগামীতে সেটি সে ধরে রাখতে চায়।
শামসাদ এরাম : ঢাকার এসএফএক্স গ্রীণ হেরাল্ড স্কুলের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামশাদ এরাম। বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর গবেষণার আগ্রহ রয়েছে তার।
আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল সবার দোয়া প্রার্থী।