হিটলারকে অগ্রাহ্য করেছেন যিনি
এই ছবিটা ভাল করে দেখুন। ইতিহাসের একটি ব্যতিক্রমধর্মী ছবি। লোকেদের হাতের অবস্থান দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি নাজী জার্মানীর কোন অনুস্ঠানের ছবি।এটি ১৯৩৬ সাল। হামবুর্গের একটি শিপউয়ার্ডে জার্মান নৌবাহিনীর নতুন একটি জাহাজের অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির নাম এডলফ হিটলার।
ভালমতো দেখুন। একজন লোককে দেখুন (বৃত্তের মধ্যে)। দুই হাত ক্রস করে দাড়িয়ে আছেন।যদিও তিনি জানেন হিটলারকে এই সম্মান না দেওয়ার ফলে তার জীবনও বিপন্ন হতে পারে।
ভদ্রলোকের নাম অগাস্ট ল্যান্ডমেসার। ১৯৩১ সালে তিনি হিটলারের নাজি পার্টিতে যোগ দেন একটা ভাল চাকরির জন্য এবং শিপইয়ার্ডে চাকরি পান। কিন্তু ১৯৩৩ সালে তার পরিচয় হয় ইরমা একলার নামে এক ইহুদি মহিলার সঙ্গে যাকে তিনি বিয়ে করেন। নুরেমবার্গের আইন অনুসারে তখন নাজিদের ইহুদি পরিণয় নিষিদ্ধ। কাজে ল্যান্ডমেসারকে নাজি পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়। ১৯৩৫ সালে ইনগ্রিড নামে তাদের একটি মেয়ে হয়। এর এক বছর পরেই হিটলারের ঐ অনুষ্ঠানে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন তিনি।
এরপরই তিনি টের পান যে এই পরিস্থিতিতে দেশে থাকা নিরাপদ নয়। কিন্তু পালাতে গিয়ে ধরা খান। বিচার অনুষ্ঠানে তাকে বলা হয় ইরমার’র সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করলেই তিনি রেহাই পাবেন। কিন্তু তিনি রাজী হোননি। কাজে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। সে সময় তার গর্ভবতী স্ত্রী ইরমাকে পাঠানো হয় আর একটা ক্যাম্পে যেখান তিনি তার দ্বিতীয় মেয়ে আইরিনের জন্ম দেন। তারপরই তাকে তার মেয়েদের থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। কোন এক ক্যাম্পে ইরমার মৃত্যু হয়।
ক্যাম্প থেকে বের হয়ে অগাস্ট বউ-মেয়েদের খোজ করে তাদের কোন হদিস করতে পারেনি। তারও অজানা জায়গায় মৃত্যু হয়।
এরকম আরও ঘটনার মতো এই বিদ্রোহের কথাও অজানা থেকে যেতো। কিন্তু অগাস্টের মেয়ে আইরিন ঠিকই এগুলো খুঁজে বের করেন এবং বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন ১৯৯৬ সালে।
২০১৮ সালে জার্মানী ও অস্ট্রিয়া এই ফ্যাসিস্ট স্যালুট নিষিদ্ধ হয় এবং যারা কিনা Sieg Heil! শ্লোগান দেয়ে তাদের তিন বছর পর্যন্ত কারাবাসের আইন তৈরি করা হয়।
অন্যায় অসত্যের কাছে কভু নত নাহি শির
ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর