আসমানীর চরে
আমি যখন ছোট, তখন কোন এক বছর বড় দাদার বাড়িতে গিয়ে একটা মোটা বই দেখে সেখানেই পড়তে শুরু করি। পিন্টু চাচা (আনোয়ার হোসেন পিন্টু, পূর্বকোণের সাহিত্য সম্পাদক) সেটি আমাকে তখন পড়তে দেন। সম্ভবত আনন্দমেলার সেই পূজাবার্ষিকী দিয়ে আমার সঙ্গে সত্যজিৎ রায়, দুই সমরেশ, মতিনন্দী কিংবা শীর্ষেন্দুর পরিচয়। বাসায় আনার ফলে আমরা সবাই, মানে আমি, ভাইয়া আর মা তিনজনই সেটা পড়েছি এবং তখন থেকে আনন্দমেলা হয়ে যায় আমাদের বাসার নিয়মিত পত্রিকা। তার আগে পর্যন্ত আমাদের বাসার কিশোর পত্রিকা হলো সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ সম্পাদিত কিশোর বাংলা।
তো, সেটাতেই “গোঁসাইবাগানের ভুত” নামে শীর্ষেন্দুর একটি উপন্যাস ছিল। এর পরের বছর থেকে আমরা অপেক্ষাতে থাকতাম কখন পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা আমাদের বাসাতে আসবে। শীর্ষেন্দুর অদ্ভুত সুন্দর অদ্ভুতুড়ে উপন্যাসগুলোর কোন কোনটা আমার কয়েকবার করে পড়া হয়ে যেত। গোঁসাইবাগানের ভুতের মধ্যে ছিল আমাকে আপ্লুত করা সেই লাইন – বুকুন, তুমি অঙ্কে তের।
এই লাইনটা যে কতো শক্তিশালী ছিল সেটা আমি টের পেয়েছি এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট পরীক্ষায় যখন ইংরেজি প্রথম পত্রে সাফল্যের সঙ্গে ফেল করেছিলাম। তখন দুই বিষয় পর্যন্ত ফেল করলে এসএসসি পরীক্ষা দিতে দিতো। আমিও সেই হিসাবে সুযোগ পাই।
ভুত আর অন্যগ্রহের প্রাণী এবং নানানরকম মেটাফিজিক্স আর বিভ্রম নিয়ে শীর্ষেন্দুর সেই বইগুলো আমি এখনো পড়ি, সুযোগ পেলে, নতুন যে কোনটা।
গত কয়েক বছর ধরে আবার পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা চোখে পড়লে কিনে আনছি। ৪০ বছর আগের লেখকদের অনেকেই নেই। পুরানোদের মধ্যে কেবল শীর্ষেন্দুই আছেন।
গতকাল বাতিঘর থেকে কিনে এনেছি এবারেরটা। এনে রাত জেগে পড়ে শেষ করলাম শীর্ষেন্দুর নতুন উপন্যাস “আসমানীর চরে”।
সেই অসাধারণ রূপকল্প, কথার পিঠে কথা চড়ানো কিন্তু শাদামাটা ভাবে উপস্থাপন। কাল রাতে আবার ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম।
আর সকালে উঠে ভেবেছি আচ্ছা, উনি কেমন করে লিখেন? কতো সহজে কতো অবলীলায় এমন কিছু লিখে দ্যান মনে হয় সত্যিকারের ঘটনা লিখেছেন। মোটেই কল্পনা মনে হয় না।
আসমানীর চরের গল্পটা লিখে দিতে চাই না। কারণ তাতে যারা পড়বে তারা হতাশ হয়ে যেতে পারে। কাজে সেটা থাক।
আমার মতো যারা পুরানো আদমী তারা পড়তে পারে, নতুনরাতো পারেই।
আগামী কয়েকদিন আনন্দমেলা পড়ার চেষ্টা করবো। জানি না কতটুকু পড়া যাবে।