এ আর খান স্যার – আমার প্রিয়তম শিক্ষকের একজন
আমার প্রজন্মের অনেকের চেয়েই আমি মনে হয় অনেক ভাগ্যবান। ছোটবেলা থেকে যাদের কথা জানতাম, যাদের বই পড়েছি, যাদেরকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে হা হয়ে থাকতাম তাদের অনেকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে করে দিয়েছেন। এরমধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন এমন জুহুরুল হক স্যার, আবদুল্লাহ আল মুতী স্যার, আলী আসগর স্যার, জামিলুর রেজা স্যার, জাফর ইকবাল স্যারসহ অনেকের নামের একটা তালিকা আমি করতে পারি। এদের সঙ্গে আর একজন মানুষ আমাকে বটবৃক্ষের ছায়া দিয়ে রাখতেন। আনওয়ারুর রহমান খান যে এ আর খান স্যারের পুরো নাম এটা আমি প্রথম জানতে পারি ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে।
২১২ জন অভিযাত্রী নিয়ে, মাছরাঙ্গা নামে একটা লঞ্চ নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে। উদ্দেশ্য শতাব্দীর শেষ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা। এ আর খান স্যার আমাদের নেতা এবং মধ্যমনি। স্যারের জন্য একটা আলাদা কেবিন ছিল। তবে, স্যার সেখানে যানইনি। বেশিরভাগদের জন্য যে জায়গা, সেই ডেকে নিজের আস্তানা গেড়েছিলেন। তো, একদিন রাতে আমরা খেলছিলাম কে কী করবে জাতীয় খেলা। তো, একটা চিরকুট তুলে শাওন (এখন ডাক্তার) পড়ল – আনওয়ারুর রহমান খান, গান গাইবেন তবে পরে কী হবে তার দায়িত্ব নিতে পারবেন না! আমরা প্রথম বুঝি নাই। পড়ে একজন মনে করাই দিল, আরো এ তো আমাদের স্যার!!!
স্যার এমনই ছিলেন। শিশুর সারল্য নিয়ে সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন তবে নিজের আদর্শ ও বিজ্ঞান মনস্কতার জায়গাটা থেকে সরতেন না।
শুক্রবার (২২মে) দুপুরে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শাহাদত পারভেজ অঞ্চল আমাকে ফোন করে জানান লন্ডনে স্যার একটা এক্সিডেন্ট করেছেন। আমি যেন যোগাযোগ করি।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারণ এর মাত্র তিনদিন আগে রংপুরে আমরা শুরু করেছি সিটি ব্যাংক প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসব। সেটার যে উপদেষ্টা পরিষদ এ আর খান স্যার তার সভাপতি। ৫ মে শিক্ষামন্ত্রী ঐ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। সেই অনুষ্ঠান শেষে স্যার যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলেন- শুক্রবার আমি লন্ডন চলে যাবো। আশাকরি তোমার ফাইনালের আগে ফিরতে পারবো।
স্যার চলে যাওয়ার পর আমার মনে পড়ে সার্টিফিকেটের জন্য স্যারের স্বাক্ষরতো রাখা হয়নি। স্যারকে ই-মেইল করলাম। এর মধ্যে আমাদের প্রথম দুইটা অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি প্রায় সমাপ্ত। কোন যোগাযোগ না হওয়াতে আমরা সহ-সভাপতির স্বাক্ষরে সাময়িকভাবে সার্টিফিকেট ছাপিয়ে ফেললাম। যেদিন রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হব তার আগেই স্যারের ছোট মেয়ে (নিশাত শরীফ)র ই-মেইল পায়, স্যারের স্বাক্ষরসহ। পরে স্যারের একটা নোট – Dear Munir, Hope you have got my scanned signature. Hope it will work. Let me know how the program progresses. I am well, hope so are you all. Best wishes. – A. R. Khan.। জবাবে লিখেছিলাম স্যার আমরা ভাল আছি। ১৯ তারিখে রংপুরে শুরু করবো।
৫ তারিখের পর এটাই স্যারের সঙ্গে আমার শেষ যোগাযোগ।
অঞ্চলের কাছ থেকে খবর পেয়ে স্যারের মেয়ে আর জামাতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। এই ক’দিন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আর গতকাল সকালে জেনেছি স্যার আর আমাদের মাঝে নেই।
বাংলাদেশের বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ আন্দোলনরে অন্যতম পথিকৃত, দেশের জেষ্ঠ্য জ্যোতিবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. এ আর খান স্যার ২৫ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪.৫০ মিনিটে লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন)।
লন্ডন প্রবাসী ড. খানের ছোট মেয়ে নিশাত শরীফের সঙ্গে আমার কয়েকদিনের কথোপকথন থেকে জেনেছি গত বৃহস্পতিবার ২১ মে, তিনি ও তার বাবা লন্ডনের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। আকাশ পরিস্কার থাকায় ড. খান তাঁর মেয়েকে ছোট বেলার মত তারা চিনিয়ে হেটে হেটে একটি পাতাল রেল স্টেশনে যান। সেখানে তারা প্রথমে একটি রেলে চড়ে রওনা দেন। পরে আর একটা স্টেশনে ট্রেন বদলের দরকার হয়। “বাবা বললেন, চল আমরা ঐটাতে যাই।” এই বলে ড. খান প্ল্যাটফর্মের অন্যদিকের ট্রেনের দিকে ছুটে যান। কিন্তু ঐ ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ায় ট্রেনের দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ড. খান চিৎ হয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংজ্ঞাহীন পড়েন। তাত্ক্ষণিকভাবে তাঁকে লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনদিন পর গতকাল ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্যারের কোন সম্পূর্ণ জীবনী আমি যোগাড় করতে পারি নি। শাহজাহান মৃধা বেনু ভাই আমাকে একটা ছোট্ট জীবনী পাঠান। গতকাল দিনভর চেষ্টা করে আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করি।
বাংলাদেশের বরেণ্য জ্যোতিবিজ্ঞানী এ আর খান স্যারের জন্ম ১৯৩২ সালে সেইসময়কার ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে প্রভাষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ১৯৬০ সালে কলম্বো প্ল্যান ফেলো হিসাবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিকাল ল্যাবরেটরি ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে গবেষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে লন্ডনের ইমপেরিয়েল কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। শিক্ষকতা করার সময় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তারপরই তিনি দেশে ফিরে আসতে মনস্থ করেন এবং বিলাতে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দেন। অনেকেই তাকে থেকে যেতে বলেছিলেন কারন সেখানে উন্নতমানের গবেষণার সুযোগ পাওয়া যাবে যা ঢাকায় পাওয়া যাবে না। স্যার পাত্তা দিলেন না। ১৯৬৭ সালে ফিরে যোগ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেই সময়ের ড. খানের ছাত্র বর্তমানে ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স বিভাগের চেয়ার পারসন অধ্যাপক সিদ্দিক-ই-রাব্বানী স্যার স্মরণ করেন, “এ আর খান স্যার আমাদের অপটিক্স পড়াতেন এবং সবাইকে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে গবেষণা করার জন্য আহবান জানাতেন। এই কারণে তিনি আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। প্রতিবার দেশে আসলে সাইকেল চালিয়ে আমাদের বিভাগে আসতেন।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার খবর পাওয়ার পর থেকে মন খারাপ করে আছেন। স্যার এবং ইয়েসমীন ম্যাডাম দুইজনই এ আর খান স্যারকে শ্রেণীকক্ষের শিক্ষক হিসাবে পেয়েছেন। জাফর স্যার জানালেন মাত্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির সভায় ড. খানের সঙ্গে তার দেখা হয়। “৮৪ বছর বয়সে স্যার এখনও সাইকেল চালান, পায়ে হেটে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ান। আমাদের অনেকের চেয়ে স্যারের স্বাস্থ্য অনেক ভাল। সেই স্যার হঠাৎ করে চলে যাবেন এটা মেনে নেওয়াটা কস্টের।” জাফর স্যার বললেন স্যার যে কেবল শিক্ষকতা করেছেন তা নয়, বিজ্ঞান আর জ্যোতিবিজ্ঞানকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্টা করতেন।
পরে এ আর খান স্যার ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে (অধুনা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ) চলে যান এবং ১৯৯২ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই শিক্ষকতা করেন।
দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও বিশেষ করে জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চ্চার প্রসারে ড. খান আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। ১৯৭৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈসা খাঁ সড়কে তাঁর বাসভবনের গ্যারেজে প্রতিষ্ঠা করেন অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠনের। এটি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে দেশের প্রথম বিজ্ঞান সংগঠন, এখনো কাজ করে চলেছে। জহুরুল হক স্যার, আল মুতী স্যারদের সঙ্গে মিলে সেই সময় গঠিত হয় বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ। স্যার তার প্রেসিডিয়ামের সদস্য।
হ্যালির ধুমকেতু ৭৬ বছর পর পর পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে। ১৯৮৫ সালে সেরকম একটা সময়। সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশেও কারো কারো মনে আগ্রহ হ্যালিকে নিজ চোখে দেখার। সেই সময় স্যার একটা উদ্যোগ নিলেন। দেশে জ্যোতিবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার কোন সংগঠন নেই। কাজে ১৯৮৪ সালে তিনি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। স্যার সেটার সভাপতি ছিলেন, গতকাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এফ আর সরকার জানান – ড. খানের নেতৃত্বেই দেশে জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চ্চা এবং বিশেষ করে শিক্ষাথীদের মধ্যে আকাশ দেখার আগ্রহের সূচনা হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে হ্যালির ধুমকেতু পর্যবেক্ষনের জন্য গঠিত জাতীয় কমিটির তিনি ছিলেন আহবায়ক। তাঁর দেওয়া আট ইঞ্চি লেন্স দিয়ে দেশের সেই সময়কার সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপটি তৈরি করেন সিরাজুল হোসেন যা হ্যালির ধূমকেতু দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
১৯৯৫ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের হিরণ পয়েন্ট ও পঞ্চগড় থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ দলেরও নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৯৫ সালে সূর্যগ্রহণের সময় তাঁর নেতৃত্বে গৃহীত পর্যবেক্ষণের উপাত্ত সেই সময় ব্রিটিশ এস্ট্রোনমিকাল এসেসিয়েশনের জার্নালে মূল উপাত্ত হিসাবে ছাপা হয়।
বাংলাদেশের কোন দৈনিক পত্রিকায় রাতের আকাশের আকাশচিত্র ছাপানোর প্রথম উদ্যোগ ছিল আমাদের গণিতবিদ আবদুল জব্বার স্যারের। দিনি ১৯৭৩ সাল থেকে (সম্ভবত) দৈনিক বাংলায় আকাশচিত্র ছাপাতেন। স্যারের অসুস্থতার সময় সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮৮ সালে আলমুতী স্যারের তত্ত্বাবধানে ফরহাদ (মাহমুদ) ভাই এর সম্পাদনায় দৈনিক সংবাদে শুরু হয়ে দেশের কোন দৈনিক পত্রিকায় প্রথম সাপ্তাহিক বিজ্ঞান পাতা- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সেই পাতার জন্য আকাশের ম্যাপ বানানো শুরু হল। এ আর খান স্যার আকাশের তথ্যগুলো দিতেন এবং লেখাটা লিখে দিতেন। তা দেখে আমাদের সিজার আকাশ চিত্রটি আঁকতেন ট্রেসিং পেপারে। মাসের প্রথম ও তৃতীয় রোববার তা ছাপা হতো দৈনিক সংবাদে।
তখন ই-মেইল ছিল না। স্যারের বাসায় গিয়ে বা ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সেই লেখা যোগাড় করতে হতো। আমি সেই সময় বুয়েটের ছাত্র। প্রদায়ক হিসাবে কাজ করি দৈনিক সংবাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতায়।
ফরহাদ ভাই একদিন আমাকে পাঠালেন স্যারের বাসায় লেখাটা আনার জন্য। আমি স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার তখন বের হচ্ছিলেন। আমার পরিচয় জানলেন। তারপর অপেক্ষা করালেন এবং তার ডাটসান গাড়িতে করে আমাকে ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলেন। স্যারের গাড়িটি ছিল ক্রিম কালারের। পরে এটিকে লাল রঙ করা হয় এবং বেশিরভাগ মানুষই লাল গাড়িতে স্যারকে চালক হিসাবে স্মরণ করেন। সেই যাত্রাতে স্যারের কথাবার্তায় আমি খুবই অনুপ্রাণিত হই। সেই থেকে আমি স্যারের সঙ্গে কোন না কোন ভাবে যুক্ত হয়ে আছি।
ইউনেস্কো ২০০৯ সালকে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বছর হিসাবে পালন করে। প্যারিসে সেই উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অবসর গ্রহণের পর থেকে বিগত ২২ বছর ধরে দেশে বিজ্ঞান ও জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চ্চার প্রসারে কাজ করে চলেছেন। গণিত অলিম্পিয়াড শুরু সময় আমি যাদের কাছে গিয়েছিলাম এবং সময় অসময়ে যাদের কাছে ছায়ার জন্য যেতাম তাদেরই একজন এ আর খান স্যার।
২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাত ভাই-এর পাল্লায় পড়ে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষকদের ক্যাম্পের ধারণাটা পোক্ত হতে শুরু করে। কই আর যাবো গেলাম স্যারের বাসায়। বললেন – নেমে পড়। আমি তো আছি।
তারপর কিছু নির্দেশনাও দিলেন। সত্যেন বসু বিজ্ঞান শিক্ষক ক্যাম্পের সূচনা হয় ২০১২ সালে। সেখানে প্রথম ক্লাসটা নেওয়ার জন্য সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন, সময় মত। এখন এটি নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আমার আর মতি ভাই-এর দীর্ধদিনের একটা ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান মেলা আয়োজনের যা প্রচলিত বিজ্ঞান মেলা থেকে কিছুটা হলেও অন্যরকম হবে। সেটা করতে দীর্ধ সময় লাগবে। এই বছর আমরা সিটি ব্যাংক -প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসব শুরু করেছি। যথারীতি আমি গিয়ে হাজির হয়েছি স্যারের বাসায়।
“থাকতে হবে? আচ্ছা থাকবো।”
আমার কোন আবদারে কখনো না বলেননি।
১৯৯৫ সালে হিরণ পয়েন্ট থেকে ফেরার পর সদরঘাট লঞ্চ ঘাটে নেমে যাবার সময় আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন আমি যেন কেবল বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখিতে না থাকি। বিজ্ঞান নিযে কিছু সাংগঠনিক কাজও যেন করি।
স্যারের একটা স্বপ্ন এখনো অপূরণ রয়ে গেছে। সেটি আমাদের একটি জাতীয় মানমন্দির। ২০১৩ সালে আমরা কয়েকটা লোকেশন চেক করার জন্য যাবো ঠিক করেছিলাম কিন্তু রাজনীতিবিদরা সেটা তখন করতে দেয়নি। ভেবেছিলাম এবার স্যার ফিরলে সেই কাজটা আবার শুরু করবো।
আমরা ভাবি এক, কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন ভাবেন অন্য কিছু!
যেখানেই থাকুন স্যার, আমাদের মাঝে সব সময় শিশুর সারল্য নিয়ে বেঁচে থাকবেন আর দেখবেন আমার মত আপনার অধম শিষ্যরা মোটা ভুড়ি নিয়ে হাসফাঁস করতে করতে একটা কিছু করার চেষ্টা করছে।
[এ আর খান স্যারের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। কোনদিন যদি আল্লাহ তৌফিক দেন তাহলে হয়তো লিখতে পারবো}