চলুন অদম্য জাহিদের পাশে দাঁড়াই
জাহিদকে আমি প্রথম কখন দেখেছি সেটা মনে করা মুশ্কিল। তবে, দেখার আগে থেকে তাঁর কথা আমি শুনেছি। ২০০৭ সালে আমরা বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক থেকে সারাদেশে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে জনপ্রিয়করার জন্য দৌড়ঝাপ করা শুরু করি। সেই সময় আমাদের জাকারিয়া আমাদেরকে একটা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং নিয়ে একটা বুকলেটও লিখে দেয়। তখন আমাদের একটা অফিস ছিল কাটাবনে। সেখানে আমরা প্রথম সেমিনার করি। সিলেট থেকে জাকারিয়া আসে। এরপর আমরা নানান শহরে দৌড়াতে থাকি।
আমার বলার মধ্যে আমি বলি কেবল সিএসই-র লোক নয়, অন্যরাও আউটসোর্সিং করতে পারবেন। দক্ষতা থাকলে সবার জন্য এই কাজটা করা সম্ভব। আমার নিজের একমাত্র কাজও কিন্তু কন্টেন্টের যা থেকে আমি ২৩০০ ডলার আয় করেছিলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে আউটসোর্সিং-এর প্রচারণায় আমরা আমাদের সেই সময়কার আইসিটি মন্ত্রী মহোদয়কে পেয়ে যাই এবং তার সঙ্গে আমার সারাদেশে ঘুরে বেড়ানোর একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। তখন আইটির বাইরে আউটসোর্সিং-এ যারা ভাল করছে তাদেরকে আমি খুঁজে বেড়াতাম। আর সেভাবে প্রথম জাহিদুলের কথা জানতে পারি।
জাহিদুল ইসলাম, ফেসবুকে তাঁর প্রোফাইলটি জাহিদ অচিনমানব নামের। ও আমাদের সকলের থেকেই একজন ব্যতিক্রমী। ২ বছর বয়স থেকে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েও শারিরিক প্রতিবন্ধি হয়ে পড়েন। আমি প্রথম হুইল চেয়ারেই দেখেছি। তবে, জাহিদ তাঁর প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেন। হয়ে ওঠেন একজন অকুতোভয় ফ্রিল্যান্সার।
২০১১ সালে আমি এটিএন নিউজে টেকনিউজ নামে একটা আইটি অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি। সেখানে আমরা চেস্টা করতাম সফলদের কথা বলতে এবং তখন জাহিদের ওপর একটি দুইমিনিটের প্রতিবেদনও আমরা তৈরি করি।
ঐ ভিডিওটি আমি সারাদেশে, যেখানে যেখানে আমি গিয়েছি, সেখানে আমি দেখিয়েছি। কেবল এই কথা বলার জন্য যে, উৎসাহ, উদ্যম এবং দক্ষতা থাকলে যে কেও এগিয়ে যেতে পারে।
২০১১ সালে ই-এশিয়ার সময় থেকে আমরা একটা ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স শুরু করি। ২০১২ সালের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে জাহিদ সেই কনফারেন্সের মঞ্চে উঠলেন।
২০১৩ সালে বেসিস তাঁকে ঢাকা জেলা ক্যাটাগরিতে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডে পুরস্কৃত করে।
বাবা-মার কোলে চড়ে জাহিদ স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করেন এবং হু্ইল চেয়ারে বসেই সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাশ করেন। পরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পড়েছেন।
নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে জাহিদ এগুচ্ছিলেন, পরিবারের পাশে দাড়ালেন এবং ক্রমাগতভাবে প্রতীক হয়ে উঠলেন ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের কাছে। তার অনুপ্রেরণায় অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং-এ যুক্ত হলেন।
জাহিদ তাই নিজের গন্ডির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বাবা-মার অসীম ত্যাগ ও জাহিদের মেধা ও শ্রম যখন তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই তিনি ‘SCOLIOSIS’ (মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যাওয়া) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে জাহিদের মেরুদন্ড ৫৫ ডিগ্রী বাঁকা হয়ে গেছে। ফলে এখন পিঠে ও ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা এবং বাঁকা মেরুদন্ড হৃদপিন্ডে আঘাত করছে। এতে প্রচন্ড বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। জাহিদ এখন ১০ মিনিটও বসে থাকতে পারেন না।
দিনে দিনে জাহিদের মেরুদন্ড আরও বেশি বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই তার সুস্থতার জন্য দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জাহিদের পরিবার খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছে জাহিদের এই চিকিৎসার জন্য ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকা প্রয়োজন।
জাহিদের বাবা একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার। তার একার পক্ষে এতো টাকা ব্যয়ভার বহন করা একেবারেই অসম্ভব। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারকে সহায়তা করারটাও জাহিদের বন্ধ হয়ে গেছে কারণ ফ্রিল্যান্সিং দুরের কথা, কম্পিউটারের সামনে কিছুক্ষণ বসেই থাকতে পারেন না জাহিদ।
জাহিদ কি এই লড়াই-এ হেরে যাবেন? আমাদের চোখের সামনে?
১৭ লক্ষ টাকা আসলে কত টাকা?
১৭ হাজার লোকের প্রত্যেকে ১০০ টাকা করে দিলেই কিন্তু ১৭ লক্ষ টাকা হয়ে যায়। এই ঢাকা শহরে প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি বার্গার বিক্রি হয়! মহাখালী থেকে বনানী হয়ে আর গুলশান ১ নম্বর হয়ে বসুন্ধরায় জাহিদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে যে ফাস্টফুডের দোকানগুলো আছে সেখানে প্রতিদিন (শুক্র-শনিবার বাদে) প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার বার্গারই বিক্রি হয়! কাজে আমরা সবাই চাইলেই, মহান আল্লাহ তায়ালার অপার রহমতে, জাহিদকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারবো।
কাজটা সহজ। ফেসবুকে একটা পেজ আর একটা ইভেন্ট খেলা হয়েছে এই ফান্ড রাইজিং-এর কাজটা সমন্বয় করার জন্য। আপাতত জাহিদের বাবার ডাচবাংলা ব্যাংকে সরাসরি টাকাটা জমা দেওয়া যাবে। দেওয়া যাবে বিকাশ নম্বরে। আমাদের জাবেদ মোর্শেদের পেপাল একাউন্টেও টাকা দেওয়া যাবে।
গতকাল ২ আগস্ট পর্যন্ত জাহিদের বাবার একাউন্টে মোট ৮০ হাজার টাকা জমা হয়েছে।
যারা ব্যাংকে যেতে চান না তারা দরকার হলে আমাকে এসে টাকাটা দিয়ে যেতে পারবেন। তবে, সহজ হল দেশের আনাচে-কানাচে ডাচবাংলা ব্যাংকের বুথ আছে যেখানে একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া যায়। কিছুক্ষণ আগে আমি ঠিক এই কাজটা করেছি। এটি খুবই সহজ। তবে, নিজ নিজে বুথে চলে যাবার আগে আশেপাশের জনকে জিজ্ঞাষা করতে পারেন। দিনশেষে সবারটা একসঙ্গে দেওয়া যাবে।
নিশ্চয়ই আমাদের সকলের সাধ্যমতো সহায়তায় আল্লাহ তায়ালা তরুণের প্রতি সদয় হবেন।
জাহিদ আবার স্বপ্ন দেখতে পারবে নিজেকে স্বাবলম্বী করার, পরিবারকে সহায়তা করার ও দেশের ভিন্নভাবে সক্ষমদের স্বাবলম্বী করার লড়াই-এ।
======
জাহিদের বাবার ডাচ-বাংলা ব্যাংক একাউন্ট নম্বর
Account Owner: Md. Salauddin,
A/c No: 103.151.31213
Dutch-Bangla Bank Ltd.
Banani Branch.
SWIFTCODE : DBBLBDDH103
==BKash================
BKash No: 01854112647
=====paypal================
jabedmorshed@yahoo.com
=========================
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন।