ভাঙ্গা লেজার পয়েন্টার থেকে বিশ্বের বিকিকিনির বড় হাট
পিয়েরে (পারভিজ) মোরাদ অমিডিয়ারের জন্ম ফ্রান্সের প্যারিসে যদিও তার আদি বাড়ি ইরানে। ছোটবেলাতে ডাক্তার বাবা ও শিক্ষক মায়ের সঙ্গে আমেরিকাতে চলে যাওয়া। পড়ালেখা করে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজকর্ম করে। ব্যবহৃত, ভাঙ্গাচোরা ও সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিষপত্র যোগাড় করা তার শখ। কিন্তু এমন সব জিনিষের খোঁজ পাওয়া মুশ্কিল। তখন ভাবলো একটা ওয়েবসাইট বানাই ফেলি। তাহলে যারা এমন বাতিল জিনিষ বিক্রি করবে তাদের খোজ পাওয়া যাবে আবার ‘আমার মতো যারা এসব সংগ্রহ করে’ তাদেরও লাভ হবে। ১৯৯৫ সালের লেবার ডে’র ছুটিতে পিয়েরে একটা নিলাম সাইট তৈরি করেন। এখানে যে কেউ বিক্রির জন্য ভাঙ্গাচোরা, ব্যবহৃত নানা কিছু তালিকা করতে পারবে। আর আগ্রহী কেউ কিনে নিতে পারবে।
সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৯৫। অকশনওয়েব নামে তার সাইট আত্মপ্রকাশ করে। পিয়েরে নিজের একটা ভাঙ্গা লেজার পয়েন্টার প্রথমে সেখানে লিস্ট করে বিক্রির জন্য। পিয়েরেকে হতবাক করে ঐ দিনের শেষে কানাডিয়ান মার্ক ফ্রেশার তার এই ভাঙ্গা লেজার পয়েন্টাররা কিনে নেয় মাত্র ১৪.৮৩ ডলারে! পিয়েরে চমকে গেল। ভাবলো তাহলে তো এই সাইট যারা বিক্রি করতে চায় ( সেলার-বিক্রেতা) ও যারা কিনতে চায় (বায়ার-ক্রেতা) তাদের জন্য একটা মুক্ত প্ল্যাটফর্ম হবে।
কিছুদিনের মধ্যে তার সাইটের ব্যান্ডউয়িডথ শেষ হয়ে গেল, ট্রাফিকের চাপে। দেখা গেল হোস্টিং বাড়ানোর জন্য আরও ২৫০ ডলার লাগবে। অমিডিয়ের ভাবলো নিজের পকেট থেকে দেবো? তার চেয়ে যারা বেঁচা-কেনা করছে তাদের থেকে নেই। নিয়ম করলো তার সাইটে বিক্রির জন্য কোনো কিছু লিস্টিং করলে ১০ সেন্ট ফী দিতে হবে আর বিক্রি হলে বিক্রি মূল্যের অতি সামান্য অংশ।
ঐ সামান্য টাকা দেখা গেল প্রথম মাসে পিয়েরেকে এনে দিল ১ হাজার ডলার। পরের মাসে ২ হাজার ৫০০ ডলার। তারপরের দুইমাসে যথাক্রম ৫ ও ১০ হাজার।
বছরখানেক পর, ১৯৯৬ সালে পিয়েরে তাঁর প্রথম কর্মী ক্রিস আগারপাওকে নিয়োগ দেন। ক্রিসের কাজ হলো অনলাইন অপারেশন সমন্বয় করা। সেই মাস শেষে অকশনওয়েবের শুরু থেকে মোট বিক্রি দাড়ালো ৭.২ মিলিয়ন ডলার।
পিয়ের তার চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুলটাইম নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে শুরু করলো। আর জেফ স্কলকে নিয়ে আসলো প্রেসিডেন্ট হিসেবে। অক্টোবরে স্যান জোসের ১০২৫ হ্যামিল্টন এভিনিউতে ছোট্ট একটা স্যুইট ভাড়া করলেন পিয়েরে আর স্কল।
শুধু ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে ঐ সাইটে ২০ লক্ষ (২ মিলিয়ন) আইটেম হোস্ট হলো। এর আগে পুরো ১৯৯৬ সালে এই সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ।
শুরু করার দুই বছর পর অমিডেয়ের নতুন একটা ডোমেইন echobay.com নিবন্ধনের চেষ্টা করে জানতে পারে সেটা নাই। কাজে তার নিজের দ্বিতীয় পছন্দ, আগেরটার সংক্ষিপ্তরূপ, eBay.com। কোম্পানি তাদের নাম পরিবর্তন করে হলো ইবে ডট কম।
পিয়েরে ভাবলেন কিছু বিনিয়োগ পেলে সুবিধা হয়। ভেসেমার ভেঞ্চারওয়ালারা তাকে শুনিয়ে দিল – স্ট্যাম্প? কয়েন? কমিক বই? তুমি নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছো। যাহোক পরে ৬.৭ মিলিয়ন দিতে রাজী হলো বেঞ্চমার্ক ক্যাপিটাল।
১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে পিয়েরে ম্যাগ হুইটম্যানকে নতুন প্রেসিডেন্ট ও সিইও হিসেবে হায়ার করলো। ততোদিনে কোম্পানিতে ৩০ জন কর্মী, ৫ লক্ষ ব্যবহারকারী। সে মাসে মাত্র ৪.৭ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয়!
সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখে ইবে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করলো পিয়েরে রাতারাতি বিলিওনিয়ার হয়ে গেলো। প্রথম দিনে ১৮ ডলারের শেয়ারের দাম উঠলো সাড়ে ৫৩ ডলার।
আর বেঞ্চমার্ক ক্যাপিটালের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হলো মাত্র ৫০,০০০%!
দুইহাজার সাল থেকে শখের সংগ্রাহকদের জায়গা থেকে সরে এসে সব কিছুর বেচাকেনার সাইটে পরিণত হয়। তার চেয়ে বড় কথা ইবে হয়ে উঠে নতুন স্টার্টআপ কেনা ও বেচার জায়গাও।
গত ২৪ বছরে ইবে মাত্র ৫৩টি কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে। এগুলোর কোনো কোনোটা আবার বেঁচেও দিছে।
২০০২ সালে অক্টোবরের কেনে পেপল।
২০০৫ সালে ২.৫ বিলিয়নে কেনে স্কাইপি (২০০৮ সালে সেটা বিক্রি করে মাইক্রোসফটের কাছে মাত্র ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে)।
আজ, ২২ অক্টোবর ২০২২ সালে ইবে’র বাজার তহবিল হলো মাত্র ২১ বিলিয়ন ডলার।
[বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপের সিকুয়েল “আরও বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ” এর সম্পাদনার কাজ শুরু করেছি আবার। আশা করি এবার দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে পারবো। বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপের ফীডব্যাক অনুসারে কিছু পরিবর্তন করেছি কাঠামো ও কন্টেন্টে। আল্লাহ ভরসা]