আমার বইমেলা ২০১৯-৯ : কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া – ডিজিটাল বাংলাদেশের মানবিক উপাখ্যান

Spread the love

আমার বইমেলা ২০১৯-৮ :হয়ে ওঠো একজন প্রবলেম সলভার- সবই করি হাতে কলমে!

ফ্রিল্যান্স, ফ্রিল্যান্সিং এসবের প্রতি আমার ব্যক্তিগত কিছু পক্ষপাত আছে। ২০০৭-৮ সালে বিডিওএসএন থেকে আমরা যখন ফ্রিল্যান্সার নিয়ে কাজ শুরু করি, এক শহর থেকে আর এক মহরে ঘুরে বেড়াই, তখন অনেকে আমাদের ঠাট্টা করতেন। তবে, তরুণরা খুব তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে। সেই সময় যাকারিয়া একটা বই লিখেছিল যেটি আমরা সব কর্মশালা, সেমিনারে দিতাম। যা হোক ২০১১ সালে বেসিস ফ্রিল্যান্সারদের পুরস্কৃত করা শুরু করে, সেই বছর ও তার পরের বছর ই-এশিয়া ২০১১, পরের বছর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ যেহেতু আমার হাতেই সূচনা হয় তাই দুটোতেই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং-কে সামনে রাখি। নিয়ে আসি বিশ্বসেরা মার্কেটপ্লেসের পলিসেমেকারদেরও। পরে, আইসিটি ডিভিশন এ নিয়ে ঘরে বসে বড় লোক, লার্নিং আ্নিং এসব প্রজেকট শুরু করে। কাজে আমরা আমাদের কাজ শেষ করে সেখান থেকে সরে আসি। তবে, ভালবাসা আছে আগের মতোই।

রাহিতুল ইসলাম রুয়েলর কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া বইটি আমাকে পড়তে হয়েছে ছাপা হওয়ার আগে। কারণ আমি এর ফ্ল্যাপের কথাটা লিখেছি। তারপর ছাপার পরও পরেও পড়েছি।
বইটির কাহিনী এরকম – নিজের সময় ফুরিয়ে আসছে টের পেয়ে বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন, তাড়াহুড়া করে। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট নাদিয়া আনন্দের সঙ্গে বড় হয়েছে। সবার আদরে, আহলাদে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি এসে টের পেলে জীবন এতো সহজ নয়। শাশুড়িতো ধরেই নিলেন উনি পেয়েছেন বিনে পয়সার কাজের লোক। সবার কাপড়কাঁচা থেকে শুরু করে রান্না, শাশুড়ির সেবা সবই করতে হয় বাবা-ভাই-এর আদরের নাদিয়াকে। হাত খরচ হিসেবে বাবা তাকে প্রতিমাসে যে টাকাটা দেয় সেটাও শাশুড়ি ঝাপটা দিয়ে নিয়ে যায়।
এমনভাবে, বাংলার আর দশটি মেয়ের মতোই নীরবে-নিভৃতে শেষ হতে পারতো নাদিয়ার জীবন। কিন্তু বাঁধ সাধে স্বামীর সংসারের একটি ছোট্ট যন্ত্র। একান্নবর্তী সংসারের জোয়াল টানতে টানতে হয়রান নাদিয়ার স্বামী এখন আর তার কম্পিউটারে বসতে পারে না। সেই কম্পিউটারনিয়ে ভাবে নাদিয়া।
কেউ যেন টের না পায় সে ভাবে শুরু হলো তার আত্মপ্রচেষ্টা। গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখে নাদিয়া শুরু করলো তার ফ্রিল্যান্সিং জীবন। দেখতে দেখতে পেয়ে গেল প্রথম বড় কাজও। লোগো ডিজাইনের কাজ করতে করতে তার হয়ে গেল সুনাম। প্রথম ১০০ ডলার তুলে সেটি তুলে দিল শাশুড়ির হাতে। চমকে গেল সবাই এবং তারপর থেকে চমকাতেই থাকলো।
“এরপর তাহারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল” – এমন লিখতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু বিধিবাম। এমন কিছু হরো যে, নাদিয়ার সুখ স্থায়ী  হল না

এই বইটা পড়া দরকার দ্বিবিধ কারণে- এক হলো মেয়েরাও যে ফ্রিল্যান্সার হতে পারে সেটা বোঝার জন্য এবং আরও বোঝার জন্য যে, ফ্রিল্যান্সিং-এর ব্যাপারটা মেয়ের হাতের মোয়া নয় – সেটা জানার জন্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশের এক মানবিক উপাখ্যানটি সবাই পড়লেই তবে তা স্বার্থক হবে।

কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া
রাহিতুল ইসলাম
অদম্য প্রকাশ

 

Leave a Reply