চলে গেলেন ওয়ার্ড প্রসেসরের জননী
ইভলিন বেয়ার-এ-জেন ৯৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। এ মহিলার কথা বেশিরভাগ লোকেরই জানার কথা নয়, কারণ তিনি খুভ জনপ্রিয় চলেন না। কিন্তু, তিনি এমন একটা সময়ে কম্পিউটার সায়েন্স ওয়ার্ল্ডে বিচরণ করেছেন যখন ঐ ক্ষেত্রে বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকজন মেয়েই ছিল। ওদের কেউ মার্গারিটা হ্যামিল্টনের নেতৃত্বে চাঁদে রকেট পাঠিয়েছে আর ইভলিন বেয়ার-এ-জেন আলাদা আলাদা কাজের জন্য কম্পিউটার বানিয়েছেন। ইভলিনের কামানের গোলার ফায়ারিং রেঞ্জ হিসাব করেছে. কর্পোরেশনের হিসাবের খাতা সংরক্ষণ করেছে, ব্যাংকের লেনদেন করেছে। এমনকী বলা হয়ে থাকে ইভলিনের হাতেই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইন রিজার্ভেশন সিস্টেম গড়ে উঠেছে।
তবে, ইভলিনের মূল কৃতিত্ব বিশ্বের প্রথম সত্যিকারের ওয়ার্ড প্রসেসর বানানো। ১৯৬৯ সালে ইভলিন তাঁর কোম্পানি রেডাকট্রন কর্পোরেশন থেকে ডেটা সেক্রেটারি নামে যে মেশিনটি তৈরি করেন সেটিই আমাদের মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের আদি ভার্সন। তাঁর কোম্পানির সদর দপ্তর ছিল লং আইল্যান্ডে।
সে সময় আমেরিকার মোট ওয়ার্ক ফোর্সের ৬ শতাংশই ছিল সেক্রেটারি। রেডাকট্রন ওয়ার্ড প্রসেসর ছিল তাদের জন্য এক আশির্বাদ। ওজনে ভারি, খুবই স্লো এবং প্রচুর শব্দ উৎপাদক হলেও এটি এডিট, ডিলিট, কাট আর পেস্ট করতে পারতো! আইবিএমের মেকানিক্যাল সিস্টেমের ইলেকট্রনিক টাইপ রাইটার (আমার প্রথম কর্মস্থলে একটা ছিল)-এর বদলে ইভলিনেরটা প্রথম সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে। আইবিএমের সঙ্গে লড়াই করে সে সময় ১০ হাজার ওয়ার্ড প্রসেসর মেশিন তিনি বিক্রি করেন প্রতিটি মাত্র ৮০০০ ডলার করে। ১৯৭৬ সালে ফিনান্সিয়াল কারণে কোম্পানি বেঁচে দিয়েছেন।
সম্ভবত (আমি নিশ্চিত নই) ইভলিন প্রথম নারী টেক উদ্যোক্তা ও সিইও।
রাশিয়া থেকে আসা ইহুদি বাবা-মার ঘরে ১৯২৫ সালের ১২ এপ্রিল ইভলিনের জন্ম।
কম্পিউটার সায়েন্স রিলেটেড তাঁর ৯টি পেটেন্ট আছে।
২০১১ সালে লস এঞ্জেলস এর ইন্টারন্যাশনাল ওম্যান ইন আইটির হল অব ফেমে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।
ওয়ার্ড প্রসেসরের জননীর প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা।
রেস্ট ইন পিস, ইভলিন।
দি ওয়ার্ল্ড, উইল রিমেম্বার ইউ টিল ইটস এন্ড!