কোথায় এখন ওরা ১১ জন?
এই ছবিটা ভাল করে খেয়াল করতে পারেন। কাউকে চিনেছেন?
প্রায় সবাই নিচের, বাম দিকের ঝাকড়া চুলের লোকটাকে চেনার কথা। বিল গেটস। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম।
আর কাউকে চেনা যায়। ও, আচ্ছা, পল এলেন। ছবিতে সামনে, নিচের ডানদিকের লোকটা। আর একজন প্রতিষ্ঠাতা।
বাকী ৯ জনকে চেনার কথা নয়, কারণ তাঁরা খুব বেশি পরিচিতি পাননি বিল বা এলেনের মতো।
এটি ১৯৭৮ সালের একটি গ্যাং ছবি। সেই সময়কার স্টার্টআপ মাইক্রোসফট তাদের অফিস সিয়াটলে নিয়ে যাবার আগে আগে এই ছবিটা তোলা হয়েছে। এদের একজনের রেডিও কনটেস্টে জেতা উপলক্ষে এই ছবি তোলা হয়।
তখনো কেউ জানতে না এ ১১ জন হবেন নতুন একটি ইতিহাসের অংশ।এরা হলো মাইক্রোসফটের প্রথম ১১ জন কর্মী। ওরা এখন কে কোথায় আছে? সেটা নিয়ে বিজনেজ ইনসাইডার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিল গেটস
মাইক্রোসফট থেকে উপার্জিত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দান খয়রাত করে বেড়াচ্ছেন। শূণ্য থেকে গড়ে তোলা মাইক্রোসফট তাঁকে বিশ্বের এক নম্বর ধনী করে রেখেছিল দীর্ঘদিন। আমার হিসাবে সম্ভবত বিল বিশ্বের একমাত্র ধনী যিনি নিয়মিত তার সম্পত্তির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দান করে দেন ভাল কাজে। এদেশে জন্মালে তিনি হাজী মোহাম্মদ মহসিন হতেন। তার এ দান খয়রাত বিল মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। আমাদের দেশের বিকাশ কিংবা আনলিমিটেড লাইব্রেরিতে ঐ টাকা পাওয়া যাবে।
আন্দ্রে লিউইস
আন্দ্রে হয়েছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। লিখেন ফিকশনও। মাইক্রোসফটে তিনি ছিলেন টেকনিক্যাল রাইটার। মানে ডকুমেন্টেশনের কাজ ছিল তার। বোঝা যাচ্ছে সেখান থেকে তাঁর লেখালেখি। ১৯৮৩ সালে মাইক্রোসফট ছেড়ে দেন। মোটামুটি ২ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি তাঁর আছে বলে জানাচ্ছি এপি।
মারিয়া উড
মারিয়া ছিলেন মাইক্রোসফটের বুক কিপার। মারিয়া ছবির আর একজনকে বিয়ে করেন এবং এই ছবি তোলার দুই বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার বক্তব্য ছলি – মাইক্রোসফটে মেয়েদের মর্যাদা নাই। পরে মাইক্রোসফট অজানা টাকায় মামলাটা মেটায়। ফলে, মারিয়াকে আর চাকরি-বাকরি করতে হয়নি।
পল এলেন
ক’দিন আগে মারা গেলেন। বিলের মতো তিনিউ দুই হাতে টাকা উড়িয়েছেন। তবে, তাঁর ক্ষেত্র আলাদা। তিনি বিনিয়োগ করেছেন খেলাধুলায়, স্টার্টআপে এবং নানান কিছুতে। ফোর্বসের হিসাবে তিনি বিশ্বের ২১তম ধনী ছিলেন। বিশ্বের অন্যতম বড় ইয়টেরও মালিক।আপনি দেখবেন এই ছবিতে এলেনের লাল দাড়ি আছে। কিন্তু আমার মতো গুগলে সার্চ দিয়ে যতো ছবি পাবেন তার বেশিরভাগগুলোতেই কিন্তু লাল দাড়ি পাওয়া যাবে না।
বব ও’রিয়ার
বব ছিলেন দলের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক। এই গণিতবিদ নাসার এপোলো মিশন কন্ট্রোলে কাজ করেছেন। বব তাই মাইক্রোসফটের প্রথম প্রধান গণিতবিদ। তাঁর হাতেই ডিস্ক অপারেটিং সিসটেম (DOS) রি-কোডিং হয়েছে। পাইরেটস অব সিলিকন ভ্যালিতে ডসের গল্পটা দেখা যায়। ১৯৮৩ সালে মাইক্রোসফট ছেড়ে তিনি তার টেক্সাসের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। সেখানে একটা খামার তৈরি করেন। কমবেশি ১০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদশালী বব এখন।
বব গ্রিনবার্গ
বব গ্রিনবার্গ ১৯৭৮ সারে একটা রেডিও কনটেস্টে জেতার পর এই ছবিটা তোলা হয়েছিল। তার হাতেই BASIC প্রোগ্রামিং ভাষা নতুন জীবন পায়। ১৯৮১ সালে পারিবারিক কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি মাইক্রোসফট ছেড়ে যান। তারপরও অনেক সফটওয়্যার বানিয়েছেন।
মার্ক ম্যাকডোনাল্ড
মার্ককে বলা যায় বেচারা। মাইক্রোসফট যখন বড় হতে শুরু করে তখন বেঁকে বসেন মার্ক। তিনি একটি ছোট কোম্পানিতে থাকতে চান। কাজে মাইক্রোসফট ছেড়ে দেন তিনি। তিনিই মাইক্রোসফটের প্রথম বেতনভোগী কর্মী। মাইক্রোসফট ছেড়ে তিনি প্রথমে যান পল এলেনের আর একটা কোম্পানি এসিমেট্রিক্সে। তারপর সেখান থেকে যান ডিজাইন ইনটেলিজেন্স নামে একটি ডিজাইন কোম্পানিতে। কিন্তু বিধি হলে বাম, কী ই বা করতে পারে রাম। ২০০০ সালে ডিজাইন ইনটেলিজেন্সকে অধিগ্রহণ করে মাইক্রোসফট। বেচারা মার্ককে এভাবে আবার “বড়” মাইক্রোসফটে ফিরতে হয়েছে। এপির হিসাবে তিনিও মিলিয়নিয়ার।
গর্ডন লেটভিন
গর্ডন বিলের পর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে মাইক্রোসফটে ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি কোম্পানি ছেড়ে যান। গর্ডন ছিলেন প্রোগ্রামার। চাকরি ছেড়ে তিনিও একটি খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে ২০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। পরিবেশবাদীদের টেকা-টুকা দিয়ে সাহায্য করেন।
স্টিভ উড
স্টিভ উড, মারিয়া উডের স্বামী। ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফট ছেড়ে দেন এবং কিছুদিন পল এলেনের সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন। পরে নিজেই ওয়্যারলেস সার্ভিস কর্পোরেশন (এখন সিঙ্গেলপয়েন্ট নামে পরিচিত) গড়ে তোলেন। এখন সেটার চেয়ারম্যান ও ১৫ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে।
বব ওয়ালেস
১১ জনের মধ্যে সবার আগে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া লোকটির নাম বব ওয়ালেস। ২০০২ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। মাইক্রোসফট ছাড়ার পর তার আগ্রহ দেখা গেছে সাইকেডেলিক ড্রাগে। তবে, কুইকসফট নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিও তিনি গড়ে গেছেন।
জিম লেইন
১৯৮৫ সালে মাইক্রোসফট ছাড়ার সময় জিম ছিলেন প্রজেক্ট ম্যানেজার। মাইক্রোসফটে থাকতে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো ইনটেলের সঙ্গে মাইক্রোসফটের পার্টনারশীপ। পরে তিনি নিজে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি গড়ে তোলেন।