ইমোশনাল মার্কেটিং-৫ : কেন কাজ করে? কেনু?
ইমোশনাল মার্কেটিং-৪ : হাটি হাটি পায়ে পায়ে দেখো না
ইমোশনাল মার্কেটিং কাজ করে কারণ মানুষের অনুভূতি আছে, তার প্রকাশ হয়। এবং এগুলো প্রকাশ হয় বলে মানুষ নানা কিছুতে দুঃখ পায়, আনন্দ পায়। এমনকী তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয়গুলোও সে আনন্দের সঙ্গে দেখে কিংবা দুঃখ পায়। সিনেমার কথা ভাবুন। সিনেমার করুণ দৃশ্য দেখে মানুষ ব্যথিত হয়— কান্না করে। এগুলোই আমাদের প্রকৃতি। এই একটা কারণই কিন্তু যথেষ্ট ইমোশনাল মার্কেটিংকে ব্যাবহার করার জন্য। তবে ইমোশনাল মার্কেটিং যে কাজ করে সেটার আরো অনেক কারণ আছে। প্রথমে একটা কারণের কথা আমরা বলতে পারি সেটা হলো ইমোশনাল মার্কেটিং এর ফলে ‘প্রথম ইম্প্রেশন’ বা ‘প্রথম দেখা’টা ভালো করার একটা সুযোগ পাওয়া যায়।
নিজের কথা ভাবুন। কোনো মার্কেটের কোন দোকানটা বা কোন মানুষটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে? খুবই সহজ, যেটি আলাদাভাবে আপনাকে ইমপ্রেস করতে পারে। মনে করুন, একটা প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপনে তাদের প্রোডাক্টটা ভালো, তাদের প্রোডাক্ট কি কি দিয়ে তৈরি এবং সেগুলো যে কত ভালো তার বর্ণনা দিল, আর আরেকটা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনটা দেখে আপনি হাসতে শুরু করলেন অথবা সেটা দেখে আপনার চোখে পানি এসে পড়ল। কোনটিতে আপনি বেশি ইমপ্রেসড হবেন?
দ্বিতীয়টাতেই তো, তাই না? কাজেই ফার্স্ট ইম্প্রেশন যেটা কিনা এক সেকেন্ডের একটা ভগ্নাংশের মধ্যে ঘটে, সেটা নিয়ে কিন্তু আপনার কাজ করতে হবে। এখানে আপনাকে ইমোশনাল মার্কেটিং অনেক হেল্প করবে কারণ ইমোশনাল মার্কেটিং মানুষকে সাহায্য করে তাদের হৃদয় দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। মানুষ কিন্তু সব সময় টাকা পয়সা হিসাব করে বা যুক্তি দিয়ে কিন্তু তার কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেয় না। তাকে আপনাকে জয় করতে হবে সে যেন যুক্তির জায়গাটা অতিক্রম করেও আপনার পণ্য, আপনার সেবা গ্রহণ করে হৃদয় দিয়ে। অনেক সময় আপনি একটা অনলাইনে জিনিস কেনেন তাইনা। অনলাইনে জিনিস কিনলে কিভাবে সেটি আপনাকে সাহায্য করবে? কীভাবে সেটি কেনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন আপনাকে বাধ্য করে অথবা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে? সেটা খেয়াল করেন, যে বিজ্ঞাপন আপনার মনকে ভালো করে, আপনাকে আনন্দ দেয় সেটি কিন্তু অনেক বেশি কাজ করে।
ডাভ (Dove) একটা সাবান, শ্যাম্পুর ব্র্যান্ড। এর একটা বিজ্ঞাপন আমি কয়েকদিন থেকে দেখছি, মনোযোগ দিয়ে।
https://www.youtube.com/watch?v=7DdM-4siaQw
অনেকের হয়তো গ্রিম ভাই-দের এটা রূপকথার গল্পের কথা মনে আছে। সেখানে রাজকন্যা একজন রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে কিন্তু তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। রাজপুত্রের চেহারা সবার মনে নেই। তাহরে তারা তাকে চিনবে কীভাবে? তখন রাজপ্রসাদে ঢোকার জন্য দুইটি রাস্তা বানানো হয়। একটি ঝলমলে, সোনার এবং অন্যটি সাদামাটা। বলুন তো – রাজপুত্র কোন রাস্তাটা বেঁছে নেবে?
ডাভের বিজ্ঞাপন দেখে আমার এই গল্পের কথা মনে পড়েছে। খুব একটা সহজ বিজ্ঞাপন। একটা এক্সপেরিমেন্টাল। এক্সপেরিমেন্ট হল তাদের প্রতিষ্ঠানে ঢোকার জন্য ২টি দরজা রেখেছেন মেয়েদের জন্য। একটাতে লেখা সুন্দর (Beautiful), অন্যটিতে লেখা গড়পড়তা(Average)। দেখা গেল বেশিরভাগ মহিলারা ওই বিউটিফুল দরজাটা দিয়েই যান। কাজেই এই যে একটা ছোট্ট স্টাডি থেকে দেখা গেছে যে মানুষ ইমোশনকে ইনফরমেশন এর ওপরে স্থান দেয়।
এ নিয়ে একটা চমৎকার বই লিখেছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার নইরু সায়েন্সের অধ্যাপক এন্তোনিও ডামাসিও। দেকার্তে এরর নামের এই বইটিতে তিনি দেখিয়েচেন কেনাকাটাতে মানুষ পকেট বা বিবেকের চেয়ে হৃদয়কে উর্ধে স্থান দেয়। তিনি বলছেন আবেগ আসরে আমাদের সব, আবার বলছি সব, সিদ্ধান্তে কোন না কোন ভূমিকা রাখে। আমরা যখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাই, তখন এই বিষয়ের পোরানো কোন অভিজ্ঞতা আমাদের তাড়িত করে। এ কারণে কোন বিকল্পটা আমরা বেছে নেবো সেটার ব্যাপারে আমাদের আগে থেকেই একটা প্রেফারেন্স তৈরি হয়ে যায়। ব্র্যান্ড ম্যানেজারটা এটা জানে। জানে বলেই তারা ক্রেতার মনোজগতে স্থায়ী হতে চায়। ডামাসিও একধাপ এগিয়ে কনজিউমারদের আচরণকে দালিলিক করেছেন। তার পর্যবেক্ষণ ও ফলাফল হচ্ছে-
- ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রিসোন্যান্স বা এফএমআরআই করে দেখা গেল যখন কোন ব্র্যান্ডের মর্যাদা তিদে হয় তখন লোকে মুখ্যত ইমোশনকে (ব্যক্তিগত প্রাপ্তি, অভিজ্ঞতাকে ) ব্র্যান্ড সংক্রান্ত তথ্য (যেমন এট্রিবিউট, ফিচার বা ডেটা) থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়
- বিজ্ঞাপনের প্রভাবের ক্ষেত্রেও একই রকম তথ্য। টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়া বিজ্ঞাপনে প্রোডাক্ট কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতা যতোনা বেশি আবেগের দাম দেয়, তার চেয়ে অনেক কম দেয়ে বিজ্ঞাপনের মূল কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তুকে। টিভির বেলায় এটি তিনগুন এবং প্রিন্টের বেলায় দ্বিগুন!!!
- যে সব ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের সঙ্গে আবেগের একটা সম্পর্ক তৈরি করতে পারে তাদের সাফল্য বেশি। হালাল সাবানের কথা ভাবেন। এটি এমনকি আস্থার ব্যাপারের চেয়েও বেশি।
আবেগের কারণেই কিন্তু মানুষ ব্র্যান্ডেড পণ্য কিনতে ভালবাসে। না হলে হুদাই কেন টাকা বেশি দেয়?
আরেকটা বিষয় আমরা খেয়াল করতে পারি।
চৌদ্দশ সফল ক্যাম্পেইনের বিশ্লেষন করে দেখা গেছে যেগুলোতে ইমোশনাল কনটেন্ট আছে সেগুলো অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ কাজ করে (১৬ বনাম ৩১%)।
ইমোশনাল মার্কেটিং মানুষকে সাহায্য করে হৃদয় দিয়ে শপিং করতে, মন দিয়ে নয়!
2 Replies to “ইমোশনাল মার্কেটিং-৫ : কেন কাজ করে? কেনু?”