যাদের কোটি টাকা লাগবে!!!
সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে বেশ কটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি সক্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে চার বছরের পুরানো একটি এরই মধ্যে ১১টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। আরো দুইটিরও সেরকম বিনিয়োগ আছে। একটি সিলিকন ভ্যালি ভিসিও এসেছে। সিঙ্গাপুরের একটি আসবে আসবে করছে।
তো, এটি নিশ্চয়ই খুব ভাল খবর। এরই মধ্যে দেশে একুইজিশনের এক্সামপলও তৈরি হয়েছে এমনকি একটি ওয়েবস সাইট বিক্রি হয়েছে লক্ষাধিক টাকায়!
তারমানে আমাদের ইকো সিস্টেমে নতুন একটা উপাদান জোরেসোরে আসছে। আমাদের উদ্যোক্তারা কি প্রস্তুত?
প্রশ্নটা করছি এই জন্য যে, আমাদের উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ কেন জানি বিনিয়োগের চেয়ে ঋণের প্রতি বেশি ঝুকে থাকেন। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আমি বুঝি যে, এর ফলে তাঁরা নিশ্চিত হোন যে, ব্যবসাটা তাঁর হাতছাড়া হবে না। সে কারণে ঋণের প্রতি আগ্রহ! আর একটা ঐতিহাসিক কারণ হল আমাদেরতো আগে এমন ভিসি ছিলই না। কাজে কেও সেটা ভাবেও নাই।
কিন্তু এখন তো এসে পড়ছে। কাজে যাদের আগ্রহ আছে তারা মাঠে নেমে যেতে পারে।
প্রশ্ন হল ভিসিরা আসলে কোথায় বিনিয়োগ করে?
আরে কোথায় আবার। ফার্মে?
-ঠিক না। আসলে ওরা বিনিয়োগ করে ফার্মের উদ্যোক্তাদের পেছনে। এবং যখন তারা এরকম একজন উদ্যোক্তা খুঁজে পান তখন তার সব কাগজপত্র নিজেরাই তৈরি করে নেন।
হ্যা। মানে হল কাউকে না কাউকে কিছু কাগজপত্র বানাতেই হয়।
প্রশ্নটা তোলা যায় – আপনি যদি আমার পেছনেই বিনিয়োগ করবেন তাহলে কাগজ খুঁজেন কেন?
কারণ সে কাগজের মধ্যে উদ্যোক্তাকে ‘দেখা’ যায়! সেটা কিন্তু জরুরী। অনেক সময় কাগজ দেখে কিন্তু ওনারা সময় দেন। আর আপনার সঙ্গে যদি বিনিয়োগকারীর দেখায় না হয় তাহলে আমি তাঁকে “প্রথম দেখাতেই কাত” করবেন কীভাবে?
কাজে একটু হোমওয়ার্ক করতে হবে। সাধারণত ভিসিরা কী খুঁজে আপনার মধ্যে-
- আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনা – যা করবেন বলছেন সেটা নিয়ে আপনি কতটা উত্তেজিত? আপনি কি এর পেছনে প্রায়শ আপনার নাওয়া খাওয়া দিয়ে দেন? না হলে কিন্তু মুশ্কিল।
- আত্মবিশ্বাস – আপনি কেমন? ৫ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান! কয়েকবছর আগে একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ঢাকায় ৫০টি ছোট কোম্পানির সিইওকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। কেও কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নাই। তাহরে কী হবে? উনি আপনার পেছনে এক কোটিটাকা বিনিয়োগ করবেন কিন্তু আপনি মোটেই কনফিডেন্ট না! করবেন?
- টিম – আপনার টিমটা কেমন। সিলিকণ ভ্যালিতে তো খালি বেস্ট লোকদের খোঁজা হয়। সেজন্য সেখানকার কোম্পানিগুলো হারিকেন নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায় যাতে সেরাদের সেরাদের সেরাটা তার টিমে নিতে পারে। বাংলাদেশের সেরাদের সেরা সিএসইরা তাই গুগলে চলে যায়। গুগলেতো একটা ফ্রেসই আছে – ইঞ্জনিয়ারকে জিগাও! তারমানে একটা ভাল কোম্পানি আসলে ভাল লোকদের যোগফল। প্রশ্ন হচ্ছে যে কিনা এখনো কিছু করে নাই সে আগামীতে কেমন করে কাজ করবে? আমি নিজে যখন কোন চাকরির ভাইভা বোর্ডে থাকি তখন আমি অদ্ভুত প্রশ্ন করি। আমি জানতে চাই ও কোনদিন ভলান্টিয়ার ছিল কিনা, বন্যার্তদের জন্য রুটি বানিয়েছে কিনা, পাড়ার কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অর্গানাইজ করেছে কি না নিদেন পক্ষে এপার্টমেন্টের দারোয়ান হটাৎ অসুস্থ হরে তাকে হাসপাতালে নিযে গেছে কী না। যার এর এবা এর মত কোনটার অভিজ্ঞতা নাই তার ব্যাপারে আমার মন সায় দেয় না। আমার খালি মনে হয় যে জীবনের প্রথম ২৫ বছর কারো জন্য কিছু করলো না সেকি পরের ২৫ বছর কোম্পানির জন্য কিছু করবে? আমি দ্বিধান্বিত হই। ভিসিরাও সেরকম আপনার মধ্যে কিছু বেসিক জিনিষ দেখতে চায়। মানে আপনার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা। আপনার এখন ৫ জনের টিম। কিন্তু ওরা যদি আপনাকে এককোটি টাকা দেয় তাহলে আপনার লোক হবে ৫০ জন। সেটা চালাতে পারবেন তো?
- মার্কেট – আচ্ছা যেখানে কাজ করছেন যেটা কী বড় সেক্টর? নাকি মাত্র কয়েক কোটি টাকার বাজার? ভিসিরা লম্বা সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে ভালবাসে। কাজে তাদেরকে ছোট কিছুতে আগ্রহী করে তোলা মুশ্কিল। মার্কেটের আকার এবং ভবিষ্যতের আকার দুইটাই কিন্তু জরুরী। কাজে ভেব চিন্তেই আগাতে হবে।
- টাকা – টাকা যে চান সেটা নিয়ে পরিকল্পনা কি? কোমন করে নিজেকে বড় করবেন? আছে কিছু মাথায় না টাকা পেলে চিন্তা করবেন!!!
আমি ভাবছি যাদের ভিসি’র টাকা দরকার এরকম আগ্রহী কয়েকজনকে নিয়ে টিম করা যায় কিনা। তারপর তাদেরকে তৈরি করা যায় কিনা। কারণ দলে দলে ভিসিরা এসে যদি দেখে আমরা তৈরি না তাহলে হয়তো এই ট্রেনটা আমাদের মিস হয়ে যতে পারে।
আরো একটা কাজ করা যায় ভিসি ফান্ড আর একুইজিশনের কয়েকটা কেস স্টাডি করা যাতে আগ্রহীদের সেটা কাজে লাগে।
মুশ্কিল হচ্ছে আলসেদের দিয়ে তো কিছুই হয় না!
One Reply to “যাদের কোটি টাকা লাগবে!!!”