গণিত বিষয়ক আমার পাঁচটি বই

Spread the love

গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করার পর আমাদের প্রথম উপলব্ধি হলো আমাদের ছেলে-মেয়েরা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গণিতের বিশাল জগৎ সম্পর্কে তেমন জানে না। এই জানানোর সহজ বুদ্ধি হলো বই লেখা।  সেই থেকে আমরা গণিত উৎসবকে সামনে রেখে নিয়মিত বই লিখে যাচ্ছি। আমি অবশ্য ২০১৬ সালের পর আর বই লিখিনি। এখন আবার নতুন করে গণিতের বই লিখতে শুরু করেছি। সেই কাজ করতে গিয়ে মনে হরো এই ক’বছরে গণিত অলিম্পিয়াডে নতুন শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়েছে যারা হয়তো বা এই রিসোর্সগুলো সম্পর্কে জানে না। তাই আবার ৫টি গণিতের বই নিয়ে অনলাইন বই-এর দোকান রকমারি একটি বিশেষ কালেকশনের ব্যবস্থা করেছে। আগ্রহীরা সেখান থেকে একসঙ্গে কিনতে পারে ২০% ছাড়ে।  প্রত্যকেটি বই-এর ছবিতে আমি আলাদা লিংকগুরোও দিয়ে দিলাম যাতে কেউ ইচ্ছে করলে সেই বইটিও সংগ্রহ করতে পারে।

অঙ্কের ধাঁধা ধাঁধায় অঙ্ক

এটি একটি সংকলন পুস্তক। ভোরের কাগজে কাজ করার সময় কোন একদিন মুন্নী (মুন্নী সাহা) ইষ্টিকুটুম পাতার জন্য লিখতে বলে। ইষ্টিকুটুম ছোটদের পাতা। লিখতে হবে ছোটদের জন্য। আমি ভেবেছিলাম লিখতে হবে বিজ্ঞানের কিছু। কিন্তু, মুন্নীর ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। একটি ধারাবাহিক রচনা, গণিত নির্ভর, মজার গল্পের ঢঙ্গে। সেইভাবে আমি এটা সাজালাম।

গল্পের বোকা বনে যাওয়া পাত্রটি হলাম আমি, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সেই বয়ানে লেখা ‘গল্পে গল্পে ধাঁধা’। সমসাময়িক সব বিষয় সেখানে আসতো : যমুনা ব্রিজ, জনতার মঞ্চ কিংবা নতুন চালু হওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস। গল্পের প্রয়োজনে সেখানে হাজির হতেন কাজি নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, প্রকৃতি বিজ্ঞানী নওয়াজিস আহমেদ প্রমূখ! গল্পগুলোকে বই আকারে প্রকাশের বুদ্ধি দেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম। সে সময় আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমার বড় ছেলের জন্মের। তার প্রথম জন্মদিনে বাবার উপহার হিসাবে এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে শুরু করি। তখন কি জানতাম আমার বড় ছেলে জাওয়াদ হাসান খুব বেশি দিন এই পৃথিবীতে থাকতে আসেনি! গল্পে গল্পে ধাঁধা প্রকাশ করেন আলমগীর ভাই (অবসর)।

তিনিই আমাকে জোর করেন এর পরের পর্ব লেখার জন্য। ততদিনে, আমার গল্পের মূল ক্যারেকটার পাল্টে গেছে। আমার ছেলে বুমবুম এই গল্পের নায়ক। তার গল্পের কথক তার খালা। ধাঁধায় ধাঁধায় গল্প তাই খালা-ভাগনীরর গল্প। গল্পে গল্পে ধাঁধা ও ধাঁধায় ধাঁধায় গল্পে অনেক বিশ্বখ্যাত ধাঁধা বাংলাদেশের পটভূমিতে লেখা হয়েছে।
এরপর যখন প্রথম আলো’র গণিত ইশকুল প্রকাশিত হয় তখন সেখানে আরও কিছু এমন লেখা প্রকাশ হলো। সেগুলো নিয়ে একটি বই করার জন্য তাম্রলিপির প্রকাশক স্নেহাস্পদ রনির যন্ত্রণা। কাজে হলো ‘অঙ্কের ধাঁধা, ধাঁধার অঙ্ক’। ততদিনে আগের দুটোর কপিও শেষ। কাজে তিন বই মিলে হলো আমার ধাঁধা সংকলন! এই সংকলন বের করার পেছনে একটি তাগিদ হলো গণিত অলিম্পিয়াড। গণিতের যতো বই বের হয়েছে তার বেশির ভাগই বড়দের জন্য। ছোটরা যারা ত্রি-ফোরে পড়ে তারা কি দিয়ে শুরু করবে? তাদের জন্য এই বই!

যারা গণিত ভালোবাসে

প্রথম আলো’র গণিত ইশকুলের প্রকাশণা শুরুর পর থেকে সেখানে বিনোদন গণিতের নানা বিষয় যুক্ত করা, মাঝে মধ্যে ছোটদের পাঠ্য বিষয়কে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার জন্য আমাকে এক গাদা লেখা লিখতে হলো। এই বইটি গণিত ইশকুলের সেই সব লেখার সংকলন। একটা দুটো আছে বিজ্ঞান প্রজন্মের। এই বইটি যারা ৫ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তাদের জন্য। এটিতে আমি কিছু গাণিতিক বিষয় ব্যাখ্যা করেছি যা তাদের গাণিতিক যুক্তি আর শৃঙ্খলা বুঝতে সহায়তা করবে। সেভাবে লেখা হয়েছে।এখানে আমি কিছু অনেক পুরাতন টেকনিক আলাপ করেছি। যেমন ম্যাজিক স্কয়ার কত সহজে বানানো যায়। কিংবা মৌলিক সংখ্যার ছক। এগুলো ছাড়াও নেপিয়ারের অস্থির মতো ব্যাপারটাও আছে। এখানে একটা লেখাতে আমি বাংলাভাষার সবচেয়ে বড় পেলিনড্রম শব্দটি লিখেছি। আমার এই বইতে আমি কয়েকটা সমস্যার সমাধান করেছি একাধিক পদ্ধতিতে। মূলত এটা বোঝানোর জন্য যে, গণিতের সমস্যা সমাধানের নানান রাস্তা আছে। যার যেমন ইচ্ছে। যুক্তি আর পদ্ধতি ঠিক হলে সব ঠিক। এই বই-এর একটা চ্যাপ্টার হলো আমার লিথুনিয়া বন্ধুর দেওয়া দুইটি সমস্যা। ঐ দুইটা সমস্যা ঠিক মতো পড়লে বোঝা যাবে চিন্তার জগৎ কেমন করে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।

গড়ের মাঠে গড়াগড়ি

একদম যারা ছোট , মানে ক্লাস ত্রি থেকে ফাইভে পড়ে, তাদেরকে কীভাবে গণিতের নানান কনসেপ্ট সহজে বোঝানো যায়? এই ভাবনা থেকে গল্পের ছলে এই বইটা লেখা। আমি আর সুবিন মিলে একটা গণিতের কোর্স করিয়ে ছিলাম ঐ বয়সের ছেলে-মেয়েদের। ওদের পড়ানোর জন্য আমার একটা নোট তৈরি করতে হল। এটি হল সেই নোটের লিখিত রূপ। পরে এটার এক্সটেনশন হিসাবে শিক্ষক ডট কমে একটা প্রাথমিক গণিতের কোর্স করিয়েছি। এখানে প্রথম নীতি থেকে আমি ব্যাপারগুলো ধরতে চেয়েছি। যেমন লসাগুর কথা বলা যাক। লঘিষ্ঠ, সাধারণ এবং গুণিতক এগুলো আলাদা করে বুঝানোর একটা চেষ্টা। উদাহরণটা আমি দিলাম একটা ছক আকারে, একটা গুণিতক টেবিল বানিয়ে। তারপর বোঝালাম সাধারণ মানে কি? তারপর সেগুলোকে গোল করলাম। তারপর বললাম এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে ছোট সেটিই ঐ তিনটি সংখ্যার লসাগু। এভাবে গড় হোক, মৌলিক সংখ্যা হোক কিংবা নেগেটিভ সংখ্যব হোক- এই াই-এর উপজীব্য। গণিত উৎসবে মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হয় তা বোঝানোর জন্য  মঞ্চে লাফালাফি করতাম। পরে দেখলাম অনেক স্যার আমার এই পদ্ধতি চালু করে দিয়েছেন। এই বই-এ সেটাও আছে।

গণিত অলিম্পিয়াডের যত প্রশ্ন

গণিত অলিম্পিয়াড হচ্ছে আজ প্রায় দুই দশক। আমরা সাফল্যের সঙ্গে ১৮টি আয়োজন শেষ করছি। প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে জানতে চায় অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন কেমন হবে। আমরা কখনো ওয়েবসাইট দেখতে বলি, কখনো পুরানো পত্রিকা দেখতে বলি। তারপরই আমরা ১০ বছরের প্রশ্ন নিয়ে এই বইটি সংকলন করেছি। এখন যারা নতুন অলিম্পিয়াড শুরু করে তাদের সহজে বলতে পারি, প্রশ্ন দেখতে চাও? এ বইটি দেখো!

পণিত অলিম্পয়াড সাধারণ পাঠ্য বই থেকে কিছুটা ভিন্ন। নমুনা প্রশ্ন থাকলে গণিত অলিম্পিয়াড সম্পর্কে ধারণা পেতে এবং গণিত অলিম্পয়াডের জন্য গ্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। সে কারণে বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ে প্রথম ১০টি গণিত অলিম্পিয়াডের গ্রশ্ন রয়েছে। আঞ্চলিক, জাতীয় ও ক্যাটাগরি অনুসারে প্রশ্ন সাজানো রয়েছে ফলে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন খুঁজে গেতে পাঠকদের সুবিধা হবে। ১০ বছরের অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন একসঙ্গে রাখা বিশাল ব্যাপার। তবে সব প্রশ্ন রাখা হয়নি। বাছাইও করা হয়েছে। অনেকই হয়তে বলবেন, প্রশ্নের সঙ্গে সমাধান দিয়ে দিলে ভালো হতো। আসলে গণিত অলিম্পিয়াড একটি আদর্শের ওগরে দাঁড়িয়ে আছে যে প্রশ্ন যেন কখনো পুরানো না হয়। সমাধান দিয়ে দিলে তাই হয়ে যেত, প্রশ্নগুলোও মলিন হয়ে যেত। বরং প্রশ্নগুলো নতুনই থাক।

প্রতিদিনই গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে নতুন ছেলেমেয়ে যুক্ত হচ্ছে। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের মেধার ওপর আমাদের বিশ্বাস অনেক, এসব মামুলি সমস্যার সমাধান তারা করতে পারবেই।

বিডিএমও প্রস্তুতি

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের মতো আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডেও আমরা কিন্তু সব সময় নতুন প্রশ্ন দেই। যে কারণে প্রতিবছরের অলিম্পিয়াডের শেষ হলে আমরা সব প্রশ্ন প্রকাশ করে ফেলি। কারণ সে তো আর আসবে না। বই থেকে বা পুরানো প্রশ্ন না দিয়ে আমরা যে নতুন প্রশ্ন তৈরি করি সেগুলো সমাধান করার বুদ্ধি কী? বুদ্ধি হলো – গণিতের মোলিক বিষয়, এর পদ্ধতি অনুসরণ করে সমস্যাকে এটাক করা। আইএমওতে ৬টা অঙ্ক করতে ৯ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়অ এর মানে হলো প্রশ্ন দেখলাম আর সূত্রানুসারে সমাধান করতে থাকলাম সেটা নয়। সমস্যাটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে, নানান দিক দিয়ে এটাকে এটাক করতে হবে। আমাদের পাঠ্য পুস্তকে এই সংস্কৃতি যোগ করা কঠিন। আবার এটা কাম্যও নয় কারণ অলিম্পিয়াডে তো সবাই অংশ নেবে না। এই বইটি জুনিয়র ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন এবং এর সমাধানের পদ্ধতি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য লেখা হয়েছে যাতে তারা নিজেদেরকে সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করতে পারে।

রকমারির লিংক সমূহ
১. https://www.rokomari.com/book/10606/gorer-mate-goragori

২. https://www.rokomari.com/book/91696/bdmo-prostuti

৩. https://www.rokomari.com/book/56695/bangladesh-gonit-olympiader-joto-prosno

৪. https://www.rokomari.com/book/31766/jara-gonit-valobase

৫. https://www.rokomari.com/book/12808/onker-dhadha-dhadhay-onko

এছাড়া ২০% ছাড়ে একসঙ্গে কিনতে চাইলে-
https://www.rokomari.com/book/215683/munir-hasan-er-5ti-gonit-boiyer-collection

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।

 

Leave a Reply