৩ ভাগ না ৯৭ ভাগ?
আমি থাকি ঢাকার এলিফেন্ট রোডে একটা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে। ৬৬টি পরিবার এখানে থাকে। গতবছর করোনার কারণে ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে এপার্টমেন্টে সব ধরণের হকারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তিনদিন পরে আমি আমার পত্রিকার হকারকে খুঁজতে বের হই। এর আগে তার ফোন নম্বরও আমার কাছে ছিল না। তো, আব্বাসকে খুঁজে পেয়ে জানলাম পত্রিকা নিয়ে ভবনের ভিতরে যাওয়া যায় না। বললাম আমার প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গেটে রেখে যেতে। সেটাই সে করতে শুরু করলো আর আমি নিয়ে আসতাম। ক’দিন পরে দেখলাম গেটে রাখা পত্রিকার সংখ্যা বাড়ছে। আব্বাস জানালো অনেকেই আমার মতো গেটে পত্রিকা রেখে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। আর যারা করোনার আগে পত্রিকা রাখতো তাদেরকে সে ফোন করে করে এই পদ্ধতির কথা জানিয়েছে!
এর বেশ কিছুদিন পরে মাছওয়ালা জামালও দেখলাম ভিতরে ঢোকার পারমিশন পেলো। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে জামালকে ফলো করলাম কয়েকদিন। দেখলাম আমাদের বিল্ডিং-এর সব ফ্লোরে সে যায় না। কিছু সুনির্দিষ্ট ফ্লোরে যায়। সেই ফ্লোরে ১/২/৩টা ফ্ল্যাটে শুধু বেল বাজায়। “এই ক’বাসাতেই কেবল আমার থেকে মাছ কেনে” – জামাল আমাকে জানালো। সে জন্য সে অন্য বাসাতে বেল বাজায় না। “ওরা যদি কিনতে চায়?” আমার এই প্রশ্নের উত্তরে জানালো – মাছের দরকার হলে বাসা থেকে গেটের দারওয়ানদের জানানো হয়। ওরাই জামালকে খবর দেয়। আমি অবাক হয়ে ভাবি, মাছওয়ালা জামাল কতো সহজে সেলস-মার্কেটিং-এর একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট জেনে বসে আছে –টার্গেটিং, রিটার্গেটিং। সে এও জানে বেহুদা সব লোককে জ্বালাতন করার কোন মানে হয় না!
ওয়াটার ওয়াটার এভরি হোয়্যার, নট এ ড্রপ ফর ড্রিংক!
আমরা অনেক সময় আমাদের পেজে/সাইটে ব্যপক লোকের আনাগোনাতে ব্যাপক খুশি হই। কিন্তু দিনশেষে যখন বিক্রিবাটার সঙ্গে ঐ সংখ্যার সম্পর্ক খুঁজতে যাই, তখন হতাশ হই। মেলাতে না লোকে গিজগিজ করলো। তাহলে কেনাকাটা কেন হলো না? এ প্রশ্ন যুগ যুগ ধরে মার্কেটারদের মাথা ব্যাথার কারণ।
চ্যাট হোমস তার বিখ্যাত দ্যা আলটিমেট সেলস মেশিন বইতে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো তার ডিমান্ড জেনারেশন পিরামিডের ব্যাখ্যা করেছেন। পিরামিডরা মোটামুটি সেলফ-এক্সপ্লেনেটরি।
দেখা যাচ্ছে যাদের কাছে আমরা পন্য বিক্রির জন্য হাজির হই তাদের ৯৭%-এরই এ ব্যাপারে বিন্দু মাত্র আগ্রহও নেই বা এতোই কম আগ্রহ যে তা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। তাহলে আমাদের কীভাবে আগানো দরকার?
এই পিরামিডের দিকে তাকিয়ে কিন্তু আপনাকে সেলসের প্ল্যান করতে হবে। কারণ আপনার সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হবে যে ৩% মোটামুটি কিনতে রাজি তাদেরকে আগে গছানো। তারপর আপনি ওপর থেকে ধীরে ধীরে নামবেন। আমার নিজের বুদ্ধি হলো পিরামিডের একেবারে নিচের লোকদের পেছনে সময় দেওয়া না দেওয়া কিংবা তাদেরকে স্বাদে ১৬ আনার বিরিয়ানি খাওয়ানোর মধ্যে কোন বেনিফিট নাই। এটুকু সিদ্ধান্তই কিন্তু আমাকে একটু হলেও এগিয়ে দেবে।
আগে যখন অনলাইন মার্কেটিং ছিল না তখন একটা অফলাইন মেলায় যতো লোক আসতো তাদের মধ্যে সলিড ৩%কে বের করা মোটেই সহজ ছিল না। এমনকি পরের ৭% বা ৩০%কেও চিনতে পারাটা ছিল জটিল। এখন কিন্তু আপনিএগুলো ট্র্যাক করতে পারেন অনলাইনে। ফেসবুক যেমন আপনার ভিজিটরদের বয়স, লোকেশন, ইন্টারেস্ট এমন নানান তথ্য দেয়। আপনি আবার পিক্সেল নামে একটা জিনিষ সেট করতে পারেন। সেটা দিয়ে এই বিভাজনটা করতে পারেন।
তাতে লাভ কী?
আমার ধারণা এর মধ্যেই আপনি লাভটা বুঝতে পারছেন। যারা আপনার ওয়োসাইটে এসে ঘোরাঘুরি করে তাদের আপনি মোটামুটি এই পিরামিডের মধ্যে ফেলে দিতে পারবেন। তাহলে পরের কাজটা সহজ হয়ে যাবে, যদি আপনি করতে চান।
এই পিক্সেল, টার্গেটিং, রিটার্গেটিং করার ব্যাপারগুলো আমাদের অল এবাউট ফেসবুক মার্কেটিং কোর্সের বিষয়বস্তু। এই কোর্সে নিবন্ধন করতে পারেন।
অথবা আপনি নিজেই পড়ালেখা করে এই বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারেন।
সমাধানের পথ অনেক। পছন্দ আপনার।
[আমার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন টুইটার, লিংকডইন, ইউটিউব বা ফেসবুকে]