হেনরি ফোর্ডের কাছ থেকে এলন মাস্কের শিক্ষা
হেনরি ফোর্ডকে আমরা যতো না মোটরগাড়ির আবিস্কারক হিসেবে জানি, তার চেয়ে বেশি জানি তার একটি বিখ্যাত উক্তির জন্য। উক্তিটি হলো – “If I had asked people what they wanted, they would have said faster horses.” মোটর গাড়ি আবিস্কারের আগে লোকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়তো। ফোর্ডের বক্তব্য হলো – যদি তাদের চাহিদার কথা জানতে চাইতাম তাহলে তারা দ্রুতগামী ঘোড়ার কথা বলতো, গাড়ির কথা নয়। যদিও এই বিখ্যাত উক্তিটি হেনরি ফোর্ড বলেছেন না অন্য কেউ বলেছেন সেটা নিশ্চিত না হলেও কথাটার মর্মার্থ কিন্তু সকল উদ্যোক্তার জন্য চিন্তার খোরাক যুগিয়ে যাচ্ছে ১০০ বছর ধরে।
এখন আমাদের যে প্রোডাকশন সিস্টেম এটার উদগাতা কিন্তু এই ফোর্ড ব্যাটাই। উনিই প্রথম বলেন সবার সব কিছু জানার দরকার নাই। প্রোডাকশন লাইনের যেখানে যে থাকবে সেটা জানলেই হবে। এভাবে মানুষ আদি কালের সকল বিজ্ঞান-দর্শন-কলা শিক্ষা থেকে বিশেষায়িত শিক্ষায় সরে আসে।
যাকগে দুইটি কারণে ফোর্ডের কথা মনে পড়লো। প্রথমত অনেকদিন পরে আবার ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট পড়াতে রাজি হয়েছি। ইনোভেশন পড়াবো আর ফোর্ডের কথা মনে করবো না সেটা তো হয় না।
তবে, তার চেয়েও জরুরী হলো এলন মাস্ক ও টেসলা। ভাবছেন এর মানে কী। কোথায় ইলেকট্রিক কার, এলন মাস্ক আর কোথায় হেনরি ফোর্ড! তো মাস্কের সঙ্গে ফোর্ডের কী সম্পর্ক?
দেখা যাক। মাস্কের কথা মনে হলে আবার তার মার্কেটিং-এর কথাও আসে। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, টেসলার কোন মার্কেটিং বাজেট নেই। তাদের মার্কেটিং হলো ওয়ার্ড অব মাউথ ও গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং।
এখন কিন্তু কাস্টোমাররা অনেক বিকল্প খোঁজে। কিন্তু টয়োটার তুলনায় টেসলার গাড়ির মডেলের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগ আর রং? তিনভাগের একভাগ মাত্র। মানে হলো টযোটা কিনলে আপনি টেসলার তূলনায় চার গুণ বেশি মডেলের গাড়ি ও তিনগুণ বেশি রঙের বৈচিত্র থেকে বাছাই করতে পারবেন। কিন্এতু টেসলাতে সুযোগ কম। ফোর্ডের মডেল-টি যেখানে কিনা ছিল মাত্র একটিই রং। অথচ টয়োটার শেয়ারের চেয়ে টেসলার শেয়ারের দাম মাত্র চারগুণ বেশি।
ফোর্ডের থিউরি ছিল কাস্টোমারের কথা শুনতে হবে, তবে সব কাস্টোমারের মন ভরানো থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটর গাড়ির প্রোডাকশন লাইন চিন্তা করলেই আপনি টের পাবেন বেশি মডেল আর বহু রঙ মানেই সেটার ওপর চাপ পড়া। আর এটার রেজাল্ট হবে দক্ষতা, এবং এর ফলে উৎপাদন কমে যাওয়া। এ ব্যাপারে ফোর্ডের বক্তব্য একেবারেই সিম্পল – “Any customer can have a car painted any color that he wants, so long as it is black.” “কাস্টোমার তার ইচ্ছে মতো রঙের গাড়ি কিনতে পারবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পছন্দের রঙ হয় কাল”!
সেই ফোর্ডের আমল থেকে মোটরগাড়ি বানানোর প্রোডাকশন লাইনের ক্ষেত্রে যতো ভ্যারিয়েশন ততো কিন্তু সমস্যা। প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাকে ঠিক করতে হবে ব্র্যান্ড আর কাস্টোমারের মধ্যে সীমারেখা কোথায় টানবেন।
এসব ক্ষেত্রে “more is less”।
সব মানুষকে খুশি করতে গেলে বাপ-বেটা গাধা নিয়ে বাজারে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে।