বিদুষীর মার্বেল, আমার অংক এবং যত গোনাগুনি

Spread the love

marble1

আয়ুব আমার মেয়ের জন্য ১০০ মার্বেল কিনে এনেছে। সম্ভবত পুরান ঢাকার কোন দোকান থেকে। মার্বেল আমার ছোটবেলার প্রিয় খেলার একটি। আর একটি ছিল ঘুড়ি ওড়ানোর। রুবাইকে লাটাই ঘুড়ি কিনে দিয়েছিলাম। তবে, ও বেশি ওড়াতে পারেনি। বিদুষীর জন্য মার্বেল কিনেছি। কারণ ওর গণিতে হাতের খড়ি এখন গনণায় এসেছে। মার্বেল দিয়ে গুনতে শিখতে পারাটা অনেক সহজ বলে আমার ধারণা। এর মাধ্যমে গণণার ব্যাপারটাতে এক ধরণের স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি হয়।
মার্বেল নিয়ে গণিত শেখানোর আমার নিজের কিছু বুদ্ধি আছে। আমার বইগুলোতে এর কিছুটা প্রকাশ আছে। তবে, সব এক্সপেরিমেন্টের কথা সেখানে নাই। আমি ঠিক করেছি বিদুষীর সঙ্গে গণিতের যাত্রায় মার্বেলকে সঙ্গে রাখবো। আজকে ও মার্বেল গুনেছে। সামনে ওর মার্বেল দিয়ে কাজ কারবার শুরু হবে।

আমার গড়ের মাঠে গড়াগড়ি বইতে মার্বেল দিয়ে ভাগাভাগির একটা গল্প আছে। সেটা এখানে দিয়ে দিলাম।

2013-08-31 12.01.26ঢাকাশহরে মার্বেল কিনতে পারাটা সহজ নয়। আমাদের ছোটবেলায় পাড়ার দোকানেই মার্বেলআর ঘুড়ি পাওয়া যেত। মার্বেল খেলাটা আমার খুব প্রিয় খেলার একটি ছিল। তবে, আয়ুব পুরান ঢাকার কোনখান থেকে যেন আমাকে কিছু মার্বেল কিনে দিয়েছে। রুবাইতেমন আগ্রহ না পেলেও বিদুষী সেগুলো নানাভাবে ব্যবহার করে। খেলার জন্য তোবটে, অঙ্ক করার জন্যও।

সেদিন ওকে একটি সমস্যা দিয়ে বললাম, আমার কাছে ১৬টি বল আছে। সেগুলো আমিতোমাদের দুই ভাইবোনকে ভাগ করে দিতে চাই। তবে, তুমি যেহেতু ছোট, কাজেইতোমাকে দুইটা বেশি দেব। তা হলে তুমি কয়টা পাবে?
কিছুক্ষণ পর বিদুষী এসে বলল আমি নয়টা পাব, বাবা। দেখলাম ওর হাতে কিছুমার্বেল। জানতে চাইলে ও বলল, ‘বাবা, আমি ১৬টা মার্বেল নিয়ে ভাইয়ার কাছেগেলাম। তারপর আমরা মার্বেলগুলো ভাগ করেছি। প্রথমে আমি দুইটা নিয়ে নিলাম।তারপর আমি একটা, ভাইয়াকে একটা এভাবে দিতে থাকলাম। শেষমেশ আমার কাছে থাকলনয়টা আর ভাইয়ার কাছে হলো সাতটা।
বুঝলাম, মার্বেলের কদর বাড়ছে এই বাড়িতে। এরই মধ্যে বাপ-বেটির আলোচনায় যোগদিয়েছে রুবাই। রুবাইকে দেখে বললাম, ‘বিদুষী মার্বেল দিয়ে যে কাজটা করেছে, সেটা অঙ্কের নিয়মে কেমন করে করতে হবে?’
তেমন একটা কঠিন হবে না বাবা’, বলল রুবাই। প্রথমে ১৬ থেকে ২ বিয়োগ করতেহবে। পাব ১৪। এখন ১৪কে সমান দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। সমানভাবে ভাগ মানে ভাগকরা। সমান দুই ভাগ মানে ২ দিয়ে ভাগ। তা হলে ১৪ ভাগ ২-এ হবে ৭। সেটি আমারভাগ। আর বিদুষীর ভাগের সঙ্গে ২ যোগ করলে পেয়ে যাব ৯।
তারপর ও খাতায় করে দেখাল। দেখলাম ঠিকই আছে। ভাবলাম, রুবাইকেও একটি সমস্যা দেওয়া যাক। বললাম, ‘আচ্ছা, ধরো তোমাকে আমি ১৬টি মার্বেল দিয়ে বিদুষীর সঙ্গে ভাগ করতে বললাম। তবে এমনভাবে ভাগ করতে হবে যে বিদুষী তোমার চেয়ে তিন গুণ বেশি পাবে।
ভাইবোনকে বেশি বিচলিত মনে হলো না। বিদুষীর হাত থেকে সব মার্বেল রুবাই নিয়ে নিল। তারপর দেখলাম সে কয়েকবার করে বিদুষীকে মার্বেল দেয়, আর নিজের জন্য সরিয়ে রাখে। হাতের মার্বেল শেষ করে বলল, ‘বাবা, আমার কাছে চারটা আর বিদুষীরকাছে ১২টা। হয়েছে?’
বাহ! মার্বেল পদ্ধতি তো ভালোই। রুবাই ব্যাখ্যাটা করল, ‘ভাগ করার সময় প্রথমে আমি একটা নিলাম, বিদুষীকে তিনটা দিলাম। আবার আমি একটা নিলাম বিদুষীকে তিনটা দিলাম। এভাবে হাতের মার্বেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখলাম ওর কাছে ১২টাআর আমার কাছে চারটা।
আমি বুঝলাম, ভাগাভাগির ব্যাপার ভাইবোন ভালোই রপ্ত করেছে। ভাবলাম, তা হলেসংখ্যাটি বাড়িয়ে দিই, যাতে মার্বেল দিয়ে করতে না পারে! খাতা-কলমে করতে হয়।
বললাম, ‘বেশ। তা হলে আজকে শেষ অঙ্কটা করো। মনে করো দুইটি সংখ্যার যোগফল ১০০। এর মধ্যে একটি অন্যটির তিন গুণ। সংখ্যা দুটি বের করো।
আমি জানি, বিদুষী তো নয়ই, রুবাইও এখনো বীজগণিত শেখেনি। কাজেই দেখা যাক, কীভাবে তারা এটি করে।
একটু পরই রুবাই ঘোষণা করল, ‘বাবা, হয়ে গেছে। ছোট সংখ্যাটি ২৫ আর বড়টি ৭৫।
আমি একটু অবাক হয়ে ওর খাতাটা দেখলাম। ওর খাতাটা ছিল এ রকম


একটি সংখ্যা                    অপর সংখ্যা                      যোগফল
১০                                ১০×৩ = ৩০                         ৪০
২০                                ২০×৩ = ৬০                        ৮০
৩০                                ৩০×৩ = ৯০                      ১২০

দেখা যাচ্ছে, একটি সংখ্যা ২০ হলে যোগফল ১০০-এর কম কিন্তু ৩০ হলে ১০০-এর বেশি। কাজেই সংখ্যাটি ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে।

একটি সংখ্যা                      অপর সংখ্যা                      যোগফল
২১                                    ২১×৩ = ৬৩                     ৮৪
২২                                    ২২×৩ = ৬৬                     ৮৮
২৩                                   ২৩×৩ = ৬৯                     ৯২
২৪                                   ২৪×৩ = ৭২                     ৯৬
২৫                                   ২৫×৩ = ৭৫                   ১০০

 কাজেই একটি সংখ্যা ২৫ এবং অপরটি ৭৫!!!

ভাবলাম, কেন ১০ থেকে শুরু করেছে?
প্রথমে ১ দিয়ে শুরু করব ভেবেছিলাম। পরে মনে হলো ১ থেকে ১০০-তে যেতে অনেকক্ষণ লাগবে, তাই ১০ দিয়ে শুরু করেছি।
আমি ওদের বললাম, ‘আমরা যেখান থেকে শুরু করি না কেন, শেষ পর্যন্ত আমরা ২৫ আর৭৫-এ এসে পড়ব। যদি ২০ দিয়ে শুরু করে ২০ করে বাড়াতাম, তা হলে ২০-এর পর ৪০-এগিয়ে টের পেতাম ১০০-এর বেশি হয়ে গেছে। আবার ২১ থেকে শুরু করতাম। কাজে তুমিকত থেকে শুরু করলে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইচ্ছে হলে করে দেখতে পারো।আমার হাত থেকে খাতা নিয়ে রুবাই পরীক্ষা করতে লেগে গেল। তোমরাও এই হিসাবেনেমে পড়তে পারো। দেখবে যতভাবেই তুমি শুরু করো না কেন, শেষ পর্যন্ত ২৫-৭৫-এএসে থামবে।

————–

মার্বেল দিয়ে অঙ্ক করার এই টেকনিকটা অনেক পুরানো। মোটেই আমার আবিস্কার নয়। কিন্তু এটা এখন জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি। দেখা যাক, আমাদের স্যাররা এটা কতদূর নেন।

One Reply to “বিদুষীর মার্বেল, আমার অংক এবং যত গোনাগুনি”

  1. ম্যাথ যে কত ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় এখন বুঝতেছি… জীবন থেকে ২০ টি বছর চলে যাবার পর… ভার্সিটি তে উঠে… ছোট বেলায় আমি যে প্রতিষ্ঠানে পড়েছি সেখানে খেলার ছলে শিখায় নি কিন্তু খেলার মতই মনে হত। এক নিঃশ্বাসে নামাতা বলতে হত। মুখে মুখে অংক করতে হত।
    কিন্তু ক্যাডেট কোচিং করার সময় থেকেই বিপর্যয় এর শুরু…।
    আর নবম-দ্বশম-একাদশ-দ্বাদশ এ ম্যাথ হয়ে ঊঠল এক বিভীষিকার নাম আর তা থেকে বাঁচার পেইন কিলারের নাম ছিল “ম্যাথ না করা” … কারণ তো স্যার আপনি আমার চেয়ে ভাল বুঝবেন। আমার গৃহ শিক্ষক আমাকে ম্যাথ করে দিত আর আমি বসে বসে মুখস্থ করতাম।

    কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যখন দেখলাম কোচিং নেই , নেই কোন গৎ বাধা বই আর নেই সেই গৃহ শিক্ষক যিনি কিনা আমার জন্য খেটে অঙ্ক গুলো করবেন আর আমি পানি পান করার মত অঙ্ক গুলা পান করে নেব ,তখন বিষয়টা কঠিন মনে হলেও দেখলাম আমি রহস্যের জাল যত ভেদ করতে পারছি ততই মনোবল চাঙ্গা হচ্ছে… সাথে পেয়েছি কিছু বন্ধু যারা আমারই মত বঞ্চিত সঠিক দিকনির্দেশনা থেকে। আমার মত সাধারন মানের ছেলেরাও যে রহস্য উৎঘাটন খুব একটা খারাপ করি না তার প্রমান ছিল আজকের একটি এক্সাম। আমার কোর্স টিচার phd করেছেন ম্যাথ এ এবং উনি বেশ জাহির করে বেড়ান এই কথা। কিন্তু ছেলেদের বুঝানোর ব্যাপারে খুব একটা ইন্টারেস্ট ভদ্র লোকের নেই। উনি ফাইনাল এক্সাম এর প্রশ্ন ভুল করেছেন এবং সেটা তাকে ধরিয়ে দেয়ায় তিনি আমাকেই তা সমাধানের দায়িত্ব দিলেন এবং আমি ক্রমাগত ভুল করে চলেছি উনার স্যামনেই কিন্তু হতাশ ছিলাম না কারন আমি জানতাম এই খেলায় জয় একটু বিলম্ব হতে পারে কিন্তু দিন শেষে জয় আমারই এবং শেষে হয়েছেও তাই।

    আমাদের কে বাধ্য করা হয় পড়তে শুধু ডিগ্রীর জন্য। বাবা-মা ,সন্তান কে খেলতে দিতে চায় না আগের মত। শুধুই পড়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে কিন্তু পড়াও যে এক ধরনের খেলা সেইটা মগজে ঢুকিয়ে দেবার তাড়না অনুভব করে না। ম্যাথের মধ্যে যে হাজারো রহস্য জাল বুনে আছে আর সেই রহস্য একেক জন একেক নিয়মে সমাধান করবে এইটাই তো চরম বাস্তব। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত এক জন আমজনতাও ব্যস্ত থাকে হিসাব নিকাশে, অঙ্কুরোদ্গমের পর থেকে মৃত্যু এর আগ পর্যন্ত এক জন মানুষ কে হিসাব নিকাশ করে চলতে হয় ।তাহলে সেই ম্যাথ কেই কেন একজন ছাত্রের কাছে জটিল করে উপস্থাপন করা হয়????

    আপনার সন্তানেরা সৌভাগ্যবান যিনি প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে সন্তাঙ্কে মানুষ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছেন, হয়েছেন একজন সেনাপতি যিনি তার দলকে উপস্থাপন করতে চান একটি আর্দশ দল হিসাবে । তাহলে কিভাবে এরা কোন যুদ্ধের মঞ্চে গিয়ে ভীত হবে যেখানে তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষিত ?? এরাই কিভাবেই আপনার চোখ ফাঁকি দিয়ে , লেখাপড়ার গুষ্টি উদ্ধার করে মাদকের আড্ডায় নিজেকে জড়াবে????

    যেখানে ৯।৫৬ সেকেন্ডে কোন মানুষ ১০০ মিটার দৌড়ায় সেখানে ” মানুষের অসাধ্য আসলেই কিছু নেই ” , তবে কিভাবে আমরা একেকটি ফুলকে এইভাবে নষ্ট করে দিচ্ছি?? আজকাল তো কম্পিউটারে ফেসবুক চালিয়ে অথবা গেমস খেলে প্রয়োজনীয় সময়ের অপচয় করছে আমারই মত কোন যুবক । তবে কেন সে হতে পারবে না একজন বুদ্ধির খেলোয়াড় ? কেন সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে জীবনের চিত্রনাট্যে একজন নায়ক হয়ে উঠবে খলনায়ক হয়ে ?? আমার অনেক বন্ধুই যারা এক সময় ঢাকার নামি-দামি কলেজ থেকে পাস করেছে আজ হয়ে যাচ্ছে ড্রপ-আঊট আর ঝুকে পড়ছে নেশার অন্ধকার জগতে ?? একটাই প্রশ্ন রেখে যাব স্যার ” আপনার মত সব বাবা-মাই কেন সন্তাঙ্কে পড়ালেখা নিয়ে নেশা করতে শিখায় না???”

    স্যার আপনি তো বাংলাদেশের মেধাবী ছেলে- মেয়ে দের নিয়ে কাজ করছেন?? তবে কেন আপনারা সেই সব মেধাবীদের বাবা-মা কে পর্দার পেছন থেকে সামনে নিয়ে আসেন না ?? যারা এমন এক-এক্টি উজ্জ্বল মুখ গড়ার কারিগর। আপনি একজন কোচ আর আপনি আপনার সন্তাঙ্কে গড়ে তুলছেন একজন উপযুক্ত খেলোয়াড় হিসাবে । এভাবেই প্রত্যেক বাবা-মা যদি আপনার মত ভাল একজন কোচ হবার ও আশা করে তবে দেশটি সত্যিকারে সোনার বাংলা হয়ে গড়ে উঠবে। তাই স্যার পর্দার পেছনের এই মানুষ গুলাকে সচেতন করার গুরু দায়িত্ব টা আপনার দয়া করে নিন, তাহলে নতুন প্রজন্ম আরো বেশি উদ্যমী হয়ে গড়ে উঠবে।

    আপনার জন্য , আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা… গড়ে উঠুক তারা এককটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে আর বয়ে আনুক দেশে জন্য সন্মান

Leave a Reply