নিজের উদ্যোগ শুরু করুন
করোনা আমাদের জন্য প্রায় শতভাগই খারাপ খবর বয়ে এনেছে। কিন্তু ‘প্রায়’ এর ফা্ঁকে কিছু নতুন বিষয়ও আমরা দেখতে পেয়েছি। এর মধ্যে একটি হলো ‘নিজে একটা কিছু’ শুরু করার ঝোঁক। আমি আমার চারপাশে অনেকেকে দেখেছি যারা নতুন করে শুরু করেছেন। বেশিরভাগই দায়ে পরে। কারণ অনেকের চাকরি চলে গেছে। আর একটা হলো ইন্টারনেট যারা ব্যবহার করে তারাও নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের তো সেরকম ডেটা নেই তাই সংখ্যা বলা মুশকিল। কিন্তু আমেরিকাতে উদ্যোক্তা হতে হলে employer Id লাগে। সেজন্য আমরা দেখেছি সেখানে ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ এ মাত্র ২৪% বেশি উদ্যোক্তা হতে চেয়েছে!
আমাদের দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সংখ্যাই বেশি। এবং জিডিপিতে তাদের অবদান মোটেই ফেলনা নয়। ফেলনা নয় কর্মসংস্থানেও।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২২ লক্ষ লোক কর্মবাজারে আসে। তাদের মধ্যে ৭ লাখকে আমরা আগে ঠেলে-ঠুলে পাঠিয়ে দিতে পারতাম বৈদেশে। এখন সেটা বন্ধ। আবার সরকারি প্রকল্প, প্রাথমিক শিক্ষক এসব নিয়ে মোটামুটি লাখ খানেক আর এসএমইসহ প্রাইভেট সেক্টর মিলে মোটমাট ১০-১২ লাখের একটা কিছু ব্যবস্থা হয়।
এই ইকুয়েশন পাল্টে দেওয়ার কাজটা করতে পারেন উদ্যোক্তারা। ২০১ এর ১০ আগস্ট তারিখে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ থেকে আমরা একটা প্রণোদনা প্রাপ্তি সংক্রান্ত সেশন করেছি। সেখানে ৭৩ জন উদ্যোক্তা নিবন্ধন করেছেন যারা ২০৫২ জন কর্মী নিয়ে কাজ করেন। তার মানে গড়ে ২৫-৩০ জন নিয়ে কাজ করেন। এর মধ্যে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ যেমন ছিলেন তেমনি ৫০+ লোকের উদ্যোক্তাও ছিলেন। আমাদের দেশে খুচরা দোকানের উদ্যোক্তাও কমবেশি ৫+ লোককে চাকরি দেন।
২০১১ সাল থেকে প্রায় এক দশক ধরে আমি এরকম অসামান্য কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কাজ করেছি, করছি। তাদের পেইন পয়েন্ট নিয়ে ভাবতাম। দেখলাম মার্কেটিং একটা যন্ত্রণার নাম। কিন্তু ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর বাজেট তাদের নেই। তারা বেশিরভাগ ওয়ান ম্যান আর্মি। তাছাড়া ইন্টারনেটে বেশি সময় দেওয়ার মতো সময়ও তাদের নেই। এ জন্য আমি খুঁজলাম তাদের জন্য নতুন কিছু পাওয়া যায় কিনা। এমন কিছু যা মার্কেটিং-কে তাদের ডিএনএ-এর, কালচারের অংশ হতে সাহায্য করবে। সেটা করতে গিয়ে গ্রোথ হ্যাক নামে একটা নতুন বুদ্ধি দেখলাম। আশ্চর্য হয়ে জানলাম আমি পড়ো পড়ো পড়ো লেখার সময়ে যে কাজগুলো করেছি নিজের মতো করে সেগুলোর নাকি মিল আছে এই টেকনিকের সঙ্গে। কাজে আমি দ্রুত একটা ছোট বই লিখে ফেললাম বৈশ্বিক উদাহরণের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা যোগ করে। যথারীতি ১০০ আর্লি রিডার সেটা পড়ে কিছু সাজেশন দিলো। তাসলিমা মিজির মতো লোকজন বললেন – নন-আইটির জন্য একটা কিছু রাখতে। সেটাও রাখা হলো। এরপর ভাবলাম আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটা ‘ই-মেইলে গ্রোথ হ্যাকিং কোর্স’ শুরু করেছি গতবছর। এখন পর্যন্ত ৩০০+ এই কোর্সটা করেছেন। কাজে লাগছে কিনা তা অবশ্য আমি জানি না।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং লেখার পর আমার প্রকাশক বললেন – ইমোশনকে কেমনে কা্জে লাগাবে সেটা নিয়ে একটা কিছু লেখেন কারণ বাঙ্গালি ইমোশনাল। সেটা করবর জন্য পড়তে হরো প্রচুর। টের পেলাম মার্কেটিং আসলে একটা প্রতিদিনকার কাজ। পড়তে হবে, জানতে হবে, প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। এটা মাথায় নিয়ে লিখেছি ‘ইমোশনাল মার্কেটিং’। এটার একটা কোর্সও এখন বানানোর চেষ্টা করছি যাতে হাতে কলমে দেখানো যায় কিনা সেটার জন্য। দেখা যাক সেটা পারি কিনা। ইমোশনাল মার্কেটিং লেখার উদ্দেশ্য ছিল ছোট ছোট বুদ্ধি খাটিয়ে কিন্তু কাস্টোমারকে আজীবন ধরে রাখা সম্ভব। কারণ এখন একটা ভিডিও বানিয়ে সেটা ইউটিউবে যোগ করাটা সহজ। ইনফোগ্রাফিক্স যোগ করে নিজের একটা পোস্ট দএ্রযাও কঠিন নয়। এসবই সম্ভব।
এগুলো আবার সোহাগের সঙ্গে আলাপে বলেছিও।
তবে, শূণ্য থেকে শুরু করে সফল হওয়ার কাহিনী খুঁজতে গিয়ে লিখেছি ‘শরবতে বাজিমাত’। এটি কেমব্রিজের তিন স্নাতক যারা ইনোসেন্ট স্মুদির কারবারী তাদের গল্প। এই গল্প পড়ার সময়ে আমি টের পাই আরে এতো আমাদের নুরউদ্দিন, জাহিরা বা সুমনের গল্প – সবাই একই পেইন পয়েন্টের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি না, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অনেকে এই বই পড়ে নিজে অনুপ্রাণিত হয়েছে। নিজেই কোন না কোন কাজ শুরু করেছে। এটি নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত যে আমার এডাপ্ট করা কোন বই তাদের উদ্যোগ শুরুর উছিলা হতে পেরেছে। এই গুল্পটি যদিও ইউকের কিন্তু এর সঙ্গে আমাদের মিল অনেক। বিশেষ করে ব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, সবাই মিলে উদ্যোক্তাদের বলা যে – তোমাদের দিয়ে কিস্যু হবে না- এরকম। তো, মার্কেটিং নিয়ে আমার আর লিখতে হবে না বলেই আমার ধারণা কারণ মার্কেটিং-এর লোকেরা এখন বই লিখতে শুরু করেছেন যা তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ।
এ বছর আমি বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ লিখেছি। সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লক্ষ করেছি। সেটি হলো সিলিকন ভ্যালি হোক, ইউকে হোক ওদের একটা ভাল ইকো সিস্টেম আছে উদ্যোক্তাদের তৈরি করার জন্য। এর একেবারে প্রথমটা হলো বই, বই, বই। আমার হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন একটা বিজনেস বই প্রকাশ হয়। আমাদের তথৈবচ। আমাদের উদ্যোক্তারা নিজেরা বই লিখতে কেন চান না আমি সেটা জানি না। আমিও হয়তো লিখতাম না যদি না মজা পেতাম। কিন্তু মানুষের সঙ্গে পশুপাখির পার্থক্যই হলো মানুষ নিজে পরিস্থিতির ভিতর না গিয়েও অভিজ্ঞতা নিতে পারে কারণ তার বই আছে। বই পড়ে অন্যদের অভিজ্ঞতা জেনে ফেলা যায়। জানা যায়, কখন কী করতে হবে। এজন্য আমি দেখি মিডিয়াম ডাইজেস্টে প্রতিদিন যে ব্লগগুলোর তালিকা আমি পাই তাতে একটা তো থাকেই বই নিয়ে।
আমি বুঝি আমাদের উদ্যোক্তা আর হবু উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক বই দরকার – নীতি-রীতির বই, শুরু করার বই, টিম বানানোর বই, মার্কেটিং-এর বই, সেলসের বই, ডেভিড ভার্সেস গোলিয়াথের বই, অনুপ্রেরণার বই। দরকার প্রচুর বই অনুবাদ করে প্রকাশ করা, পিডিএফ করে বিনামূল্যে দেওয়া, সফল এবং ব্যর্থদের অভিজ্ঞতা শেয়ারের ব্যবস্থা করা।
সেই জন্য আমি আমার ছোট্ট দুইটি হাত দিয়ে কিছু কিছু কাজ করে যাচ্ছি। এখন আমি একটা নতুন বই-এর জন্য কাজ শুরু করেছি। এটি হলো – নিজের উদ্যোগ শুরু করুন।
না এটা কোন সাফল্যের গল্প নয় কিংবা ব্যর্থতারও নয়। এটাতে আমি লিখতে চাই বাংলাদেশে একটা উদ্যোগ শুরু করে সেটিকে চালিয়ে নিতে হলে কী কী করলে ভাল হয়। যেমন আমি করতে চাই ই-কমার্স, কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স করলাম সরবরাহকারী হিসেবে – সেটা কী ঠিক হবে?
এ জন্য এখানে একটা ধারাবাহিক আলোচনা থাকবে থাকবে সহায়ক সব লিংক থাকবে কিছু বক্স আইটেম যেখানে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন এক্সপার্টের বক্তব্য থাকবে।
এই হচ্ছে আমার তরফের ব্রড আইডিয়া।
এখন সবার ইনপুট দরকার এই বইতে আসলে কী কী থাকা উচিৎ আর আমি কোথায় গিয়ে থামবো।
আগাম ধন্যবাদ
One Reply to “নিজের উদ্যোগ শুরু করুন”