ডেভেলপারদের পছন্দ – নতুনদের দিশা

Spread the love

বিশ্বের ৬৪ হাজার ডেভেলপারের তথ্য নিয়ে গতকাল প্রকাশিত হয়েছে স্টেকওভারফ্লো সার্ভে ২০১৭ এর ফলাফল। ২০১১ সাল থেকে স্টেকওভারফ্লো এ কাজ করে আসছে। গতবছরের ফলাফলের একটা সামারি এখানে পাওয়া যাবে।

স্টেকওভারফ্লো হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিশ্বত্ব ডেভেলপার কমিউনিটি। প্রতিমাসে ডেভেলপাররা প্রায় চার কোটিবার এ সাইটে আসে, প্রশ্ন করে, উত্তর খোঁজে এবং নিজের মতামত জানিয়ে যায়। এবছরের সার্ভেতেও কয়েকটা নতুন জিনিস জানা গেছে।

এগুলোর কয়েকটা হলো –

  • হোক দেরি যায়নি সময় – বিল গেটস, জাকারবার্গের মতো আইকনিক লোকেরা খুব ছোটবেলায় প্রোগ্রামিং শুরু করেছিলেন। কাজে একটা ধারণা হলো ছোটবেলা থেকে শুরু করলে ভাল হয়। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ছোটবেলা থেকে প্রোগ্রামিং শুরু করলে অনেকখানি এগিয়ে থাকা যায়। তবে, দেখা যাচ্ছে, দেরিতে, এমনকী চাকরি জীবন শুরুর মাত্র কিছুদিন আগে শুরু করেও প্রোগ্রামিং-এ ভাল করা সম্ভব। দরকার হলো একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ‘দেখে নেবো’ স্পিরিট;
  • বিশ্বের সেরা ডেভেলপাররা সারাক্ষণই আমাদের দেশের ডেভেলপারদের মতো চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজে না। তাঁরা যেখানে কাজ করে সেখানেই থাকতে চায়। তবে, নতুন অপরচুনিটি সম্পর্কে জানতে সবারই ভাল লাগে।
  • সরকারি ও অ-লাভজনক সংস্থায় চাকরিজীবীদের ধারণা তাদের কম বেতন দেওয়া হয়!

এবার দেখা যাক জরিপ কী বলে-

১. ডেভেলপারের ধরণ – জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তিন চতুর্থাংশই ওয়েব ডেভেলপার। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে ওয়েব এপ্লিকেশন এখনো প্রাধান্য বজায় রেখেছে। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই বেশিই ফুল-স্টেক ডেভেলপার। আলাদাভাবে ফ্রন্ট-এন্ড আর ব্যাক এন্ড ডেভেলপারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ওয়েব ডেভেলপারের পরেই রয়েছে ডেস্কটপ এপ্লিকেশন ডেভেলপার এবং তারপরই মোবাইল ডেভেলপার। মোবাইল ডেভেলপারের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। মোবাইল ডেভেলপারদের মধ্যে আবার এনড্ব্রয়েড এপলের আইওএসকে ছাড়িয়ে গেছে যা থেকে বোজা যায় মোবাইল এপ ধীরে ধীরে ব্রাত্যজনের হাতছাড়া হয়ে যাবে। বাকীদের মধ্যে এনালিস্ট ও পরামর্শকদের সংখ্যা ৩৮% এবং দ্রুত উঠে আসা ডেটা সায়েন্টিস্টদের সংখ্যা ২২%। স্টেকওভারফ্লোতে যারা আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যাদের ২০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্যদিকে তরুনদের আগ্রহ অনেক কম। মনে হচ্ছে, পুরানোদের মধ্যে শেখার ও শেখানোর আগ্রহ বেশি। তরুণরা সম্ভবত যতো না প্রোগ্রামিং-এ ব্যস্ত তার চেয়ে বেশি অন্য কিছুতে ব্যস্ত। আর এখনো প্রোগ্রামিং-এ মেযেদের সংখ্যা খুবই কম। জরিপের ৮৮%ই ছেলে।

২. শিক্ষা – ডেভেলপারদের মধ্যে ৪২%ই  গ্র্যাজুয়েট। আর ২০% মাস্টার্স। আর বিসয় হিসাবে এগিয়ে রয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (৫০%)। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইলেকট্রিক্যাল/ইলেকট্রনিক্স এর পরই রয়েছে। যদিও মাত্র ৩০% ডেভেরপার মনে করছে যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে।

২ক. কেমন করে শিখলাম –  দেখা যাচ্ছে, ৯০% ডেভেলপার বলেছেন যে, তারা যা শিখছেন সবই নিজে নিজেই! তবে, যারা সিএস গ্র্যাজুয়েট তারা সবাই তাদের শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অন্যদিকে ৪৫%ই অনলাইন শিক্ষার কথা বলেছেন। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, ৯ শতাংশ বুট ক্যাম্পের কথা বলেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো মুক্ত সোর্সে কন্ট্রিবিউশন। ৩৭% ডেভেলপারের সাফল্য এসেছে মুক্ত দর্শনের সফটওয়্যারে কাজ করার মাধ্যমে। এখন তো অনেক ভাইভাতে জানতে চাওয়া হয় কোন ওপেন সোর্স প্রোডাক্টে কাজ করা হয়েছে কী না। যথারীতি অফিসে কাজ শেখার সংখ্যাটাও কম নয়। ২২% শতাংশ তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ব্যাপারটিকে সামনে এনেছেন।

জরিপের তথ্য থেকে নতুন যারা প্রোগ্রামার হতে চায় তারা তাদের করনীয় খুব সহজে ঠিক করে নিতে পারে –

  • শিখতে হবে নিজে নিজে। সেজন্য সবচেয়ে ভাল হয় একটা কোন বই ফলো করা। আমাদের দেশে বাংলাতে কিছু বই রয়েছে তবে এখনো বেশিরভাগ বই হচ্ছে ইংরেজিতে। কাজে বই পড়ার পাশাপাশি কোন বুট ক্যাম্প, হ্যাকাথনে কিভাবে যাওয়া যায, অংশগ্রহণ করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে পারে।
  • অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে হবে,
  • একটু আগানোর পরই কোন না কোন কনটেস্টে অংশ নিতে হবে। শুরু করতে হবে অনলাইন কনটেস্ট দিয়ে। অনলাইন কনটেস্ট শেষে বিভিন্ন ফোরামে এগুলোর আলোচনায় অংশ নিতে হবে
  • সবশেষে, চাকরি জীবনের শুরু থেকে শেখাকে বাদ দেওয়া যাবে না।

দুর্ভাগ্যবশত কেউ এখানে লার্নিং আর্নিং-এর কথা বলে নাই।

নতুনদের জন্য যখন সাজেশন চাওয়া হলো তখন ৬৪% অনলাইন কোর্সের ব্যাপারে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

৩.  কোন ভাষা, কোন প্ল্যাটফর্ম ?

৫ম বছরের মতো জাভাস্ক্রীপ্ট এবারও ডেভেলপারদের প্রথম পছন্দের মধ্যে রয়েছে। এবং যথারীতি সিকুয়েল রয়েছে দ্বিতিয় ও জাভা তৃতিয় স্থানে রয়েছে। তবে, এই প্রথমবারের মতো পাইথন পিএইচপিকে অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে নোড জেএস ও এংগুলার জেএস যথারীতি ডেভেলপারদের প্রথম দুইটি পছন্দে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে। এবারই প্রথম জানতে চাওয় হয়েছে ডেটাবেসের কথা। ৫৫% মাইসিকুয়েল আর ৩৮% সিকুয়ের সার্ভারের কথা বলেছে। আর প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে এখনো উইন্ডোজ এগিয়ে রয়েছে। তবে, দ্রুত আগাচ্ছে লিনাক্স।

এই জরিপে আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। যারা বিস্তারিত জানতে চায় তারা এখান থেকে সেটা দেখে নিতে পারবে। আমি হয়তো আবার কখনো এখানে আসতে পারি।

 

হ্যাপি কোডিং।

 

Leave a Reply