সামসুল হক খান স্কুলে একবেলা

Spread the love

shkhanআজ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ গিয়েছিলাম একটা রিমোট স্কুলে, ঢাকার শহরতলীতে সেই স্কুল। ঢাকা শহর থেকে খুব দূরে নয় তবে নগরের চাকচিক্য সেখানে অনুপস্থিতই বলা চলে।

আমরা মেয়ের হানিফ থেকে ডেমরাতে নেমে কোনাবাড়িতে সামসুল হক খান স্কুল ও কলেজে পৌছায় বেলা ১১টার দিকে। উদ্দেশ্য দুই শিফটের অস্টম শ্রেণির মিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো। আমরা মানে আি, গীতিকার কবীর বকুল এবং প্রথম আলোর আরো কয়েকজন।
আমাদেরকে অর্ভথনা জানালেন স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক সোবহান স্যার। স্যার গান করেন, গান গাওয়াতে ভালবাসেন, প্রতিদন প্রথম আলোর সব পাতা না পড়লে ওনার ঘুম হয় না এবং বেশির ভাগ ছাত্রের ঠিকুজি জানেন।
বেশিরভাগ ছাত্রের ঠিকুজি জানাটা অন্য স্কুলের মত নয় কিন্তু। কারণ এখানে ওনার শিফটে মাত্র পাচ হাজার ছেলে পড়ে। আর সকালের শিফটে আরো পাঁচ হাজার। কলেজে াখায় পড়ে দুই হাজার মেয়ে!
১২ হাজার ছেলে মেয়ের এই হাইস্কুলটি মোট ১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সম্প্রতি ওনারা সাড়ে ৫ কোটি টাকা দিয়ে কিছু জায়গা কিনেছেন দেখে জমির পরিমান মোট ১ একর হয়েছে। সামসুল হক খান সাহেব শুরুতে কিছু জমি দিয়ে এই স্কুলের সূচনা করেছিলেন।
এত কিছু বলার কারণ হল এই স্কুল ২০১৫ সালে ঢাকা বোর্ডের সেরা স্কুল হয়েছে, শহরের সব স্কুলকে ছাড়িয়ে। রাজউক উত্তরা মডেল হয়েছে দ্বিতীয়।
ওদের হিসাবে ওরা এইচএসসিতেও প্রথম যদিও এবার আর বোর্ড সেরকম কোন তালিকা প্রকাশ করেনি।
জেএসসিতে ওদের অবস্থান ৪র্থ আর প্রাথমিক সমাপনীতে ৬ষ্ঠ!

তারমানে স্কুলটা আসলেই ভাল। ২০১২ সালে এসএসসিতে ওরা দ্বিতীয় ছিল। সেবার শিক্ষামন্ত্রী বলে এসেছিলেন ওরা যেবার প্রথম হবে সেবার তিনি আবার যাবেন। আগামী ৩ তারিখে তিনি সে কথা রাখতে যাবেন।
আজ থেকে এক যুগ আগে ২০০৩ বা ২০০৪ সালে আমি সেই স্কুলে গিয়েছিলাম। এক বছরে দুইবার। প্রথমবার গিয়েছিলাম আমাদের ভ্রাম্যমান বিজ্ঞান ও ড্রযুক্তি জাদুঘরকে নিয়ে। আমাদের প্রদর্শনীর সঙ্গে ওদের স্কুলেরও কিছু বিজ্ঞান প্রজেক্ট সেখানে ছিল।
দ্বিতীয়বারের আয়োজন ছিল বিশাল। সেবার আমরা করেছিলাম ডেমরা গণিত উৎসব। মূল আয়োজন ছিল দেশের প্রথম গণিত ক্লাব ডেমরা গণিত ক্লাব।
সেবার অভিজ্ঞতাটাও আমার খুব ভাল ছিল। যদিও ছাত্রদের কেও আর নেই এখন, সবাই পাশ করে ফেলেছে।

তো, এই স্কুলটা কেন জিপিএ ৫-এ ভাল?
আমি একটু খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
১. এই স্কুলের কোন শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে পারে না। যদি পড়ে, তাহলে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়।

২. প্রতি শনিবারে ওদের স্কুলে সবার পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষার খাতা বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
৩. ফেল করলে টিসি

৪. সব পাবলিক পরীক্ষার জন্য বাড়তি কোচিং করা হয়। ছুটির পরে ৫ম/৮ম/১০ম শিক্ষার্থীদের বাড়তি ক্লাস করতে হয়, কয়েকটা সিজনে।
৫. কঠিন মনিটরিং ব্যবস্থা।

জিপিএ ৫-এর পর এবার তারা অন্যান্য সেক্টরেও ভাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছে।

সময় ছিল না তাই স্কুলের ল্যাবরেটরিতে যেতে পারিনি, লাইব্রেরিটাও দেখা হয়নি। স্কুলে কোন অডিটরিয়াম নেই। কয়েকটা ক্লাসের মাঝখানের শাটার খুলে দিলে একটা বড় হল রুম পাওয়া যায়, ৬০০ ছেলে মেয়ে বসতে পারে।
আমরা ২ সেশনে ১০০০ খানেক ছেলে-মেযের সঙ্গে কথা বলেছি।
অনেকেই বলবেন কেবল জিপিএ পাঁচের পেছনে দৌড়ায় এমন একটা স্কুলের কথা আমি লিখছি কেন। লিখছি কারণ ওনারা দেখিয়েছেন ওনারা একটা লক্ষ্যের পেছনে দৌড়াতে জানেন। ওনাদের যদি আরো কিছু লক্ষ্য দেখিয়ে দেওয়া যায়, আমি নিশ্চিত তারা সেগুলোও অর্জন করে ফেলনতে পারবেন।

আমি শিক্ষার্থীদের আমার কিছু গল্প শুনিয়ে দিয়ে এসেছি। কবীর বকুল শুনিয়েছেন গানও –

গল্প এক শোনাবো আজ

বলবো এক দেশের কথা

… সে যে আমার বাংলাদেশ
প্রিয় আমার বাংলাদেশ।

সামসুল হক খান স্কুল কলেজের মত হোক আমাদের আরো আরো স্কুল ও কলেজ।

 

 

Leave a Reply