পিপি লংস্টকিং – দস্যি মেয়ের দশচক্রে

Spread the love

লিখেছেন – টুকুনজিল নায়ীরা

বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক এস্ট্রিড লিন্ডগ্রেনের লেখা সেরা শিশুসাহিত্য “পিপি লংস্টকিং” সিরিজটি। অথচ অনেক বয়স্ক ব্যক্তি মনে করেন এই বইটি প্রকাশিত হওয়া একেবারেই ঠিক হয়নি। মেয়েরা কখনও এত দস্যি হতে পারেনা! বাচ্চারা কিন্তু এই সিরিজটা খুব ভালবাসে!! শুরুতেই রাইটার সম্পর্কে বলি। সত্যিকারের একশো জন অসাধারণ মেয়েকে নিয়ে লেখা বই “Good Night Stories For Rebel Girls” পড়তে গিয়ে জানতে পারি এই সুইডিশ ভদ্রমহিলার কথা। লেখিকা ছোটবেলায় ভীষণ দস্যি ছিলেন। সারাদিন ভাইবোনদের সাথে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি ছিলেন খুব সাহসী, শক্তিধর আর কর্মঠ। ঘরদোর পরিষ্কার করা, রান্নাবাড়া, বাইক মেরামত, ছাদের কিনারা দিয়ে হাঁটা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কিংবা মজার মজার কাল্পনিক গল্প বলাতে তিনি ছিলেন অসম্ভব পটু! পিপি লংস্টকিং নামের দুঃসাহসী মেয়েটার মাঝে খুব সহজেই তাঁর শৈশবকালের ছবিকে খুঁজে পাওয়া যায়। গাজর রঙা চুলে বাঁধা দুটো বেণী, নিজের পায়ের চাইতেও দ্বিগুণ বড় সাইজের জুতা আর দুই পায়ে দুই রঙের লম্বা মোজা পড়া মেয়েটাই পিপি। মাত্র নয় বছর বয়স থেকেই “ভিলা ভেলিকুলা” নামের বাড়িটাতে একা বাস করে সে। বাড়ির অন্য দুই বাসিন্দা হলো- মিঃ নিলসন নামের বানর আর একটা পোষা ঘোড়া। কেউ জিজ্ঞেস করলে পিপি বলে, “আমার বাবা নরখাদকদের রাজা আর মা স্বর্গের দূত হয়ে গেছে।” পিপি অসম্ভব হাসিখুঁশী আর তেজী একটি মেয়ে। তার বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার ক্ষমতা মুগ্ধ করার মতো। উদ্ভট কাজে তার জুড়ি মেলা ভার। কেন পিছু হাঁটছে জানতে চাইলে সে বলে, “কেন! পিছু হাঁটা যাবেনা?! এটা না একটা স্বাধীন দেশ! ইজিপ্টে তো সবাই উলটা হাঁটে। কই, কেউ তো অবাক হয়না!”

পিপির আরও একটা মজার স্বভাবের গল্প বলি। ঘুমানোর সময় পিপি মাথার নিচে বালিশ না দিয়ে পায়ের নিচে দেয়। আর কাঁথা দিয়ে পুরো মাথা মুড়ি দিয়ে বালিশের উপর পা তুলে ইচ্ছেমত নাচাতে থাকে! ঘুমানোর আগে গান না শুনলে আবার তার ঘুম আসেনা। তাই নিজেকে নিজে রোজ রোজ গান শোনায় সে! একা বাস করে বলে পুলিশ তাকে এতিমখানায় দিতে চেয়েছিল। দুই পুলিশের সাথে ধরাছোঁয়া খেলার ছলে যেভাবে নাকানিচুবানি খাইয়েছিল সেটা একটা মজার কাহিনী! আর দুই সিঁধেল চোর তার স্বর্ণ চুরি করতে এসে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে তবে বাড়ি ফিরে গেছে! এই ডাকুটে মেয়েটা নিজেকে দাবী করে দ্রব্য আবিষ্কারকর্তা (Things Finder) হিসেবে। কিভাবে আবিষ্কারকর্তা হতে হয় শেখাতে গিয়ে সে তার বন্ধু টমি আর আনিকাকে বলে, “মাঠিতে যা খুঁজে পাবে সেটাই তোমরা নিতে পারবে!” তারপর হঠাৎ একজন লোককে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখে সে চিৎকার করে ওঠে, “দেখো, লোকটা মাঠিতে শুয়ে আছে। আমরা তাকে খুঁজে পেয়েছি। তাই তাকে আমরা নিয়ে যেতে পারি!!” টমি আনিকার পাল্লায় পরে স্কুলে যাওয়ার পর মিস তাকে মাল্টিপ্লিকেশন শেখানোর চেষ্টা করলে সে মিসকে বলে ওঠে, “এটা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে! তুমি একবার বলেছিলে পাঁচ আর সাত যোগ করলে বারো হয়। এখন বলছো আট আর চার যোগ করলে বারো!” পিকনিক করতে গিয়ে মাশরুম কুড়িয়ে পেয়ে সে আপন মনে বলতে থাকে, “মাশরুম কি খাওয়া যায়?? এটা যেহেতু পান করার কোনো উপায় নেই তাহলে নিশ্চয় খাওয়া যায়!” একা একা বাস করার কারণে পিপি স্বাভাবিক আচরণ জানতো না। এটা নিয়ে কফি পার্টিতে মিস স্যাটারগ্রীন তাকে তিরষ্কার করাতে সে খুব কষ্ট পায়! ছলছল চোখে বলে, “আমি ঠিক এটাই ভয় করছিলাম। আমার আচরণে কেউ মর্মাহত হতে পারে!” পিপি কিন্তু ভীষণ সাহসী! একবার একটা স্কাইস্ক্র‍্যাপার বিল্ডিং-এ আগুন লাগে। আর সেখানে আটকা পড়ে ছোট্ট দুইটা ছেলে। অগ্নিনির্বাপক ক্যাপ্টেন কিছুতেই ছেলে দুটোকে উদ্ধার করার কোনো উপায় বের করতে পারেনা। অথচ পিপি এসে মিঃ নিলসনের সাহায্যে খুব সহজেই ওদের উদ্ধার করে! ক্যাপ্টেন তখন চিৎকার করে ওঠে, “থ্রি চিয়ার্স ফর পিপি লংস্টকিং!” “হিপ হিপ হিপ হুররে” বাকীরাও সাথে গলা মেলায়। পিপি নাচতে আর গাইতে খুব ভালবাসে। তাই তার জন্মদিনে টমি আর আনিকা একটা মিউজিক বক্স গিফট করে! পিপির খুঁশী তখন দেখে কে! সে তখনি দৌড়ে গিয়ে বৈঠকখানা থেকে দুইটা প্যাকেট নিয়ে এসে আনিকা আর টমিকে গিফট করে। তার যুক্তি হচ্ছে, “শুধু আমি একা কেন গিফট পাবো?? আমার বার্থডেতে আমি যাকে খুঁশী তাকে ‘বার্থডে-গিফট’ দিতে পারি।” এই দুঃসাহসী ছোট্ট মেয়েটা ঠিক করেছে বড় হলে সে পাইরেট হবে! কি দারুণ একটা ইচ্ছে!! ধন্যবাদ এস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন, পিপি নামের অতি চমৎকার ছোট্ট মেয়েটির গল্প বলার জন্য!

 

Leave a Reply