পেনসিলের প্রতিশ্রুতি ৪ : সব পেনসিলের প্রতিশ্রুতি আছে

Spread the love

পেনসিলের প্রতিশ্রুতি ১

পেনসিলের প্রতিশ্রুতি ২ : লেখা হয়নি

পেনসিলের প্রতিশ্রুতি ৩ : লেখা হয়নি

 

pencil1জীবন সংশয় থেকে ফিরে আসার পরও আমাদের সেমিস্টার এট সী কিন্তু অব্যাহত থাকলো। (আগের পর্বে সেমিস্টার এট সী’র কথা লেখার কথা)। এমভি এক্সপ্লোরার মেরামত করে আমরা আবার সমুদ্র যাত্রায় বের হয়ে পড়লাম। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়া, কখনো হোটেলে কখনো গেস্ট হাউসে থাকা। সব শিক্ষার্থীই কোনো না কোনো স্যুভেনির যোগাড় করছে। সব দেশ থেকেই। কেও হয়তো যোগাড় করছে কাঁচের ওপর স্থানীয় ভাষায় লেখা শহরের নাম। কেও খুঁজে নিচ্ছে টুপি, হ্যাট। কারো ভাড়ারে যোগাড় হচ্ছে বিয়ারের খালি বোতল। কেউ কেউ ল্যান্ডমার্ক স্থাপনার সামনে দাড়িয়ে ক্লিক!

আমরা সবাই কলেজ ছাত্র। সব কিছুই আমরা লিখে রাখছি আমাদের জার্নালে। যাতে পরে এই সব দিনকে স্মরণ করতে পারি।

আমি কোনো জাংক স্যুভেনির নেওয়ার পক্ষে না। আমি চেয়েছি এমন কিছু যোগাড় করতে যা আমি পরে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতে পারবো। জাহাজে ওঠার আগেই আমি ঠিক করেছি আমি কী করবো।
আমি প্রত্যেক দেশে একটি শিশুর কাছে জানতে চাইবো –

“তুমি যদি এই পৃথিবীতে যা ইচ্ছে পেতে পারো, তাহলে তুমি সবচেয়ে বেশি কী চাইবে?”

এর মাধ্যমে প্রত্যেক দেশের অন্তত একজনের সঙ্গে আমি নিজেকে যুক্ত করতে পারবো।আমি রেসপন্সগুলো সব লিখে নিয়ে আসবো। এবং যখন আমি ফিরে আসবো তখন আমি তাদের চাহিদাগুলো দিয়ে একটা ম্যাপ তৈরি করতে পারবো। আমি আশা করছি আমি শুনবো – ফ্ল্যাট স্ক্রিন টেলিভিশন, আইপড অথবা একটা দ্রুতগামী গাড়ি। আমি ভেবেছি ওরা আমার মতই চাইবে – লেটেস্ট খেলনা, উজ্জ্বল গাড়ি কিংবা বড় নতুন বাড়ি!

pencil3হাওয়াই দ্বীপে একটি মেয়ে আমাকে এসে বললো-তুমি আমার বন্ধু হবে।
“কেন নয়। নিশ্চয়ই।“ আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম। “তবে, প্রথমে আমি তোমাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা জিঙ্গাষা করতে চাই।

আমি বললাম-“তুমি যদি এই পৃথিবীতে যা ইচ্ছে পেতে পারো, তাহলে তুমি সবচেয়ে বেশি কী চাইবে?”

সে তার আঙ্গুল চিবুকে ছোয়ালো, মার দিকে তাকালো।

“নাচতে চাই।”

আমি হাসলাম। “এটা না। আমি বলছি তুমি এই পৃথিবীর মধ্যে যা খুশি তাই চাইতে পারো। সেটা কী?”

সে হাসলো। এবার আমার প্রশ্নের তাৎপর্য সে বুঝতে পেরেছে। তারপর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে- আমি নাচতে চাই!

“ওয়াও। খুবই চমৎকার”।

তার সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি আমার জীবনের সুখীতম মুহুর্তগুলো স্মরণ করলাম। দেখলাম তার মধ্যে রয়েছে প্রথম মাইকেল জ্যাকসনের কোনো কনসার্টে নাচা, বাবার সারপ্রাইজ পার্টিতে নাচা!

আমি বুঝলাম এই আনন্দ সবাই পেতে পারে, সমান ভাবেই। স্ট্যটাস, টাকা কোন কিছুর তোয়াক্তা না করে। আমার একটা বোধের দরজা খুলে গেল। আমি বুঝলাম, আমি বরং কাউকে প্রশ্নের উত্তরের কোন হিন্টস দেবো না। বরং প্রশ্নটাই করবো। শোনার দক্ষতা কিন্তু বলার দক্ষতার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

pencil5বেইজিং-এ নিষিদ্ধ মন্দিরের সামনে এক মেয়েকে পাকড়াও করলাম।

কী চাও?

-“একটি বই”।

-সত্যি? তুমি যা খুশি তা চাইতে পারো।

“একটি বই”।

তার মা ব্যাখ্যা করলো। মেয়েটি স্কুলে যায় কিন্তু তার নিজের কোন বই নাই। এই মেয়েটি এমন একটা জিনিষ চেয়েছে যা কী না আমি প্রতিদিন কোন কিছু না করেই পাই।
হংকং-এর বালকটি বলেছে – ম্যাজিক।

কাউলুন নদীর তীরে, ছয় বছর বয়সী মেয়েটার কথা আমার মনে পড়ছে। খুব আস্তে আস্তে মাটির দিকে চেয়ে সে বলেছে – আমি চাই আমার মা যেন সুস্থ্য ও স্বাস্থবতী হয়। সে অসুস্থ, সারাদিন শুয়ে থাকে। আমি শুধু চাই, আমি স্কুলে যাওয়ার পথে মা যেন আমার আঙ্গুল ধরে থাকে”।

যাত্রা শুরু করার ৩০ দিন পর আমরা চেন্নাই, ভারত এসে পৌঁছালাম। আমার মন চায় আমি বারানাসিতে যাবো।

পেনসিলের প্রতিশ্রুতি-৫

 

 

 

One Reply to “পেনসিলের প্রতিশ্রুতি ৪ : সব পেনসিলের প্রতিশ্রুতি আছে”

Leave a Reply