গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-১১: রিটেনশন ইজ দ্যা গ্রোথ

Spread the love

গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-১০:  গ্রোথ হ্যাকিং ইয়োর ভাইরালিটি

গ্রোথ হ্যাকারদের সঙ্গে সনাতন মার্কেটিয়ারদের পার্থক্যটা মনে রাখাটা জরুরী। সনাতনীদের কাজ কী? লিড জেনারেট করা। মার্কেটিং টেকনিক এপ্লাই করে ‘হতে পারে’ কাস্টোমারদের দোকানে নিয়ে আসা। তারপর ‘টিমের অন্যরা’ তাদের সত্যিকারের কাস্টোমার বানাতে পারে।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ঝামেলা হলো স্টার্টআপ বা ছোট প্রতিষ্ঠানে “অন্য কেউ” বলে তো আসলে কেউ নাই। এখানে বেশিরভাগ লোককেই জুতা সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ করতে হয়। কাজে খালি খালি লিড জেনারেট করে তো লাভ নেই যদি না সেগুলো কাজে লাগে।

প্রথম আলো পত্রিকায় চাকরি-বাকরি সাপ্লিমেন্টটা প্রকাশের শুরুর দিকে প্রতি সংখ্যায় আমরা একজন উদ্যোক্তাকে নিয়ে একটি ছোট্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করতাম। কিন্তু দেখা গেল, বেশিরভাগ উদ্যোক্তা পত্রিকায় প্রকাশের দিনে যে লিড, আগ্রহ তৈরি হয় সেটা সামাল দিতে পারে না। ফলে, ঐ লিডগুলো কার্যত কোন কাজে লাগে না। এই লেসনটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে বলে আমি আমার কাছে যারা পরামর্শের জন্য আসে তাদেরকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে বলি। বিশেষ করে কনভার্সন সক্ষমতা।

ডিজিটাল মার্কেটিং-এর বেলায় তুমি তোমার সকল মার্কেটিং উদ্যোগের হিসাব নিকাশ করতে পারো। মানে, কোন চ্যানেলের কী অবস্থা সেটা বুঝতে পারো। আর তাছাড়া এখন সহজে বের করা যায় “কনভার্সন রেট”। কাজে এগুলো শেখো এবং প্রয়োগ করো।

টুইটারের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে পারো। শুরুর দিকে টুইটার নিয়ে এতো মাতামাতি হয়েছে যে প্রায় সবারই মনে হয়েছে “একটা টুইটার একাউন্ট না থাকা মানে জীবন ব্যর্থ হয়ে যাওয়া”। ফলে দলে দলে লোকে টুইটারে একাউন্ট খুলেছে। টুইটারের মার্কেটিং টিমআো খুশি কারণ সাইন আপ এক্সপোনেন্সিয়াল। কিন্ত, কোর লোকেরা খেয়াল করলো যে, যত লোক এই আহবানে সাড়া দিয়ে একাউন্ট খুলছে তাদের বেশরিভাগই ভুলেও কোন টুইট করছে না! এ যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধের ঐ মহিলার মতো। মনে আছে তো? ঐ যে দোকানদার তাকে বলেছিল একটি ভাল বই কিনতে উপহার হিসাবে। জবাবে ঐ মহিলা বলেছিলেন – সে তো ওর একটা আছেই!!!

তো, যদি টুইটারের দলে দলে একাউন্ট খোলা হয় কিন্তু তারা তা ব্যবহার না করে তাহলে টুইটারের লাভ কী?

কাজে টুইটার নিয়ে আসলো জস এলমান নামে একজন গ্রোথ হ্যাকারকে। তিনি তার সঙ্গে আর ২৫ জন (ক্রেজি?)  গ্রোথ হ্যাকারকে নিয়ে মাঠে নামলেন। প্রথমে গবেষণা করে বের করলেন একটি খুব গুরত্বপূর্ণ তথ্য। তারা দেখলো যে সব টুইটার গ্রাহক শুরুতেই ৫ থেকে ১০ জনকে অনুসরণ করে তারাই সক্রিয় হয়। কাজে এলমান শুরুতে থেকে কাকে ফলো করা যায় সেটা সাজেশন দেওয়া শুরু করলেন্শুধু তাই নয়, প্রথম কয়েকজনের ভিত্তিতে সেই এলগরিদমকে এমনভাবে পরিশীলিত করলেন যাতে কিনা সাজেশনগুলো কার্যকরী হয়! টুইটার এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে ফলো না করলে তেমন একটা কিছু বোজা যায় না। যখন নতুন গ্রাহকরা কয়েকজনকে ফলো করে ফেলে, তখনই টুইটারের শক্তিটা বুঝতে পারে। তখন তারা নতুন নতুন একাউন্ট ফলো করে এবং নিজেরাও তৎপর হতে শুরু করে।

এই ছোট্ট উদ্ভাবনটি কেবল টুইটারকে নয়, প্রায় সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। ফেসবুক খুললেই যে দেখা যায় – তোমার অমুক বন্ধু নতুন ফ্রেন্ড পেয়ে গেছে তুমি কেন চুপ করে আছো বা তুমি তো নিশ্চয়ই এদের চেনো – ইত্যাদি ডানে বামে দেখতে থাকেন, এগুলোর সবই কিন্তু একই উদ্দেশ্যে। ব্যবহারকারীকে সক্রিয় করা। ফেসবুকের একটিভ লোকেরা সপ্তাহে প্রায় ১৫ ঘন্টা ফেসবুকেই কাটায়! এইগুলোই কিন্তু ব্যবহারকারী সক্রিয় হতে উদ্ভুদ্ধ করে, অপেক্ষা করতে নয়। সোজা হিসাব যখন একজন নতুন ফেবু ব্যবহারকারী দেখে তার বন্ধু ছবি শেয়ার করেছে, কক্সবাজারের গল্প ফেঁদেছে তখন সেও তার নিজের ছবি দিতে উৎসাহী হয়। এভাবে নতুনরা সক্রিয় হয়ে উঠে।

নতুন নতুন কাস্টোমারের চেয়ে বর্তমান কাস্টোমারকে যদি পুন: পুন: খরিদ্দারে পরিণত করা যায় তাহলেই কিন্তু অনেকখানি এগিয়ে থাকা যায়। কম্বোডিয়ার টুকটুক ড্রাইভার তার একটি উদাহরণ।

ঠিক ধরেছেন? এটা তো মার্কেটিং নয়? বরং এ হলো প্রোডাক্টের ফিচার! হ্যা। ঠিকউ তো। কিন্তু এর মাধ্যমেই তো টুইটার আর প্রিন্টেরেস্ট ব্যপকভাবে আগালো। তাহলে এটাকে মার্কেটিং বলতে দোষ কোথায়? প্রত্যেক কোম্পানিই তার নিজের একটা মেট্রিক্স তৈরি করে। ফেসবুকের বেলায় এটি হলো প্রথম ১০ দিনে ৭ জন নতুন বন্ধু তৈরি করা। ড্রপবক্সের বেলায় অন্তত একটা ফাইল ড্রপবক্সে ফেলা!

এর মানে হলো তোমাকে তোমার মেট্রিক্স খুঁজে নিতে হবে। এনালিটিক্সগুলো তোমাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। এ জন্য যা যা করার তোমাকে করতে হবে।

যেমন এয়ারবিএনবি। ২০১১ সালে তারা খুবই কস্টলি একটা উদ্যোগ নেয় যা বেশিরভাগ গ্রোথ হ্যাকার বলেছিল ফেইল করবে। তারা একটা ঘোষণা দেয় যারা তাদের সাইটে বাসা-বাড়ি লিস্ট করবে,  পেশাদার ফটোগ্রাফার পাঠিয়ে তাদের বাড়ির সুন্দর ছবি তুলে দেবে!!! অনেক টাকা খরচের ব্যাপার। কিন্তু তাদের বিশ্বাস ছিল, “এর মাধ্যমে ফটোর একটা ট্রেন্ড এবং একটা স্টান্ডার্ড সেট করা হবে। আর তাছাড়া ছবির ব্যাপারটাই তো মুখ্য ও কঠিন। কাজে সেটাতেও সাহায্য করা হবে”।

এটি একটি বিপ্লবী চিন্তা হলেও এয়ারবিএনবির বিকাশে এটি একটি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।

এরকম কিছু্ই তোমাকে করতে হবে। এমন কিছু যা হয়তো তোমার প্রোডাক্টের ফিচারের সঙ্গে যুক্ত কিন্ত আখেরে সেটা তোমার মার্কেটিং-এর কাজই করবে।

পরের পর্ব – অলওয়েজ বি টুইকিং

 

Leave a Reply