ডেলিভারি হ্যাপিনেজ ১০ : কলেজে নিজের ব্যবসা

Spread the love

আগের পর্ব

Zapposকলেজে আমি নানান কিছু জানতে, শিখতে এবং করতে শিখলাম।
কলেজে একটা ফিল্ম সোসাইটি ছিল। তারা স্কুল অডিটরিয়ামে সিনেমা দেখাতো দর্শনীর বিনিময়ে। আয়-বরকত ভালই। আমার এক বন্ধুর ছিল গো-খামার। একদিন সেখানে গিয়ে কাটালাম। দেখলাম কীভাবে গাভীকে দোহন করে দুধ পাওয়া যায়! একদিন আইস স্কেটিং করতে গিয়ে পড়ে গেলাম। আমার চিবুক গেল কেটে, রাতের বেলায় করতে হল সেলাই-ফোড়াই!

স্থানীয় একটি রেডিওর দেওয়া টিকেট পেয়ে প্রথম কনসার্ট দেখেছি। ইউটু-এর জু টিভি ট্যুরের সময়। হার্বার্ড বার্টেন্ডিং কোর্স করে একটা সার্টিফিকেট পেয়ে বিয়ে বাড়িতে খাবার পরিবেশন করেছি! কম্পি্টুার প্রোগ্রামিঙ-এর চাকরি তো ছিল। এগুলি করেছি হার্বার্ড স্টুডেন্ট এজেন্সিজ, স্পিনাকার সফটওয়্যারে। বাড়তি ছিল মাইক্রোসফটে ইন্টার্নশীপ!
বিবিএন নামে একটা কোম্পানিতেও আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। বিবিএন হল সে কোম্পানি যারা ইন্টারনেট মেরুদন্ডের প্রযুক্তি তৈরি করেছে! বিবিএন বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিবিএনে কাজ করার সময় আমার সিক্রেট স্ট্যাটাস নিয়ে কাজ করতে হত। কখনো কখনো স্ট্যটাসটাই ক্লাসিফায়েড ছিল!

এক সামারে আমি ঠিক করলাম কেমব্রিজ থেকে বোস্টনে যাবো সাঁতার কেটে। করলামও তাই। এই  সময় আমি অতিক্রম করলাম গার্ডিয়ান এনজেলস নামে একটি সংস্থার সদর দপ্তর। ওরা অপরাধ দমনে আর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, পুলিশের সঙ্গে । আমি কয়েক মাসের জন্য সেটার সদস্য হয়ে রাস্তায় পেট্রল দিয়ে বেড়ালাম! আমার গ্যাং নাম হল – সিক্রেট। আমি ভেবেছি, সরকারের সঙ্গে সিক্রেট কাজ-কারবারের কথা বলেছি বলে আমার এই নাম হয়েছে। পরে শুনেছি অন্যরা নাকি আমার নাম দিতে চেয়েছিল – এনসিয়েন্ট চাইনীজ সিক্রেট!

কলেজের জুনিয়র আর সিনিয়র ইয়ারে এসে আমার মনে পড়ল- আরে আমি তো নিজের কোন ব্যবসা চালাচ্ছি না!

কাজে আমি কুইনসি হাউস গ্রিল চালানোর দায়িত্ব নিলাম। কুইনসি হাউস ডরমিটরিতে প্রায় শ’তিনেক শিক্ষার্থী। বেসমেন্টের গ্রিলে রাতের বেলায় জড়ো হয়ে সবাই হয় ফুটবল, না হয় পিনবল কিংবা আড্ডাবাজি করে। আর খাওয়া দাওয়া করে।( বুয়েটের আহসানউল্লা হলের কেন্টিন আর কি! ) আমার সঙ্গে আমার রুমমেট সঞ্জয়ও যোগ দিল। আমাদের কাজ ছিল প্রতিদিনের মেনু আর দাম ঠিক করা, কোনোখান থেকে সেগুলো যোগাড় করে এনে গ্রিলে সরবরাহ করা, এই কাজের জন্য কয়েকজনকে কাজ দেওয়া আর মাঝে মধ্যে নিজেরা কিছু খাবার তৈরি করা।

সে সময় ক্যাম্পাসের আশে পাশে ফার্স্টফুডের দোকান দেওয়া যেত না। কাজে আমি সাবওয়ে ধরে পরের স্টেশনের ম্যাকডোনাল্ড থেকে হ্যামবার্গারের পেটিট আর বন নিয়ে আসতাম। পরে সেগুলো আমরা বিক্রি করতাম। ক্যাম্পাসের আর কোথাও কিন্তু ম্যাকডোনাল্ড বার্গার পাওয়া যেত না। কাজে আমি ১ টাকা খরচের বার্গারের দাম রাখতাম ৩ টাকা!

তবে কিছুদিন পর আমি হয়রান হয়ে গেলাম। আচ্ছা আরো বেশি মুনাফার কিছু নাই!

আমি শুনেছি ২ টাকা খরচের পিৎজা ১০ টাকায় বেঁচা যায়। এমনকি আরো বেশি দামেও যায়। তবে, একটি পিৎজা ওভেনের দাম মাত্র ২০০০ টাকা। আমি একটা বড় শ্বাস নিয়ে একটা ২০০০ টাকার চেক কাটলাম।
আমি আমাদের গ্রিলকে আরো আকর্ষনীয় হ্যাং-আউট প্লেস বানাতে চাইলাম। সেজন্য রাতের পর রাত আমি মিউজিক ভিডিও টেলিভিশন থেকে ভিডিও রেকর্ডারে রেকর্ড করতে থাকি এবং বিজ্ঞাপন বাদ দেই। সবমিলিয়ে এটা হয়ে গেল গ্রেট হিট। সারাক্ষণই ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক চলতো। কোন বিজ্ঞাপন নাই। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের বিক্রি বেড়ে গেল তিনগুন। ওভেনও দামও ওঠে গেল সহসা।

এই পিজার ব্যবসা করতে গিয়ে আমার পরিচয় হল আলফ্রেডের সঙ্গে। আলফ্রেড পরে জাপ্পোসে যোগ দেয় সিএফও এবং সিওও হিসাবে। আলফ্রেডের সঙ্গে সখ্যতার গল্প পরের পর্বে